পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719570812](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পেয়ারা, কলা, লেবু, জাম্বুরা, আম, কাঁঠাল, পেঁপেসহ হরেক রকম ফলের জন্য নামকরা চট্টগ্রাম অঞ্চল। এখানকার পহাড়ে মিশ্র চাষে ফলছে কমলা লেবু, আম্রপালি, জলপাই ও আমড়ার মতো দেশি ফলও। পাহাড়ে যেমন আনারস তেমনি সমতলে পেয়ারা, পেঁপের আবাদ হচ্ছে। বন্যা, পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণে সতেজ মাটিতে এখন পুষ্ট হচ্ছে হরেক ফলমূল। পাহাড়-সমতলে ফলের আবাদেও সুফল মিলছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন পেয়ারার চাষ হচ্ছে। এর পাশাপাশি পেঁপে, কলা, লেবুসহ দেশী-বিদেশী ফলের চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকেরা। এসব ফল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকার বাজারেও যাচ্ছে প্রতিদিন। চন্দনাইশের কাজি পেয়ারা, সীতাকুন্ডের লাল পেয়ারা সবার কাছে পরিচিত। অন্যবারের তুলনায় এবার পেয়ারা চাষেও বিপ্লব ঘটিয়েছেন এখানকার চাষী ও খামারীরা। ব্যাপকহারে লেবু ও পেঁপের চাষ হচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে। থাইল্যান্ডের রেড রেডিস পেঁপের চাষ হচ্ছে পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্রই। হাইব্রিড ফলের পাশাপাশি স্থানীয় ফলের আবাদেও মনোযোগী হয়েছে এ অঞ্চলের চাষী ও খামারীরা।
একসময় শুধুমাত্র পাহাড় কিংবা সৌখিন খামারীদের খামারে সীমিত আকারে ফলের চাষ হতো। কিন্তু এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ অঞ্চলে ফলের আবাদ হচ্ছে। বড় বড় খামারিরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করছেন ফলের। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফল চাষেও সুফল মিলছে। রোগবালাই কমে গেছে। কমেছে সারের ব্যবহারও। উর্বর জমিতে দ্বিগুণ উৎসাহে ফল চাষে আগ্রহী হয়েছেন কৃষক ও খামারীরা। কৃষি বিভাগ জানায়, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, মিরসরাই, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও বোয়ালখালীতে ব্যাপকহারে হরেক রকমের পেয়ারার চাষ হয়েছে। হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারাতেও পেয়ারার চাষ হয়েছে। রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় ব্যাপকহারে বাতাবি লেবু, কলা এবং পেঁপে চাষ করছেন চাষীরা। মহানগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী অঞ্চলেও লেবু এবং পেয়ারার চাষ হচ্ছে। আনোয়ারার পাহাড়ী এলাকায় ব্যাপকহারে ফল চাষে উৎসাহী হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। মহানগরীর পতেঙ্গা এলাকার হাটবাজারগুলোতে আনোয়ারার সবজি ও ফলের দেখা মিলে। সেখানকার কৃষকেরা কর্ণফুলী নদী পার হয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করছে ক্ষেতে উৎপাদিত কলা, পেঁপে ও লেবু। দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলতি মৌসুমে ৭ উপজেলায় পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার প্রায় ৪০ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি অফিস ও পেয়ারাচাষিরা জানান। দক্ষিণ চট্টগ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জানা গেছে, গত বছর প্রায় তিন হাজার ছয়শ একর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। এ বছর চাষ আরও বেড়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ উপজেলায় ছোট-বড় পেয়ারার বাগান আছে প্রায় ৬ হাজার ৮০০টির মতো। বেশিরভাগ বাগান গড়ে উঠেছে পাহাড়ে পটিয়া-চন্দনাইশ, কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, ছৈয়দাবাদ, রায়জোয়ারা, ধোপাছড়ি, দোহাজারী শঙ্খ নদী পাশ ঘেঁষে।
এদিকে পাহাড়ের চাষীদের মতো চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাষী ও খামারীদের মধ্যেও উচ্চমূল্যের মিশ্র ফল আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। আম, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ উদ্যান ফসলের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় সংরক্ষণযোগ্য মিশ্র ফলের দিকে ঝুঁকছেন তারা। তিন পার্বত্য জেলার ছয় হাজার হেক্টর জমি মিশ্র ফলের আওতায় আনার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। জানা যায়, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আমসহ নানা ধরনের ফলের আবাদ করে সাফল্য পেয়েছে। তবে প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ না থাকায় প্রায় ৫০ শতাংশ ফলই নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি উচ্চ মূল্যমানের ফল চাষে সাফল্য আসায় সরকারের পাশাপাশি কৃষকরাও এগিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে কাজুবাদাম, কমলা, মাল্টা, ড্রাগন ফল, কলম্বো লেবু, সাতকরাসহ বেশ কয়েকটি জাতের দামি ফল আবাদ বাড়িয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড় সমতলে দেশি ফলমূলের পাশাপাশি এখন বিদেশী ফলচাষও বাড়ছে। আম, পেপে, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের নিত্যনতুন ভ্যারাটি আসছে। ড্রাগন ফল, স্টবরির মতো ফলেও আবাদও বাড়ছে। কৃষি বিভাগ এই অঞ্চলের কৃষক ও খামারীদের কাছে নিত্য নতুন ফলমূলের চাষাবাদ নিয়ে আসছে। এতে করে ফলমূলের আবাদও বাড়ছে। তিনি বলেন, এখন কেউ আর পতিত জমি ফেলে রাখতে চাইছেন না। নিজেদের উদ্যোগে অনেকে ফলমূলের চাষ করছেন। একজনের দেখাদেখি অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। তাছাড়া ফলচাষ লাভজনক হওয়ায় চাষও বাড়ছে।
বান্দরবান কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, পার্বত্য তিন জেলা কলা, আম ও কাঁঠাল চাষের সর্বোত্তম স্থান। প্রতি বছর এসব ফলের চাষ বাড়ছে। তবে জুমের জমিতে বিকল্প হিসেবে মিশ্র ফলের চাষ বাড়াচ্ছেন কৃষকরা। বৈচিত্রময় ফলের জন্য আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নতুন রূপে হাজির হবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে দেশে প্রতিবছর দশ হাজার কোটি টাকার আপেল আমদানি হয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, বিদেশ থেকে ফল আমদানি না করে দেশে ফলের উৎপাদন বাড়িয়ে সঠিক বাজারজাত ও প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করা গেলে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। সাশ্রয় হবে হাজার হাজার কোটি টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।