পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে শিল্প-বাণিজ্যের জগতময় এক প্রবাদপুরুষ ছিলেন এ কে খাঁন (আবুল কাসেম খাঁন)। একে খাঁনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মরহুম এ এম জহিরুদ্দীন খাঁন নব্বইয়ের দশকে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুদীর্ঘকালের বনেদী পরিবারের সফল শিল্পপতি হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এশিয়ার বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিলসকে (কেপিএম) স্বাবলম্বী করে অতীত গৌরবের ধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। এরজন্য জহিরুদ্দীন খাঁন শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে কেপিএমে একাধিকবার গিয়ে সরেজমিনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন। এতে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন দু’টি বিষয়। এক. কেপিএমের মতো একটি সুবিশাল শ্রমঘন মৌলিক (রাসায়নিক শিল্পখাত) বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে স্বাবলম্বী হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং অপার সুযোগ-সম্ভাবনা রয়ে গেছে তার সদ্ব্যবহার করা হয়নি। মাঝেমধ্যে বিক্ষিপ্ত ও অপরিকল্পিত ‘এডহকি’ (সাময়িক) গোছের উদ্যোগে সফলতা আসেনি। দুই. কেপিএমের অন্যতম তবে এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে কাঁচামালের স্থায়ী বিকল্প উৎস নিশ্চিত করা। শুধুই বাঁশের উপর নির্ভর না করে কাঁচামালের বিকল্প উৎস সংস্থানের জন্য উদ্যোগ জরুরি। কেননা রাঙ্গামাটিসহ গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। সেই সাথে কেপিএমের প্রধান কাঁচামাল বাঁশ-কাঠের আহরণ ও যোগান ক্রমাগত কমে আসছে।
উপরোক্ত বাস্তবতার আলোকে উপলব্ধি নিয়েই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী জহিরুদ্দীন খাঁন কেপিএমকে ধাপে ধাপে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিএমআরই পরিকল্পনা গ্রহণ, পুরোপুরি স্বাবলম্বী, বৃহত্তম ও মৌলিক রসায়ন শিল্পের উপযোগী মডেলে উন্নীত করার জন্য কাঁচামালের বিকল্প ও সহজতর উৎসগুলো খুঁজে বের করা এবং তার সংস্থানের পদক্ষেপ নেন।
কর্ণফুলী পেপার মিলসে কাগজ উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে বাঁশ। এরপর রয়েছে কাঠ, চূনাপাথর এবং পাল্পউড। কেপিএমের নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বাঁশ ও কাঠের প্রধান উৎসভূমি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল। সেখান থেকে বাঁশ, গুল্ম ও কাঠ সংগ্রহের পরিমাণ দিনে দিনে কমে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। তাছাড়া বাঁশসহ বনজ সামগ্রী সংগ্রহ করে মিল গেইটে পোঁছা পর্যন্ত হরেক রকমের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। ঘাটে ঘাটে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর চাঁদাবজি ও ভয়-ভীতি-সন্ত্রাস অন্যতম বাধা। রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য এলাকাগুলোর গহীন অরণ্যে বাঁশ, কাঠ আহরণকারী ঠিকাদার ও নিরীহ শ্রমিক-মজুরদেরকে সেখানে বিভিন্ন নামে-বেনামে সশ¯্র সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ গ্রæপের নির্দিষ্ট ‘রেইট’ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক চাঁদার দাবি মিটিয়ে আসতে হয়। অন্যথায় অপহরণ ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, হত্যা-গুম, রাহাজানির অনেক ঘটনা ঘটে।
এই প্রেক্ষাপটে জহিরুদ্দীন খাঁনের স্বপ্ন ও উদ্যোগটি ছিল তার অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবমুখী। তা হলো কেপিএম ও এর আশপাশের বিস্তীর্ণ সব পাহাড়ি উঁচুনিচু এলাকায় পাল্পউড, পাট-মেস্তা বাগান পরিকল্পিতভাবে সৃজন করা। এর মাধ্যমে কেপিএমের জন্য কাঁচামালের পর্যাপ্ত সংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখা। একই সাথে স্থানীয় হাজার হাজার অধিবাসীর কর্মসংস্থানের পথ খুলে দেয়া। কাঁচাপাট থেকে মন্ড তৈরি করে সর্বোত্তম কাগজের কাঁচামাল তৈরির ব্যাপারে রসায়ন বিশেষজ্ঞদের জোরালো সুপারিশের ভিত্তিতে তিনি এ ব্যাপারে একটি ‘পাইলট প্রকল্প’ বাস্তবায়ন শুরু করেন নিজের তদারকিতেই।
এর আওতায় ১৯৯৪-৯৬ সালে তৎকালীন সরকার কেপিএম ছাড়াও নর্থবেঙ্গল পেপার মিল, সিলেট পেপার ও পাল্প মিলস, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলসের জন্য প্রাথমিকভাবে বার্ষিক অন্তত ৪০ হাজার মেট্রিক টন মন্ড তৈরি ও ব্যবহারের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি মিলে পর্যাপ্ত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘গেøাব ডাইজেস্টার মেশিন’ স্থাপিত হয়। এই প্রকল্পে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু জহিরুদ্দীন খাঁন বিএনপি সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পর অবস্থা পাল্টে যায়। সংঘবদ্ধ স্বার্থান্বেষীদের কারসাজির কারণে কাগজশিল্পের জন্য গৃহীত এই মহতি উদ্যোগটি থমকে গিয়ে অবশেষে পুরোপুরি ভেস্তে যায়। তার দূরদর্শী পরিকল্পনায় পাল্পউড, পাট-মেস্তা বাগান সৃজন এবং ‘গেøাব ডাইজেস্টার মেশিন’ স্থাপনের মাধ্যমে কাঁচামালের যোগান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি; পরিকল্পনাটি চলে যায় হিমাগারে।
অথচ বর্তমান বাস্তবতায় সবাই তাগিদ দিয়ে আসছেন, বাঁশ ছাড়াও কেপিএমের কাগজ উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন সচল রাখার লক্ষ্যে বিকল্প কাঁচামালের উৎস নিশ্চিত করা শুধু কারখানার জন্যই নয়; এই মৌলিক শিল্পকে বাঁচানোর জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন। ‘প্রয়োজন’ অনুভূত হলেও বাস্তবায়নের কোনো আলামত আজও নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।