Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রামুর টিলাপাড়ায় নির্বিচারে পাহাড় কাটছে প্রভাবশালী চক্র

নজরদারি নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের

প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস

রামুতে দিনদুপুরে নির্বিচারে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে প্রভাবশালী চক্র। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া এলাকা থেকে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হলেও এ অপতৎপরতা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর কারো চোখে পড়ছে না। স্থানীয় পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিদের অভিযোগ, কতিপয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র পাহাড় কেটে এসব মাটি পিকআপ গাড়িযোগে ইট ভাটায় সরবরাহ করছে বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী। প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগ না থাকার ফলে দ্বিগুণ উৎসাহে দিনেদুপুরে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে পাহাড় টিলা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী চক্র পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি ব্যবসায় নিয়োজিত থাকায় এলাকায় জনমনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হলেও ভয়ে কিছুই বলতে পারছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার দরিদ্র জনসাধারণ। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ৮নং ওয়ার্ড সদস্য হাবিব উল্লাহ কাউয়ারখোপের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া এলাকা থেকে নির্বিচারে পাহাড় কাটে মাটি বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, রামুতে অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে পাহাড় থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। রাজারকুলের দিকে কয়েকবার পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযানও চালানো হয়েছে। কাউয়ারখোপের কোন খবর এখনও পর্যন্ত পাননি। জনবল কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, খবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া এলাকায় একাধিক স্থানে চলছে বিরামহীন পাহাড় কাটা। ওই গ্রামে মকতুল হোসেন ও শামসুল আলম দীর্ঘদিন ধরে টিলাপাড়াস্থ পাহাড়ে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়টি মকতুল হোসেন ও শামসুল আলমের দখলে রয়েছে দাবি করে মকতুল হোছনের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে মেম্বার হাবিব উল্লাহ লোকজনদিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। তাদেরকে কোন টাকা পয়সাও দেয়নি হাবিব উল্লাহ মেম্বার। গত একমাস ধরে পাহাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ। পাহাড় কাটা কাজে নিয়োজিত রুবেল নামের এক শ্রমিক জানান, স্থানীয় মেম্বার হাবিব উল্লাহর নির্দেশেই পাহাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ নিজের বাড়ির পাশে ওই এলাকায় আরো একটি পাহাড় থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন বলেও স্থানিয়রা জানিয়েছেন। কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা এলাকার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন এলাকায় পাহাড় কাটা চললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণে পাহাড় কাটাকে কেউ অপরাধই মনে করছে না। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বর্তমানে মকতুল হোছনের বাড়ির পাশে যে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে সেটি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত। ইটভাটায় নেয়ার জন্য এলাকায় অনেকস্থানে বন বিভাগের পাহাড়ও কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মেম্বার হাবিবুল্লাহর ব্যাপারে আরো অভিযোগ আছে সাবেক এমপি ও রাষ্ট্রদূত মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ৩৬৩ খতিয়ার বেশ কিছু জমি জবর দখল করে আছে। এছাড়াও জিআর ৩৪/২০১৫ মামলায় পলাতক আসামিদের তালিকায় তার নামও আছে বলে জানা গেছে। তবে পাহাড় কাটার কথা অস্বীকার করে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য হাবিব উল্লাহ জানান, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা খর্ব করার জন্য প্রতিপক্ষের লোকজনই তার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান, সাংবাদিকের কাছে জেনে ইউনিয়ন পরিষদের এক দফদারকে খবর নেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলাম। ওই দফদার এসে জানিয়েছেন কাউয়ারখোপ এলাকার কোথাও পাহাড় কাটা হচ্ছে না। পাহাড় কাটার ব্যাপারে তিনি কোন ভাবেই জড়িত নন বলেও জানান। রামু থানা অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, ওই এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে এমন অভিযোগ পায়নি তিনি। পাহাড়কাটা গুরুতর অপরাধ, এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান। পাহাড় কাটা প্রসঙ্গে রামু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নিকারুজ্জামান বলেন, পাহাড় কাটা দ-নীয় অপরাধ। শুনেছি রামু উপজেলার কোথাও কোথাও পাহাড় কাটা হচ্ছে। রাজারকুলের ইউপি চেয়ারম্যানও জানিয়েছেন, তার এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। তবে কাউয়ারখোপে কোথাও পাহাড় কাটা হচ্ছে এমন কোন অভিযোগ সরাসরি এখন পর্যন্ত পাইনি। পাহাড় কাটা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর জানিয়ে পাহাড় কাটায় জড়িতদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।



 

Show all comments
  • Enamul Soikut ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:০৩ এএম says : 0
    .......গুলা পাহাড় হচ্ছে পৃথিবীর পেড়েক। যখন ভুমিকম্প, জলোচ্ছ্বাসে মরবি তখন বুঝবি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রামুর টিলাপাড়ায় নির্বিচারে পাহাড় কাটছে প্রভাবশালী চক্র
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ