Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘আল্লাহর দোহাই নির্বাচন বয়কট করবেন না’

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আ’লীগ-বিএনপি নেতাদের বাহাস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 ভোট নিয়ে রাজনীতির মাঠে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে আসা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির নেতারা দীর্ঘদিন পর এক ছাদের নিচে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিতর্ক/বাহাছে মেতে উঠেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে বিএনপিকে তাতে অংশ নেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। প্রতি উত্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নয়, তারা ওই আশ্বাস শুনতে চান নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘অ্যাডভান্সিং ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যান্ড পার্টিসিপেশন ফর পিসফুল ইলেকশনস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার শেষ দিন এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাহাছে মেতে উঠেন দুই দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাও গোলটেলিব আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমাম বিএনপিকে আশ্বস্ত করে বলেন, সরকার কী করল, তার উপর আগামী নির্বাচন নির্ভর করবে না। বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ এবং নির্বাহী বিভাগের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন ভোটের আয়োজন করবে।
তিনি বলেন, আল্লাহর দোহাই লাগে, ২০১৩ সালের মত বলবেন না, আমরা নির্বাচন বয়কট করব, নির্বাচনে যাব না। আগেরবার প্রথমে বলেছিলেন, আমরা নির্বাচন বয়কট করব। তারপরে বললেন, আমরা বয়কট করব না, আমরা প্রতিহত করব। আর প্রতিহত করতে গিয়ে যে আগুন সন্ত্রাস হল, জনগণের ওপরে যে অত্যাচার, সেটি থেকে এবার আমাদের মাফ করে দিন।
এইচটি ইমাম বলেন, সকলে মিলে, সুষ্ঠুভাবে, আসেন আমরা ভালভাবে নির্বাচন করি। শান্তিপূর্ণভাবে করি এবং সকলে সকলের সহযোগিতা নিয়ে করি।
এইচটি ইমামের আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তব্যে বিলেন, সামনে নির্বাচন আসছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সমন্বিত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যেন কেউ সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। সরকার সেটা করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। আমরা সেটা করার জন্য সব ধরনের কাজ করছি। সরকারের সব অঙ্গ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ড. রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন- সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমরা এই আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে চাই না। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই আশ্বাস নির্বাচন কমিশন দেবে।
তিনি বলেন, আমরা খুশি হতাম, যদি ড. রাজ্জাকের মুখ থেকে শুনতাম যে, প্রধানমন্ত্রী ও সরকার ঘোষণা করেছে ও নিশ্চয়তা দিচ্ছে-নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে এবং সেখানে হস্তক্ষেপ করব না। আর তা করা হলেই ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ‘শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন’ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মঈন খানের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে এইচটি ইমাম বলেন, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি নির্বাচন কমিশন একা দিতে পারে না। তিনি বলেন, সংবিধানে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট করে বলা আছে। নির্বাচনকালীন সরকার অর্ন্তবর্তী সরকার হিসেবে পরিচালিত হয়। এই অর্ন্তবর্র্তী সরকারের দায়িত্ব অত্যন্ত সীমিত। দৈনন্দিন কাজ বা রুটিন কাজ ছাড়া তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কোনো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে না। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, যাতে নির্বাচনের সম্পৃক্ততা আছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, সরকারের কোনো দায়িত্ব নেই, তা কিন্তু নয়। নির্বাচন কমিশনকে তো সব রকমের সহায়তা দিতে হবে। এটাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেনৃ নির্বাচন কমিশন যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে, সরকার যা করার করবে।
নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে এইচটি ইমাম বলেন, নিজস্ব অর্থবল, নিজে ব্যয় করার ক্ষমতা ও নিজের জনবল এটিইতো আসল। এর সঙ্গে অন্যান্য যে সমস্ত ক্ষমতা দরকার সেটা তারা দেখবে, সংবিধান অনুসারে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন কমিশনকে তার কাজে সহযোগিতা দেয়া নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের সবার দায়িত্ব হল নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা। তিনি বলেন, দেখতে হবে, নির্বাচন কমিশনের সেই শক্তি, মানসিকতা আছে কি-না। যদি সেটা না থাকে, তাহলে জাতি হিসাবে আমাদের ব্যর্থতা। ক্ষমতা কিন্তু তাদেরকে দেয়া আছে।
ভোটের সময় বিএনপির নির্দলীয় সরকারের দাবি প্রসঙ্গে রাজ্জাক বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন হলেও তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠতে পারে, তার উদাহরণ ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির না হওয়া ভোট। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি। সেই ইয়াজউদ্দিন আহমেদ হলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। সেই তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেটা কেমন হতে পারত চিন্তা করে দেখেন।
সেজন্য নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কী করা যায়, সেটা নিয়ে এবার ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার প্রেক্ষিত সৃষ্টি করতে দরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে এমন সরকার দরকার, যেটা ওই নির্বাচনে পার্টি হবে না। কারণ পার্টি হলে কী হয়, সেটা বুঝে আমাদের আওয়ামী লীগের বন্ধুরা ১৯৯৬ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিলেন।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ-এই শব্দগুলো নির্বাচনের জন্য আলাদা করে বলাটাই ‘পছন্দ নয়’ জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন মানেই হল-তা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। জনগণ সেখানে ভোট দিতে পারবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই বিজয়ী হবে। ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ বলার দরকার হয় না। কিন্তু এখন দরকার হয় এই জন্য যে, জনগণ যেখানে ভোট দেয়নি, ওটাকেও নির্বাচন বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। আমরা চাই জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল মানুষরা সংসদে বসুক। যারা মেজরিটি হয় তারা সরকার গঠন করবে। সেটা আওয়ামী লীগ হলেও আমার আপত্তি নাই।
অন্যদের মধ্যে ইউএসএইডের মিশন পরিচালক জেনিনা জেরুজেলস্কি ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি কেটি ক্রোক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ