Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার খবর ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক

| প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা সংক্রান্ত খবরকে নাকচ করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশি গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর একটি বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল ও একটি আন্তর্জাতিক অন লাইন পত্রিকার সূত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গত ২৪ আগস্ট প্রাণনাশী হামলার ব্যর্থ প্রচেষ্টার খবর প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রীর ওপর তথাকথিত ব্যর্থ হামলার সঙ্গে একটি বিশেষবাহিনীর কতিপয় সদস্যকে সংশ্লিষ্ট করে বাংলাদেশের কয়েকটি টিভি চ্যানেল খবর প্রচারসহ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের নিরাপত্তার সার্বিক স্বার্থ পরিপন্থী এরূপ বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার করা যে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সচেতন গণমাধ্যমের পক্ষে মোটেও কাম্য নয়। এমন ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্তকতা অবলম্বন ও বিচার-বিবেচনাপ্রসূত গণমাধ্যম কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতীয় সাংবাদিক এবং বিবিসি’র সাবেক সংবাদদাতা সুবির ভৌমিক এই ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরের জন্মদাতা। তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের নিউজ পোর্টাল মিজিমা ডটকমে ‘বাংলাদেশ’স’ হাসিনা সার্ভাইভস এনাদার এটেম্পট অন হার লাইফ’ শিরোনামীয় খবরে প্রকাশ করেন। একই দিনে তিনি লুক ইস্ট ডট ইন ডটকমের নিউজ পোর্টালে ‘বিএনপি-আইএসআই নেকসাস টার্গেট হাসিনা, বাট ফেইলস’, শিরনামে একই খবর প্রকাশ করেন। এই নিউজ পোস্টালটির তিনি এডিটোরিয়াল ডাইরেক্টর। এর একদিন পর একই খবর প্রকাশিত হয় ভারতের সিএনএন-নিউজ ১৮-তে ‘জিহাদি কন্সপিরেসি টু এসাসিনেট বাংলাদেশ পিএম শেখ হাসিনা ফয়েলড ইন দি নিক অব টাইম’, শিরোনামে। এখানে সুবির ভৌমিককে কন্ট্রিবিউটার বলে জানানো হয়েছে।
একই ব্যক্তির তৈরি করা একটি খবর একযোগে বিভিন্ন শিরনামে মিয়ানমার ও ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া এবং খবরটিকে মেইন স্ট্রিম গণমাধ্যমের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা থেকেই ধারণা হয়, এটি ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক। খবরটিতে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনী এসএসএফ’র ৬/৭ জন সদস্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বলা হয়, জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা এ পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা ছিল, প্রধানমন্ত্রী যখন তার অফিস থেকে সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হন তখনই তার ওপর হামলা চালানো। এসময় জেএমবির জঙ্গিরা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের চারপাশে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবে, আর খুনিদের পালানোর রাস্তা করে দেবে। খবরে আরো দাবি করা হয়েছে, দেহরক্ষী ও জেএমবি’র মধ্যকার যোগাযোগের বিষয়টি জানতে পারে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দারা। তারাই ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়। এও দাবি করা হয়, চারটি স্বতন্ত্র সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর দুটি সূত্র ঢাকার এবং দুটি সূত্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা ভারতের ‘এক্সটারনাল ইন্টেলিজেন্স অ্যাপারেটাস-এর। গত শনিবার ঢাকার একটি টিভি চ্যানেলে অংশ নিয়ে সুবির ভৌমিক তার খবর সঠিক বলে দাবি করেন এবং কলকাতা থেকে ডবল চেক করে নিউজ করেছেন বলে জানান। সুবির ভৌমিক তার খবরের সত্যতা সম্পর্কে যতই নিশ্চিত করতে চান না কেন, খবরটি প্রকাশের যে প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়েছে তাতে প্রথমেই সন্দেহ জাগ্রত হয়। বিশ্বের নামকরা এত গণমাধ্যম থাকতে তিনি মিয়ানমারের সেনানিয়ন্ত্রিত নিউজ পোর্টালে খবরটি প্রকাশ করতে গেলেন কেন? তার নিজের নিউজ পোর্টালেরই বা আশ্রয় নিতে গেলেন কেন? সিএনএন-নিউজ ১৮তে তিনি সঙ্গী হয়েছেন মনোজ গুপ্তের। কেন? তিনি ‘খ্যাতিমান’ সাংবাদিক এবং ‘৩৭ বছর সাংবাদিকতা’ করছেন বলে দাবি করেন, অথচ এতবড় স্পর্শকাতর খবরটি তিনি বিখ্যাত কোনো গণমাধ্যমিক প্রকাশ করতে পারলেন না কেন?
খবরটির উদ্দেশ্যমূলকতা সহজেই ধরা পড়ে। তাতে প্রথমত, এসএসএফ’র মতো অত্যন্ত বিশ্বস্থ, দায়িত্বশীল ও চৌকষ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের ওপর দোষারোপ করে বস্তুত দেশে-বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত সেনাবাহিনীর ওপরই দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে জঙ্গিদের সমর্থক আছে, এমন একটি কষ্টকল্পনার আশ্রয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোশেশ করা হয়েছে। লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর ওপর। যে মুর্হূতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত রয়েছেন, যখন দুর্গত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ-পুনর্বাসনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য, যখন মিয়ানমার সীমান্তে নানামুখী উস্কানি চালিয়ে যাচ্ছে তখন বিভ্রান্তি ও সংশয় সৃষ্টির জন্য খবরটি বানানো হয়েছে বলেই মনে হয়। এ ব্যাপারে ভারত ও মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট মহলের যোগসাজস থাকা অসম্ভব নয়। এটা কারো অজানা নেই, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্বিচার হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ব যখন সোচ্চার তখন ভারত মিয়ানমারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এমত বাস্তবতায়, খবরটি যৌথ প্রয়োজনায় নির্মিত কিনা সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠতে পারে। আমরা বিশেষভাবে বিস্মিত হয়েছি, সুবির ভৌমিকের কিছু দাবি প্রসঙ্গে। তিনি তার খবরের সত্যতা প্রতিপন্ন করার জন্য বাংলাদেশের দুটি সূত্রের কথা বলেছেন। এই সূত্র কারা, খুঁজে দেখা দরকার। এ প্রশ্নও দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরাও কি কাজ করছে? এ ব্যাপারেও খোঁজ খবর করা প্রয়োজন। পরিশেষে আমরা বলতে চাই, যতই অসত্য ও বানোয়াট খবর তৈরি করে তার সত্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হোক না, তাতে প্রধানমন্ত্রীকে ভীত-সন্তস্ত করা যাবে না। সেনাবাহিনীর মধ্যেও কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। সেনাবাহিনী সব সময়ই দেশ ও জনগণের পাশে আছে, থাকবে। আরও একটি বিষয় বলা দরকার। খবরটি যে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক তা আরো আগেই দেশবাসীকে অবহিত করা উচিৎ ছিল। সেটা বেশ বিলম্বে করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর আশা করা যায়, এ নিয়ে আর কোনো জল্পনা-কল্পনার সুযোগ থাকবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন