পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে নিজেদের গঠনমূলক প্রভাব কাজে লাগানোর আশ্বাস দিয়েছে চীনা প্রতিনিধিরা। চীনের ৬৮তম জাতীয় দিবস উৎযাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ম্যা মিংকিয়াং এর দেয়া বক্তৃতায় চীন যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানে লক্ষে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। অনেক দেরিতে হলেও চীনাদের এই বোধোদয় ও আশ্বাস রোহিঙ্গা সংকটের ইতিবাচক সমাধানের পথে কিছুটা হলেও প্রত্যাশার আলো ছড়াচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বার্মিজ বাহিনীর গণহত্যা ও এথনিক ক্লিনজিং অপারেশনের বিরুদ্ধে যখন বিশ্বসম্প্রদায়কে সরব হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিকটতম প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত ও চীন নীরব অবস্থান গ্রহণ করে। রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিপীড়ন এবং নাগরিকত্বের স্বীকৃতি নিয়ে সৃষ্ট সংকট কয়েক দশকের পুরনো হলেও প্রতিবেশীদের বিষ্ময়কর নীরবতা বা নীরব সমর্থনের মধ্যে এই সমস্যার বড় চাপ বাংলাদেশকেই বহন করতে হচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া জাতিগত নির্মূল অথবা রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযানে নতুন করে বাংলাদেশে ৫লক্ষাধিক শরণার্থী আশ্রয় নেয়ার পরও মিয়ানমারের এই ন্যাক্কারজনক তৎপরতাকে সমর্থন জানায় চীন ও ভারত। মূলত: রাখাইন স্টেটে এই দুই দেশের বিনিয়োগ এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ধরে রাখতেই তারা এমন ভূমিকা গ্রহণ করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা। তবে চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের পরিবর্তিত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি ও ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। চীনা অর্থায়নে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পিছিয়ে গেলেও মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে চীনা বিনিয়োগে গভীর সমুদ্র বন্দর, জ্বালানী পাইপলাইনসহ বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চলছে। রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা ও ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও মিয়ানমারের পাশে থাকার চীনা ঘোষণার নেপথ্য কারণ মূলত: এই অর্থনৈতিক স্বার্থ। একইভাবে ভারতও মিয়ানমারের সম্ভাবনাময় খনিজ সম্পদ ও জ্বালানী খাতের অংশিদারিত্বের সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়। তবে হাজার বছরের রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক বাস্তবতায় যে রোহিঙ্গারা রাখাইনের ভ‚মিপুত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, তাদেরকে সেই ভ‚মি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এটা চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যত তাড়াতাড়ি অনুধাবন করতে পারবে, সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ততই মঙ্গল। রাখাইনে বিনিয়োগ ও উন্নয়নে মিয়ানমার তথা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জনশক্তিকে কাজে লাগানোর বদলে সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ সমগ্র অঞ্চলকেই একটি দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার গহŸরে ঠেলে দিতে পারে, এই আশঙ্কাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
সরকারীভাবে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের অনুপ্রবেশকারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও মানবিক কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীর ভার বহনে বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে। দেশের মানুষও দলমত নির্বিশেষে হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। নতুন আগত রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের দু’দিনের মধ্যে অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বলে জানা যায়। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের প্রভাব কাজে লাগানোর রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে আওয়ামীলীগের একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যেই বেইজিং সফরে গেছেন। আওয়ামিলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে: কর্নেল(অব:) ফারুক খানের নেতৃত্বে চীন সফরকারি দলের বৈঠকে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার লি জুন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা যায়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বেনেতাদের অনেকেই রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট সুপারিশ ব্যক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)’র হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এ সপ্তাহে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন শেষে আবারো মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে রাখাইনে ফেরত নেয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন। যেখানে পুরো ইউরোপ মিলেও কয়েক লাখ মুসলমান শরণার্থীর চাপ সামাল দিতে পারছেনা, সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থীর দীর্ঘস্থায়ী ভার বহন করা অসম্ভব। পশ্চিমা দেশগুলো যখন এ ক্ষেত্রে মানবিক অবস্থান নিয়েছে তখন আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে চীনকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনীতি ও কূটনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের ভূ-রাজনীতি ও ক‚টনৈতিক অবস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। চীন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দুইদেশকে পরস্পর অকৃত্রিম ও পরীক্ষিত বন্ধু বলে স্বীকার করে। বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটেও দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক উন্নয়নের স্বার্থে সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখতে চীন যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।