পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর তীরে সুবিশাল কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম) এলাকাটি কাগজসহ মৌলিক রসায়ন শিল্পের জন্য সবচেয়ে উপযোগী অবস্থানে রয়েছে। এই বাস্তব দিকটি ৬৬ বছর আগে দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। দূরদর্শী পরিকল্পনার ফলেই সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কারখানা। সুবিস্তীর্ণ কেপিএম এলাকায় ক্রয় করা জমির পরিমাণ ৩২ দশমিক ৪৭ একর। লিজপ্রাপ্ত জমি রয়েছে আরও ১১৯২ দশমিক ৯৬ একর। শুধুই মিল এলাকার আয়তন ৪৪২ দশমিক ৩২ একর। কেপিএমের কাগজ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল বাঁশের সংস্থান রাখার ক্ষেত্রেও বিচক্ষণতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তৎকালীন বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞ ও নীতি-নির্ধারকগণ। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বাঁশের আহরণ নিশ্চিত করার জন্য পার্বত্য রাইংক্ষং এলাকায় লিজপ্রাপ্ত ৮৩ হাজার ৪০৮ একর এবং কাচালং এলাকায় লিজপ্রাপ্ত ৪২ হাজার ৮৬৯ একর বনভূমিকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে কাঁচামালের পশ্চাৎভূমি হিসেবে রাখা হয়। যা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল এলাকা কর্ণফুলী পেপার মিলসের অধিভূক্ত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছিল। আর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সদরঘাট রোডে কেপিএমের বনেদী হেড অফিস স্থাপিত হয়। কালের বিবর্তনে আজও কেপিএম এলাকাটি বিশেষত কাগজ ও রসায়ন শিল্প প্রসারের জন্য উত্তম পীঠস্থান হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। অথচ এশিয়াখ্যাত বৃহদায়তন সেই প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ন-জীর্ণ হতে হতে মৃতপ্রায় শিল্পে পরিণত হয়েছে সার্বিক অব্যবস্থাপনা, চরম অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অদূরদর্শিতার কারণেই। এহেন দুর্দশা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্প প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে কেপিএমকে কর্মচঞ্চল এবং সম্প্রসারণের জন্য বিদেশি বিভিন্ন শিল্পোদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এ যাবত গভীর আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূল লক্ষ্য, বর্তমান পুরনো-জীর্ণ কেপিএমের আমূল সংস্কার ও আধুনিকায়ন। আর কেপিএমের পাশাপাশি আরও কাগজ শিল্প ইউনিট স্থাপন। আগ্রহ ব্যক্তকারী দেশের মধ্যে রয়েছে জাপান, সউদি আরব, চীন। অতীতে কেপিএমের নির্মাতা আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, ইতালি এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও সংস্কার-আধুনিকায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততায় তা বিফলে গেছে।
সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেপিএমের আধুনিকায়ন এবং পাশাপাশি নতুন ইউনিট স্থাপনের জন্য বিনিয়োগের প্রস্তাব ও উদ্যোগগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনিশ্চিত অবস্থায় ঝুলে আছে। কারখানা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সউদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। অথচ কবে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তব রূপায়ন হবে তা অনিশ্চিত। গতবছরের মার্চ মাসে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সউদি আরব সফরকালে সেদেশের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ড. তাওফিক ফাওজান আল-আরাবিয়াহ এবং সউদি শিল্প-বিনিয়োগকারীদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় কাগজ শিল্পসহ সম্ভাবনাময় খাতওয়ারি বিনিয়োগের জন্য সউদি শিল্পোদ্যোক্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক এক হাজার মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সউদি অর্থায়নে কেপিএম এলাকাতেই আরও একটি নতুন কাগজ কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয় ৩ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। এ ব্যাপারে সরকারের তরফে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) এবং সউদি আরবের নামিদামি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আল-রাজি গ্রæপের মধ্যে গতবছর ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আল-রাজি গ্রæপ সোয়া ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্মত হয়। আর উৎপাদিত কাগজের শতকরা ৩৯ ভাগ বাংলাদেশ এবং ৬১ ভাগ আল রাজি গ্রæপ সুবিধা পাবে বলে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে কাগজ উৎপাদনের টার্গেট রাখা হয়। সউদি আরবের আল-রাজি কোম্পানি ফর ইন্ডাষ্ট্রি অ্যান্ড ট্রেডের পক্ষে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসিফ আল রাজি এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
আল রাজি গ্রæপ কেপিএম এলাকায় কারখানার নিজস্ব ভূমিতে ৩৬০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টসহ বার্ষিক ৩ লাখ টনেরও বেশি কাগজ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি কাগজ কারখানা স্থাপনের আশ্বাস প্রদান করে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ও পরে সউদি প্রতিষ্ঠান আল-রাজি গ্রæপের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা কেপিএম পরিদর্শন করেন। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রাকৃতিক কাঁচামালের উৎসস্থলগুলোও সরেজমিনে দেখতে যান। কিন্তু সেই চুক্তি স্বাক্ষরের পর আজও বিনিয়োগের বাস্তব আলামত দেখা যাচ্ছে না।
১৯৫১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশের অধীনে কর্ণফুলী পেপার মিলস প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন এদেশে ৩১টি হাতে তৈরি কাগজের এন্টারপ্রাইজ এবং ১২২ জন শ্রমিক নিয়ে একটি কার্বন কাগজ তৈরির ইউনিট ছিল। এ অবস্থায় কেপিএম শিল্প আইনের অধীনে নিবন্ধিত প্রথম কাগজশিল্প, যা ৩০ হাজার শ্রমিক নিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম কাগজকল হিসেবে গৌরবের দাবিদার। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, ইতালির কারিগরি-প্রকৌশল সহযোগিতায়, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এটি স্থাপিত হয়। বার্ষিক ৩০ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ১৯৫৩ সালে মিল চালুর কয়েক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন হ্রাস পায়। তখন তৎকালীন পাকিস্তানের দাউদ গ্রæপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ কম মূল্যে মিলটি কিনে নেয়। ১৯৬৪ সালে দাউদ গ্রæপ কারখানা আধুনিকায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। কয়েক বছরের ব্যবধানে কেপিএম লাভজনক হয়ে উঠে। এর লভ্যাংশ দিয়ে কর্ণফুলী রেয়ন অ্যান্ড কেমিক্যালস লিঃ (কেআরসি) স্থাপিত হয়। এরফলে ২০০০ সাল পর্যন্ত কেপিএম মুনাফার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
কিন্তু এর পরবর্তী ২০০১ সাল থেকে কর্তৃৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি, অবহেলা, অব্যবস্থাপনায় ক্রমেই কেপিএম লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। কারখানায় বর্তমানে দায়-দেনা ও লোকসানের পরিমাণ সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলছে আর্থিক ও কাঁচামালের চরম সঙ্কট। এখন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সোয়া ২শ’ শ্রমিক-কর্মচারী অবসরে গেলেও তাদের সকল পাওনা আটকে গেছে। প্রধান কাঁচামাল বাঁশ ছাড়াও চুন, লবণ, কস্টিক সোডা, ট্যালকম পাউডার, চুনা পাথর, ক্লোরিং গ্যাস সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির পাওনা রয়েছে দেড়শ’ কোটি টাকা। সবকিছু মিলে দায়-দেনাভারে ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী মৌলিক কাগজশিল্পের বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানটি। কেপিএমকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের একক কিংবা কনসোর্টিয়াম-ভিত্তিতে পুঁজি ও কারিগরি বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। তবে কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততা, অদূরদর্শিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটজালে ইতোমধ্যে সউদি আরব ছাড়াও চীনা, জাপানী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কেপিএমের আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণের আগ্রহ দেখিয়ে আবার পিছপা হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি দূরদর্শী সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এর নিবিড় বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেপিএম ফের সজীব হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। শুধু তাই নয়; দেশে কাগজের চাহিদা মিটিয়ে কেপিএমে উৎপাদিত কাগজ বিদেশে রফতানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণও সম্ভব হবে।
শুধু তাই নয়; দেশে কাগজের চাহিদা মিটিয়ে কেপিএমে উৎপাদিত কাগজ বিদেশে রফতানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণও সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।