২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
জানা যায় খ্রিস্টের জন্মের ৬০০০ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের নিওলিথিক গোষ্ঠীর মানুষেরা তাদের খাবারের মেনুতে দই রাখত। প্রাচীন মিশর, গ্রিস, রোমেও দইয়ের প্রচলন ছিল। অনুমান করা হয়, ভারতেও দইয়ের প্রচলনটি পারস্য থেকেই এসেছে।
দইয়ের আর এক নাম ইয়োগার্ট। দই থেকে ইয়োগার্ট গেঁজিয়ে ওঠা দুধ ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে জীববিজ্ঞানীরা ইয়োগার্ট ও দইয়ের আলাদা ধরনের জীবাণু সংক্রমণের কথা বলেছেন। দুধে নেটপাটাকক্সাস থার্মোফিলাস, ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলতারিকাস ও ব্যাবটেরিয়া জমানোর ফলশ্রæতি হল ইয়োগার্ট। আর ল্যাকটোব্যাসিলাস, অ্যাসিডোফিলাস ও ল্যাকটোব্যাসিলাস বিকিডিস ব্যাকটেরিয়া দই তৈরি করে। পুষ্টিবিদদের কাছে ওজন ও চর্বি কমানোর জন্য দই অনবদ্য।
দই এমন এক ওষুধ যা গ্যাস দূর করা থেকে বার্ধক্য বিলম্ব করা পর্যন্ত সব ধরনের প্রয়োজনেই লাগে। দুধের তুলনায় দই সহজপাচ্য। ভালো দই কি না বুঝবেন যদি দইয়ের পানি কেটে না যায়। দুধে যা যা খাদ্যগুণ আছে তার সবই দইয়ে পাওয়া যায়। তাছাড়া পাবেন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যালশিয়াম, শ্বেতসার (কার্বোহাইড্রেট), চর্বি বা ফ্যাট। মোষের দুধে বেশি চর্বি থাকে। আর একটা ব্যাপার হল, দুধের তুলনায় ভিটামিন বি দইতে অনেক বেশি থাকে। বিশেষত, ফলিক অ্যাসিড ও রাইবোফ্ল্যাভিন, বিভিন্ন ভিটামিনে সমৃদ্ধ দই। দুধের তুলনায় দই সহজপাচ্য। আর একটা কথা হল, এক ঘন্টায় যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধের ৩২ শতাংশ হজম হয় তবে একই সময়ে দই হজম হয় ৯১ শতাংশ। আর দইতে যে ল্যাকটিক অ্যাসিড আছে সেটা ফসফরাস, ক্যালশিয়াম হজম করতে সাহায্য করে।
গরুর দুধ দিয়ে তৈরি ঘরে পাতা ১০০ গ্রাম পরিমাণ দইয়ে আপনি পাবেন ৬০ কিলোক্যালোরি শক্তি, ৩.১ গ্রাম প্রোটিন, ৩ গ্রাম কার্বোহাইট্রেট ও ৪ গ্রাম ফ্যাট, ১৪৯ মিলিগ্রাম ফসফরাস আর ফলিক অ্যাসিড পাবেন ১২.৫ মাইক্রোগ্রাম। প্রোবায়েটিকস নিয়ে গবেষণারত একটা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু আছে যেগুলো জীবন সংশয়কারী জীবাণু সংক্রমণের অতিবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে। দুধের ওপর যেসব জীবাণু বিষক্রিয়া ঘটিয়ে দই তৈরিতে সাহায্য করে সেগুলো এভাবেই প্রাণীর শরীরের পক্ষে হিতকর। গবেষকরা এরকম কুড়ি ধরনের প্রোবায়োটিকস খুঁজে পেয়েছেন। প্রোবায়োটিকসের ভাবার্থ হল জীবনের জন্যে। তার মধ্যে দইতে পাওয়া গেছে এল অ্যাসিডোফিলাস ও থিফিডো ব্যাকটোরিয়াস নামের দুটি জীবাণু। এই জীবাণুগুলো ক্যানসার ইনটেসটিনাস সংক্রামক প্যাথোজেনাস এইসব রোগ প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে।
পুষ্টিবিদেরা দেখিয়েছেন, দই আমাদের কত ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর করতে পারে। ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধকারী হিসাবে দই অদ্বিতীয় যাঁরা অনেকদিন ধরে ডায়ারিয়া বা পেটের গোলযোগে ভুগছেন তাঁদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই দই রাখা উচিত। দইয়ে পেটের অসুখ সেরে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে দই। যেসব জীবাণু আমাদের শরীরে নানা রোগ সংক্রমণকারী জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে, সেরকম কুড়িটির মতো জীবাণু পাওয়া যায়। দইয়ের ক্যানসারের রোগ প্রতিরোধক জীবাণু আছে। সম্প্রতি ইতালির বিজ্ঞানীরা স্তন ক্যানসার কোষ নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেছেন যে, দই ক্যানসারের কোষগুলোকে আর বাড়তে দিচ্ছে না। কোলন ক্যানসার সারাতেও দইয়ের গুরুত্ব্পূর্ণ ভূমিকা আছে। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে দেয় না দই। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রাশিয়ার জীববিজ্ঞানী এলি মেটানিকফ বলেছেন, দই হল আমাদের জীবনের নির্যাস। ব্রেকফাস্টের পরে বা ভাত খেয়ে বেরোনোর আগে ছোটো এককাপ দই খেলে মুখের মধ্যে কোনো রকম জীবাণু আক্রমণ চালাতে পারে না। দাঁতের মধ্যে কোনো গহŸর তৈরি হবে না। দই এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা জীবাণুদের নষ্ট করে। সাংবাদিক-কলামিস্ট।
ষ আফতাব চৌধুরী
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।