Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কিন ও ইউরোপের শেয়ারবাজার চাঙ্গা

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক উচ্চাকাক্সক্ষী কর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। ওয়াশিংটনের উন্নয়ন এজেন্ডায় এ পরিকল্পনাটিকে দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারমূলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুসারে ব্যক্তি ও করপোরেট পর্যায়ে বিপুল মাত্রায় করহার কর্তনের প্রস্তাব করা হয়। তিনি এটিকে আখ্যা দেন আমেরিকান ট্যাক্স ব্যবস্থার জন্য এক প্রজন্মে একবার সুযোগ হিসেবে। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বর্তমান কর ব্যবস্থাকে ধ্বংসাবশেষ বলে উল্লেখ করেন এবং তার পরিকল্পনার কথা খোলসা করেন। এটি বাস্তবায়িত হলে কর ব্যবস্থা সহজ হবে। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন কর পরিকল্পনা ঘোষণার পর পরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ইকুইটি বৃদ্ধি পায়। এর আগে ট্রাম্প ওবামা আমলে গৃহীত স্বাস্থ্য বিল খারিজ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে নতুন এই বিল পাসের ব্যাপারে তিনি মরিয়া এবং এটি পাস হবে বলে আশাবাদী ওয়াল স্ট্রিট। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য ট্রাম্পের পরিকল্পনা আইনে পরিণত হবে কিনা, এ নিয়ে সংশয়মুক্ত নন। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ শেয়ার সূচকগুলো গত বুধবারে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। নাসডাক ১ দশমিক ২ শতাংশ উল্লম্ফন দিয়ে এর সর্বকালের সর্বোচ্চ পয়েন্টের খুব কাছাকাছি চলে আসে। ডাও জোনসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল গড় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ২২ হাজার ৩৪০ দশমিক ৭১ পৌঁছায়। ব্রড-বেজস এসঅ্যান্ডপি ৫০০ শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে পৌঁছে ২ হাজার ৫০৭ দশমিক শূন্য ৪-এ। ট্রাম্প দাবি করেন, কর ব্যবস্থাকে তিনি প্রতিটি নাগরিকের জন্য সরল, সহজ ও ন্যায়সঙ্গত করবেন। কংগ্রেসের কিছু রিপাবলিকান সদস্য ও কর্মকর্তার সমন্বয়ে করা এ পরিকল্পনায় ব্যক্তিগত পর্যায়ের কর ব্র্যাকেটের সংখ্যা সাত থেকে কমিয়ে তিনে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, এর ফলে বেশির ভাগ পরিবার এখন তাদের কর বিবরণী কেবলমাত্র একটি কাগজের পৃষ্ঠাতেই সম্পন্ন করতে পারবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে করের হার হবে ১২, ২৫ ও ৩৫ শতাংশ এবং পরিকল্পনায় অতি ধনীদের সারচার্জের সুপারিশ রয়েছে। তবে কোন হারে সেটি প্রয়োগ করা হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে একটি সাধারণ পরিবারের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ কর মওকুফ হবে তা পরিষ্কার নয়। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, এ কর পরিকল্পনা ধনী কিংবা প্রভাবশালীদের কোনো উপকারে আসবে না এবং তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, ওরা আমাকে চাইলে যাচ্ছেতাই গালি দিতে পারে, কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। তবে ছয় মাস ধরে পর্যালোচনার পরও এ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়নি এবং ট্রাম্প মুখে যাই বলুন না কেন, আমেরিকার সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিকরা এই পরিকল্পনা থেকে প্রচুর ফায়দা নিতে পারবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্প তার ভাষণের একটি বড় অংশজুড়ে এস্টেট করের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। একে তিনি মৃত্যুকর হিসেবে আখ্যা দেন এবং দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, তার আমলে এই কর বিলুপ্ত করা হবে। তবে সেটি হলে মূলত ট্রাম্পের মতো উচ্চ উপার্জনকারীরাই লাভবান হবেন। আলোচ্য এ করটি যেসব এস্টেটের মূল্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৫৪ দশমিক ৯ লাখ ডলার এবং বিবাহিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে ১০৯ দশমিক ৮ লাখ ডলারের বেশি, তাদের জন্য প্রযোজ্য। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গ্রুপ ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের মতে, এস্টেটের মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ মানুষ যারা মারা গেছেন, তারা এই করের আওতায় পড়েন এবং বর্তমানে এই হার ৪০ শতাংশের নিচে। ট্রাম্প ও রিপাবলিকান সদস্যরা দাবি করেন, পারিবারিক খামার, র্যাঞ্চ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য এস্টেট ট্যাক্স ক্ষতিকারক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব এস্টেট এ করের আওতায় পড়ে সেগুলোর মাত্র ৩ শতাংশ হচ্ছে খামার ও ব্যবসা। বিপরীতে, বøুমবার্গের একটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর ফলে ট্রাম্প ও তার ক্যাবিনেট, যেটিকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে সম্পদশালী বলা হচ্ছে, তাদের জন্য বিপুল সঞ্চয়ের সুযোগ দেবে। পর্যালোচনাটিতে দেখা যায়, ট্রাম্পের প্রাক্কলিত সম্পদের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার এবং সে হিসাবে এ আইন হলে ট্রাম্পের এস্টেটের ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বেঁচে যাবে। ট্রাম্প দাবি করেন, তার সম্পদের পরিমাণ অন্তত ১ হাজার কোটি ডলার, তবে তিনি তার কর রিটার্নের বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি। ফলে তার নতুন পরিকল্পনায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে কতটা লাভবান হবেন, সেটি পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে না। এস্টেট কর খারিজ হলে ট্রাম্পের বাণিজ্য সচিব উইলবার রসের প্রায় ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বেঁচে যাবে এবং ট্রাম্পের শিক্ষা সচিব বেটসি ডেভসের শ্বশুর রিচার্ড ডেভসের ৯০ কোটি ডলার বাঁচবে। নতুন পরিকল্পনার আওতায় কোম্পানিগুলো আগের থেকে অনেক কম হারে কর দেবে এবং ট্রাম্প দাবি করেন, এর ফলে বিশ্বজুড়ে মার্কিন ব্যবসা আরো প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হওয়ার সুযোগ পাবে। কোম্পানিগুলোর করের হার ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসবে এবং ব্যক্তিগত মালিকদের ক্ষেত্রেও এই হার ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ হারে নেমে আসবে। এর ফলে ধনী বিনিয়োগকারী, আইনজীবী ও অন্যরা আইনের ফাঁক গলে সুবিধা নিতে পারেন, তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আইনের এ ধরনের অপব্যবহার রোধে পরিকল্পনা করছেন। গার্ডিয়ান, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ