পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘বিশ্বে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হযেছে, বাংলাদেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত ১০ বছরে পুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ। এই সময়ে অবশ্য শিশু ও নারীর পুষ্টি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০০৪-০৬ সালে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ। এখন ২ কোটি ৪৪ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়লেও জনসংখ্যার অনুপাতে কমেছে যদিও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কমার এ প্রক্রিয়া শ্লথ। প্রতিবেদনে উঠে আসা এই তথ্য উদ্বেগজনক। বিগত এক দশকে দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। সরকারের ভাষায়, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এই সময়ে পুষ্টি পরিস্থিতির আরও উন্নতি হওয়া উচিৎ ছিল। মানসম্পন্ন খাদ্যের সহজ প্রাপ্যতার ওপর পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি বিশেষভাবে নির্ভর করে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলে খাদ্যের প্রাপ্যতার সমস্যা থাকার কথা নয়। তখন এই প্রশ্নটি ওঠে যে, প্রাপ্ত খাদ্য পুষ্টিমানসম্পন্ন কিনা। খাদ্যের সহজ প্রাপ্যতা ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যের যোগান নিশ্চিত হলেই যে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হবে এমন কথা হলপ করে বলা যায় না। এজন্য জনগণের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা থাকতে হবে। যদি জনগণের বৃহদাংশের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা না থাকে তাহলে খাদ্যের প্রাপ্যতা যতই থাক, তার পুষ্টিমান যতই বেশি হোক, তাতে কোনো লাভ নেই। বস্তুত, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে যেমন খাদ্যের পর্যাপ্ত সংস্থান থাকতে হবে, খাদ্য পুষ্টিমানসম্পন্ন হতে হবে, তেমনি সেই খাদ্য কেনার সামর্থও মানুষের থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা হলো, খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিশেষত খাদ্যের পুষ্টিমান সম্পর্কে জনগণপর্যায়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও সচেতনতা থাকতে হবে।
দেশে বছরে কম-বেশি সাড়ে ৩ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়। জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি বছরের খাদ্য চাহিদা ৩ কোটি ৬ লাখ টনের মতো। এর বাইরে গম, ভুট্টা ইত্যাদি দানাদার খাদ্যশষ্যেরও উৎপাদন হয়, যা একেবারে কম নয়। সব মিলে খাদ্যের একটি বিরাট উদ্বৃত্ত প্রতি বছর থাকার কথা। অথচ বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এবারের কথাই উল্লেখ করা যায়। এবার হাওর এলাকার ৬ জেলাসহ অন্তত ৩৬ জেলায় উপর্যুপরি বন্যায় ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির সাকুল্য পরিমাণ ২৫ লাখ টনের মতো। কিন্তু এতেই চালের দাম অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সরু চালের কেজি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, মাঝারি মানের চালের কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকা এবং মোটা চালের কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। চাল উদ্বৃত্ত থাকলে এবং সরকারি গুদামে যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুদ থাকলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। বাস্তবে দেখা গেছে, সরকারি গুদামে এ মুহূর্তে চালের মজুদ সাড়ে ৩ লাখ টনের বেশি নেই। বেসরকারি পর্যায়ে কী পরিমাণ চালের মজুদ আছে তারও হিসাব সরকারের কাছে নেই। এমতাবস্থায়, যা হওয়ার কথা তাই হচ্ছে- চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরকার বিলম্বে হলেও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং চালের আমদানিশুল্ক কমিয়েছে। এতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ইতেমধ্যে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং গত এক সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে কয়েক টাকা করে বেড়েছে। খাদ্য পরিস্থিতি এখন যা, তাতে পুষ্টি পরিস্থিতি আগামীতে আরও নাজুক হয়ে পড়তে পারে। স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি চালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে রীতিমত দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত তিন মাসে বাংলাদেশে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এই সময়ে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান- তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। খাবার পাওয়ার সুযোগ কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। এতে আরও বলা হয়েছে, গত এক মাসে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে এবং দামও কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮টি দেশে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এই ৮টি দেশের মধ্যে এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে শ্রীলংকা। বাকী দেশগুলো আফ্রিকার। এই দেশগুলো হলো: দক্ষিণ সুদান, নাইজার, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও বুরুন্ডি। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে খাদ্য পরিস্থিতির আরও অবনতি প্রায় অবধারিত। একে তো চাল উৎপাদন বড় রকমে মার খেয়েছে, তদুপরি ফসল হারানো লাখ লাখ কৃষক ও তাদের পরিবার রীতিমত নিরালম্ব হয়ে পড়েছে। অন্তত আগামী তিন মাস তাদের জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরও খাদ্য যোগাতে হবে। অথচ খাদ্যের সংকট প্রকট। চালের দাম আকাশচুম্বী। চাল আমদানির ব্যাপারেও আশাবাদী হওয়ার মত খবর নেই। ফলে একটি মানবিক দুর্ঘট সৃষ্টির আশঙ্কা মোটেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। সরকারকে এ ব্যাপারে আরও তৎপর হতে হবে। যে কোনো ব্যবস্থায় খাদ্য মজুদ বাড়াতে হবে। মিলার ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করতে হবে। চালের দাম জনগণের ক্রয় সক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। কোটি কোটি মানুষকে খাদ্য সংকটের মধ্যে রেখে, খাদ্য ক্রয়ের অক্ষমতার মধ্যে রেখে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।