পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ছোট গ্রামে আশ্রিত, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত শত শত হিন্দু ধর্মাবলম্বী শরণার্থীর জন্য ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে, অন্যদিকে এক মাইলেরও কম দূরত্বে মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মরিয়া হয়ে খুঁজছে খাদ্য ও আশ্রয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে শরণার্থী সমস্যা দেখা দেবার পর এ ধরনের জাতিগত ও ধর্মীয় বিভেদ আরো গভীর হয়ে দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম। জাতিঙ্ঘের মতে ‘জাতিগত নিধন’ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি।
এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তাদের আগমন দেশের কর্তৃপক্ষ ও সাহায্য সংস্থাগুলোকে হতবিহŸল করে দিয়েছে এবং শরণার্থীরা আসার পর থেকে পেয়েছে অতি সামান্য সাহায্য বা কোন সরকারী সহায়তা না পেয়ে রয়ে গেছে আশ্রয়, খাদ্য পানীয় বঞ্চিত।
গত ২৫ আগস্ট বেশ কিছু পুলিশ চেকপোস্টে রোহিঙ্গা স্বাধীনতাকামীদের হামলার পর পরিচালিত সেনা অভিযানে অতি ক্ষুদ্র হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়েছে।
রাখাইনের অধিকাংশ মানুষ যখন গৃহহীন হয়ে পড়ে তখন মিয়ানমারের প্রায় ৫শ’ হিন্দু নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে এসে প্রাথমিকভাবে উপচেপড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেবার চেষ্টা করে। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার আঁচ সেখানেও তাদের পিছু নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রিত হিন্দুরা। পরে তাদের আশ্রয় হয়েছে পার্শ্ববর্তী হিন্দু এলাকায়।
কুতুপালংয়ের একটি ছোট গ্রামে আশ্রিত হিন্দুরা রাখাইনে তাদের বাড়িঘরে হামলার বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছে, এ হামলার শিকার হয়ে তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে হয়েছে।
মিয়ানমার সীমান্তের কর্মী নিরঞ্জন (৫০) বলছিলেন, ‘কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়’।
‘আমাদের গ্রামে ৭০টি হিন্দু পরিবার ছিল। মুখোশধারীরা আমাদের ৩ দিন ধরে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে এবং আমাদের বের হতে দেয়নি, এমনকি খাবার আনতে যেতেও দেয়া হয়নি। অনেক শরণার্থী একই ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন। এএফপি’র পক্ষে এসব ঘটনা যাচাই করা অসম্ভব।
কারো কারো বিশ্বাস, হামলাকারীরা ছিল আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আমি (এআরএসএ)’র সদস্য, যারা পুলিশ চৌকিতে হামলা চালিয়েছিল।
সর্বশেষ সহিংস ঘটনার পর রাখাইনের জাতিগত গ্রæপগুলো হামলার জন্য পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করতে থাকে। এর ফলে জাতিগুলোর মধ্যে দীর্ঘ অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সামরিক বাহিনী এবং জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ জঙ্গীদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছে। এর ফলে শত শত গ্রাম পরিণত হয়েছে ছাইভষ্মে।
এদিকে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বলছে, রোহিঙ্গা স্বাধীনতাকামীদের পুলিশ পোস্টে হামলা থেকে এতদাঞ্চলে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। হিন্দু শরণার্থীদের মতে, তারা বাংলাদেশে চলে আসার পরও উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ হয়েছে।
কেউ কেউ বলে, হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কুতুপালং ক্যাম্পে প্রাথমিকভাবে আশ্রয় নেবার চেষ্টাকালে তারা আক্রমণের শিকার হন এবং তাদের একঘরে করে ফেলা হয়। ৩ জন তরুণ এএফপিকে দেখায় কীভাবে তারা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়। পূজা মল্লিক (১৮) জানায়, রাখাইনে সহিংসতায় তার স্বামী ও পিতামাতাকে হারিয়ে সে বাংলাদেশে চলে এসেছে। কুতুপালংয়ে আসার পর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোরপূর্বক বিয়েতে বসানোর চেষ্টা করা হয়। এক আঙ্কেল তাকে উদ্ধার করেন। এখন কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের এক মাইলেরও কম দূরত্বের একটি হিন্দু গ্রামে সে নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছে। স্থানীয় পরিবারগুলো দুশ’ জনকে আশ্রয় দিয়েছে এবং অপর ৩শ’ জন পার্শ্ববর্তী একটি মৌলিক আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। স্থানীয় হিন্দুদের দানে তারা নিয়মিত খাবার পাচ্ছে।
সম্প্রদায়ের নেতা স্বপন শর্মা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা শুনতে পাই যে, হিন্দুরা বাংলাদেশের বনে আশ্রয় নিচ্ছে। সুতরাং আমরা তাদের খুঁজে বের করে এখানে নিয়ে আসি। আমরা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে গেছি, তারা সবাই তাদের (শরণার্থী) জন্য খাদ্য-আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে’। সূত্র : এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।