পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতে বসবাস করছেন এবং তাদের কারণে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে। সেকারণেই, জাতীয় স্বার্থে ওই শরণার্থীদের তাদের নিজেদের দেশে, অর্থাৎ মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে চায় ভারত সরকার।
আগস্টের শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারের সা¤প্রতিকতম সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর ক্ষমতাসীন দল বি জে পি-র নেতারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের এই অবস্থানের কথা জানিয়ে আসছেন। ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বেশ অনেক বছর ধরেই আছেন।
যদিও তাদের সিংহভাগই অবৈধভাবে দেশে ঢুকেছে, কিন্তু এখনই কেন হঠাৎ করে সরকারের মনে হল যে, এই শরণার্থীদের থাকতে দিলে জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে আপোষ করা হবে?
’সাউথ এশিয়া টেররিজম’ পোর্টাল দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ করে। এই পোর্টালের পরিচালক অজয় সাহানী বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা যেখান থেকে এসেছেন, সেদেশে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কাজকর্মের কিছু নির্দিষ্ট তথ্য আছে ঠিকই কিন্তু তার কোনও বড়সড় প্রভাব ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপরে পড়েনি। যদিও পাকিস্তান-ভিত্তিক বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন রোহিঙ্গাদের ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে’।
যে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে বলে সরকার মনে করছে, তারা কারা?
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার পরিচয়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গা আছেন প্রায় ১৬ হাজার। এছাড়াও আরও প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে আটক আছেন দেশের বিভিন্ন জেলে। এছাড়াও একটা বড় অংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করে মিশে গেছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাদের অনেকেই থাকেন ভারত-শাসিত জম্মু-কাশ্মীরে। কেউ থাকেন দিল্লিতে শরণার্থী শিবিরে। আবার অনেকে বাস করেন হায়দ্রাবাদ, গুজরাট, মুম্বাইতে।
কায়িক পরিশ্রমের কাজ যেমন ময়লা পরিষ্কার থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা নারীদের কেউ কেউ যৌন পেশাতেও যুক্ত হয়েছেন বলে ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপরে একটি সা¤প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে।
ওই গবেষণাপত্রটি লিখেছেন কলকাতার রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ভারতের নিরাপত্তার জন্য কতো বড় ঝুঁকি? –এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতে যে সংখ্যায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন তারা সবাই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে, এটা অবাস্তব, অলীক কল্পনা। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঘুরে আমার সেরকমটাই মনে হয়েছে। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের মধ্যে দু একজনের হয়তো কিছুটা সহানুভূতি লক্ষ্য করেছি কোনও কোনও ইসলামী মৌলবাদী সংগঠনের প্রতি। কিন্তু তারা সকলেই জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত করে দিতে পারে, এমনটা কখনই মনে হয়নি,’ -বলছিলেন মি. বসু রায় চৌধুরী।
তিনি আরো বলছিলেন, ‘যে কোনও স¤প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই জঙ্গি যোগাযোগ থাকতেই পারে। রোহিঙ্গাদের মধ্যেও দু’চারজন গিয়ে থাকতে পারেন সেই পথে, কিছু মানুষকে বিভিন্ন ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন বিপথে পরিচালিত করে থাকতে পারে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে জাতিসংঘের মতে রোহিঙ্গারা হচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবথেকে বৃহৎ রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী, যারা এতোটা নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এই অবস্থায়, যাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাদের মধ্যে থেকে দু’চারজন বিভিন্ন ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর দিকে আকৃষ্ট হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু সবাইকেই সম্ভাব্য জঙ্গি বলে মনে করার পেছনে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ভাবনা আছে। রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় পরিচিতিই এই ভাবনার উৎস’।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অনিন্দ্যজ্যোতি মজুমদার বলছিলেন, পৃথিবীর সব দেশই চিরকাল এই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এসেছে যে, যাদের দেশে থাকতে দেওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়, তাদেরকেই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের পরিপন্থী বলে দেখানো হয়েছে।
‘ভারতের এই অবস্থানটা নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্র সবসময়েই নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে শরণার্থীদের সমস্যার বিচার করে। শরণার্থীরা তো নানা কারণে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়, কিন্তু আশ্রয়দাতা দেশ যদি তাদের অবাঞ্ছিত মনে করতে শুরু করে, হাত ধুয়ে ফেলতে চায়, তখনই এই জাতীয় নিরাপত্তা বা সুরক্ষার প্রসঙ্গটা তোলে। এক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। এর সঙ্গে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা না থাকাটা কিন্তু কোনভাবে জড়িয়ে নেই। সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়,’ বলছিলেন মি. মজুমদার।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শরণার্থী সমস্যার সমাধান করাটা অনেক ক্ষেত্রেই একে অপরের বিপরীতে অবস্থান করে। ভারত যদি এই শরণার্থীদের রাখতে চাইত, তাহলে কোনও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের কথা তুলতো না। তাদের রাখতে চায় না, মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চায় বলেই ভারত জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলছে।
অজয় সাহানী যদিও মনে করছেন যে, রোহিঙ্গারা ভারতের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে, এমনটা ভাবার সময় এখনও আসেনি। তবুও একটি বিষয়ে ভারতের চিন্তার উদ্রেক ঘটাতে পারে। সেটা হল ভারত-শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপস্থিতি।
‘যদিও রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এখনই নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই, তবুও এটা বলতে পারি যে, জম্মু-কাশ্মীরের মতো একটা জায়গা, যেখানে সবসময়ে সহিংসতা চলছে, অশান্তি চলছে, সেরকম জায়গায় রোহিঙ্গাদের রাখাটা বোধহয় অনুচিত। সেটা নিয়ে সরকার যদি চিন্তাভাবনা করত, তার একটা যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু এর বাইরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পেছনে কোনও যুক্তি আছে বলে মনে করি না। আর ফেরত পাঠাবেন কোথায়? কে নেবে রোহিঙ্গাদের? মিয়ানমার নেবে না। বাংলাদেশই বা কেন নেবে? তাহলে কোথায় ফেরত পাঠাবেন এদের?’ -প্রশ্ন মি. সাহানীর।
বিশ্লেষকরা এটাও বলছেন, ভারত যদি সরকারি অথবা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আরও বেশী সহানুভূতিশীল হতো, তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতো, তাহলে কিন্তু তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার যে চেষ্টা কিছু জঙ্গি সংগঠন করেছে, সেগুলোও অঙ্কুরেই বিনাশ করা সম্ভব হতো। সূত্র : বিবিসি বাংলা অনলাইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।