Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

২০১৮ সালে শেষ হচ্ছে না পদ্মা সেতুর কাজ

প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের প্রতিবেদন

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ পিছিয়ে মূল সেতু এবং ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ পিছিয়ে নদী শাসনের কাজ : অতিরিক্তি ১ বছর লাগবে


নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৪ সালে। তিন বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও আশানুরুপ অগ্রগতি হয়নি মূল সেতু নির্মাণে। নদী শাসন প্যাকেজের অবস্থারও উন্নতি নেই। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে অতিরিক্ত এক বছর লাগতে পারে। স¤প্রতি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয় রেন্ডাল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে চার দশমিক ১০ শতাংশ। জুন শেষে এ প্যাকেজের ৪৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। যদিও এই প্যাকেজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে মূল সেতুর কাজ। তবে এটি বাস্তবিক অগ্রগতির হার নয়। আর্থিক অগ্রগতির ভিত্তিতে এটি হিসাব করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত নদী শাসনের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র এক দশমিক ১৫ শতাংশ। জুন শেষে এ অংশের বাস্তবায়ন হার ৩০ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ অংশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে নদী শাসনের কাজ। তবে এটিও বাস্তবিক অগ্রগতির হার নয়। আর্থিক অগ্রগতির ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর মূল সেতু নির্মাণে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এর পরিপ্রেক্ষিতে স¤প্রতি ব্যবস্থাপনা পরামর্শক মূল সেতুর বাস্তব অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এতে দেখা যায়, ঠিকাদারের বিদ্যমান যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে অতিরিক্ত এক বছর সময় লাগবে। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি গত ২৪ এপ্রিল সংশোধিত প্রোগ্রাম জমা দেয়। এতে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে অতিরিক্ত ৯ মাস সময় দাবি করা হয়েছে। তবে নির্মাণ তত্ত¡াবধানের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস তা ফেরত দিয়েছে। এক্ষেত্রে চুক্তির বিদ্যমান সময়ের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য পুনরায় সংশোধিত প্রোগ্রাম জমা দিতে বলা হয়।
অন্যদিকে, প্রকল্পটির নদী শাসনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। তবে প্যাকেজের ঠিকাদার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন কাজটি শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় অতিরিক্ত দাবি করেছে। যদিও নদী শাসনের বাস্তব অবস্থা যাচাই করা দরকার বলে মনে করছে ব্যবস্থাপনা পরামর্শক। এক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়, প্যাকেজটির বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবায়নে কত দিন লাগবে সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে এটি করা দরকার।
ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের তথ্যমতে, মূল সেতুর পাইলিং কমপক্ষে আট মাস পিছিয়ে গেছে। এতে এক বছর পিছিয়ে গেছে পিলার নির্মাণও। আর সেতুটির সুপার স্ট্রাকচার হিসেবে পিলারের ওপর বসানো হবে স্টিলের স্প্যান। তবে পিলার ও পাইলিং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে যাওয়ায় স্প্যান নির্মাণও গতি হারিয়েছে। এগুলো প্রি-ফেব্রিকেশন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার মাস পিছিয়ে গেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে এখন সে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। বরং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেক সেতু দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে এখন কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত আগস্ট পর্যন্ত মূল সেতুর ২৪০টি পাইলের মধ্যে মাত্র ১৮টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আর ১১৪টির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ৪০টি পিলারের মধ্যে দুটির (৩৭ ও ৩৮) নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এগুলোর ওপর বসানোর জন্য স্প্যানও প্রস্তুত করা হয়েছে। পিলারের ওপর স্থাপনের জন্য মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরা প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যানটি। এর আগে গত সপ্তাহে স্প্যানটি ধূসর রঙ করা হয়। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এটি ৩৭ ও ৩৮নং পিলারের ওপর বসানোর কথা রয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় মূল সেতু নির্মাণের চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নদী শাসনের চুক্তি মূল্য আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দুই প্যাকেজের আওতায় ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৫ হাজার ৪৫৭ কোটি ৬০ লাখ ও দুই হাজার ৬৩৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ খাতে এ ব্যয় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাাব করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Mahbub Hasan ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:২৭ এএম says : 0
    পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৮ তে শেষ না হলেও সমস্যা নাই। কেননা এত বড় প্রজেক্ট ধামাচাপা/তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করে প্রজেক্টটি যেন ধংসের মুখে পতিত না হয়। মনে রাখতে হবে জাতি একটা টেঁকসই সেতু চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • আবু সুফিয়ান ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:৫০ এএম says : 1
    মনে হচ্ছে ব্যায় আরও বাড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Azizul Hoque Chowdhury ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:১৭ পিএম says : 0
    লক্ষ্যমাত্রার ছেয়ে পিছিয়ে গেলেও সর্ম্স্যা নেই মানসম্মত কাজের মাধ্যমে সম্পুর্ণ করতে পারলে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Riju ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:১৮ পিএম says : 2
    এইটা তো আগেই জানতাম
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed Tuhin ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:২৮ পিএম says : 0
    সময় অনুযায়ী কাজ শেষ না হলে সংশ্লিষ্টদের জরিমানা সহ কাজ আদায় করা হোক, জনগণের কষ্টের টাকা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না ।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:০৩ পিএম says : 0
    কবে শেষ হবে সেটা কী সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • কাসেম ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:০৫ পিএম says : 0
    নিউজটা পড়ে মনে হচ্ছে এবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকালীন সময়ে উদ্বোধন করতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:০৬ পিএম says : 0
    এতদিন যে ভাষণ শুনলাম তা সবই কী বেকার ?
    Total Reply(0) Reply
  • বাদশা ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:০৭ পিএম says : 0
    তবুও আশায় বুক বেঁধে আছি
    Total Reply(0) Reply
  • লাভলু ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:০৮ পিএম says : 0
    দেরী হয় হোক কিন্তু বাজেট বাড়ানো যাবে না
    Total Reply(0) Reply
  • mosharuf ৩ অক্টোবর, ২০১৭, ৮:৪৩ এএম says : 3
    মনে হচ্ছে ২০২০ সালের আগে সম্ভব নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • sabuj ২৮ অক্টোবর, ২০১৭, ৯:১২ এএম says : 0
    পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৮ তে শেষ না হলেও সমস্যা নাই। কেননা এত বড় প্রজেক্ট ধামাচাপা/তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করে প্রজেক্টটি যেন ধংসের মুখে পতিত না হয়। মনে রাখতে হবে জাতি একটা টেঁকসই সেতু চাই। লক্ষ্যমাত্রার ছেয়ে পিছিয়ে গেলেও সর্ম্স্যা নেই মানসম্মত কাজের মাধ্যমে সম্পুর্ণ করতে পারলে হবে। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছি
    Total Reply(0) Reply
  • Engr. Shafiqur Rahman Anu ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:০১ এএম says : 0
    ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। ‘বহমুখী পদ্মা সেতু প্রকল্প’ একটি বিশাল, জটিল এবং চ্যেলেঞ্জিং কারিগরি প্রকল্প! বাংলাদেশের জন্য তো বটেই, এমনকি যে পৃথিবীর যে কোন উন্নত দেশের জন্যও এটি একটি গর্বের বিষয়! হা, এই সেতুর পরিকল্পনা, নির্মাণ করা --এত সহজ না! এটি কোন গতানুগতিক কাজও না! দেশী বিদেশী অনেক বিশাল চক্রান্ত ও গভীর ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে, বাংলাদেশের মানুষের নিজের টাকায় ১ম বারের মত-- প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে-- বিশাল ও খরস্রোতা পদ্মা নদীর উপর - বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম যে সেতু নির্মিত হ‌চ্ছে – অনেক প্রতিকুল অবস্থার পরও – এই বিশাল, জটিল এবং চ্যেলেঞ্জিং কারিগরি প্রকল্পের অর্ধেক এরও বেশী (৫২%) কাজ হয়ে গেছে! বাকী কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে! এই ধরনের বিশাল, জটিল এবং চ্যেলেঞ্জিংকারিগরি এবং একসময় ‘প্রায় অসম্ভব’ সেই ‘অনিশ্চিত’ সেতুটির নির্মাণ কাজও এত সহজ নয়। এর জন্য যে সময় প্রয়োজন – তার চেয়ে অনেক কম সময় দেয়া হয়েছে – আমাদের “হুজুগে বাঙালী”দের “সব কিছু খুব দ্রুত পাওয়ার বা হওয়ার” অবাস্তব মন মানসিকতার কারনে আমি চ্যেলেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, আমাদের মত অনুন্নত (ও গরীব) দেশ তো দুরের কথা, বিশ্বের সেরা উন্নত (এবং ধনী) দেশগুলিও এত কম সময়ে (৩ বছরে) এই ধরনের বিশাল, জটিল এবং চ্যেলেঞ্জিং কারিগরি কাজ করতে পারবে না। অতীতেও ( এমনকি হাজারে ১ টিও) পারে নাই। তাই, পদ্মা সেতুর নির্মাণ সময়ের ব্যপারে আমাদের ধৈর্যশীল হতে হবে। বাস্তববাদী হতে হবে। যারা এখন এই বিষয়ে বড় বড় কথা বলছেন, তির্যক কথা বলছেন – তাদের প্রায় সব্বাই (৯৯%) – ২০১০ – থেকে ২০১৬ পর্যন্ত – পদ্মা সেতুতে (বহুল প্রচারিত) দুর্নীতির হাজার হাজার (ভুয়া) প্রমান হাজির করতেন, সদরপে দুর্নীতির কথা বলতেন। আজ তাদের মুখে ছাই দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার – নিজস্ব অর্থে - বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতুই না – একটি বিশাল, জটিল এবং চ্যেলেঞ্জিং কারিগরি প্রকল্প – যা কয়েক বছর আগেও ‘প্রায় অসম্ভব’ মনে হ্যেছিল – সেই বিশাল প্রকল্পের অর্ধেক এরও বেশী (৫২%) কাজ হয়ে গেছে! বাকী কাজও ইনশাল্লাহ, কিছুটা দেরী হলেও – ভাল ভাবে সম্পন্ন হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় জননেত্রী শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা সেতু

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৬ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ