Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে জর্জরিত জনজীবন

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ও পানি সঙ্কট

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের আমজনতার লাগাতার দীর্ঘ দিনের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল খুলনাঞ্চলে গ্যাস প্রকল্প অবশেষে ভন্ডুল হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গ্যাস সাপ্লাই খুলনার মানুষের ভাগ্যে আর জুটলোনা। আর সেই ঘা শুকাতে না শুকাতেই গত তিন মাসে এলপি গ্যাসের দাম বাড়ল তিন দফায়। আবার গত দু’মাস ধরে লোডশেডিং বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদ্যুতের মূল্য। তাছাড়া মহানগরী সহ খুলনাঞ্চলের গভীর নলকূপে অনেক স্থানেই পানি উঠছে না ঠিকমত। লেয়ার নিচে নেমে গেছে। ওয়াসার কর্মকান্ডও সন্তোষজনক নয়। সব মিলিয়ে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ এর তীব্র সংকটে নাকাল ও জর্জরিত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প ও বন্দরনগরী খুলনা এবং বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষ। অবহেলিত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের আমজনতার দীর্ঘদিনের দাবী পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ বাস্তবায়িত না হওয়ায় শিল্প সেক্টর বিকাশে এখন দারুন অন্তরায়। নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা তো গড়ে উঠছে না বরং যা আছে তা পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। আর যা এখনও টিকে আছে তা চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সেক্টরে চলছে চরম নৈরাজ্য। খুলনায় ৬০ ও ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও অচল। এ দু’টি কখনো স্বল্প সময়ের জন্য সচল হলেও দ্রুত তা বিকল হয়ে যায়। টিপ্পনী কেটে তাই এ অঞ্চলের মানুষ বলে কেন্দ্র দু’টিতে “জ্বীনের আছর হয়েছে”। যেভাবে বিদ্যুতের সংযোগ প্রতিদিন বাড়ছে তাতে অচিরেই বিদ্যুৎ সংকট আরো তীব্র হবে। এদিকে ওজোপাডিকোর প্রি-পেইড মিটারে বিভিন্ন খাতে অযৌক্তিক চার্জ বৃদ্ধির প্রতিবাদে খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা করে। খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড. আ ফ ম মহসীন এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব এ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন-লোক চেতনার সভাপতি শেখ ইলিয়াস, বৃহত্তর আমরা খুলনা বাসীর সভাপতি ডাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান খোকন প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, প্রি-পেইড মিটার বসানোর সময় মিটার বাবদ কোন ভাড়া গ্রহণ করা হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেও বর্তমানে প্রি-পেইড কার্ড কেনার সময় মিটার ভাড়া কাটা হচ্ছে। এর বাইরে সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জসহ বিভিন্ন খাতে টাকা কাটা হচ্ছে। এছাড়াও সমপরিমাণ টাকার একটি কার্ডের সাথে অন্য কার্ডের সঙ্গতি নেই। প্রি-পেইড কার্ড ক্রয় করতে গিয়ে গ্রাহকরা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নিকট কোন প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায় না। প্রতিবাদ সভায় অনতিবিলম্বে প্রি-পেইড মিটারের অনিয়ম, ভুতুড়ে কান্ড, অসংগতি পূর্ণ চার্জ কাটা বন্ধ, পর্যাপ্ত বুথ স্থাপনসহ গ্রহকদের সামনে স্বচ্ছতা উপস্থাপন করা অন্যথায় প্রি-পেইড মিটার বাতিলের আহবান জানান বক্তারা। তা না হলে সাধারণ জনগনকে সাথে নিয়ে গ্রহকদের পকেট কাটার তেলেসমতি বন্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দায়িত্বশীল সুত্রমতে, স্বাধীনতার আগে ও পরে খুলনাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত শিল্প কলকারখানা গুলো গত দু’দশকে গ্যাসের অভাবে এবং তৎকালীন সরকারগুলোর উদাসীনতা ও কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালী পানার কারনে প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যায়। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন স্বমন্বয় সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে দলমত নির্বিশেষে গ্যাস প্রকল্প স্থাপনের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলন শেষে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় অবশেষে ৫৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের ৩৭১ কোটি ব্যয় হওয়ার পরও তা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকটা স্বপ্নের মত বাস্তবায়িত হচ্ছিল গ্যাস প্রকল্পটি। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। কিন্তু গ্যাস প্রকল্প বন্ধ হল আর নতুন করে গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি পেল কয়েক দফায়। ফলে এ যেন খুলনাঞ্চলের মানুষের ওপরে “মরার ওপর খাড়ার ঘা”। এদিকে দফায় দফায় খুলনাঞ্চলের জ্বালানী কাজে ব্যবহ্রত এল,পি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মধ্য বিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। সূত্রমতে, নির্বাচন আসলেই জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার হাতিয়ার বানায়। বেগম খালেদা জিয়া তার এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলেও প্রকল্পটি লাল ফিতায় বন্দী হয়ে থাকে। তৎকালীন জ্বালানী উপদেষ্টাও আশার বানী শোনায় কিন্তু সবই ব্যুমেরঙ। এই সরকারের আমলেও শেষ পর্যন্ত গ্যাস প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখল না।
অপরদিকে বর্তমানে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প সেক্টরে চরম নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। লোড শেডিং এর কারণে খুলনার মৎস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ বিভিন্ন মিল-কলকারখানা গুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে আরেক দফা বিদ্যুৎ বিলের মুল্য বৃদ্ধির ঘোষণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপকুলীয়াঞ্চলের মানুষ। আর খুলনায় ওয়াসার পানির তেলসমতি কারবারে অতিষ্ঠ নাগরিক জীবন। পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে তা ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মনে করেন অধিকাংশরাই। ওয়াসা সৃষ্টির ৮ বছরে পানি সাপ্লাই বাড়েনি আশানুরূপভাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ