নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
খুব পরিষ্কারভাবেই কথাটা বললেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারানোর বিশ্বাসটা না থাকলে মহা মুশকিল। সা¤প্রতিক কালে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে বাংলাদেশ হারিয়েছে সেই ‘বিশ্বাস’ থেকেই। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুই বছর আগে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে হারানোর সুখস্মৃতিটা কিন্তু এবার মুশফিকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্য রকম কিছু করারই। সেই ‘অন্য রকম কিছু’টা হলো জয়। দক্ষিণ আফ্রিকা রওনা হওয়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করেন, এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো সম্ভব, তাদের মাটিতেও। উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন? হতে পারে। তবে অনেকের দৃষ্টিতেই ‘কঠিন’ এই সফরে মুশফিক কিন্তু জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেনই না।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্বপ্নই দেখতে বলছেন অধিনায়ক, ‘অনেকেই বলবেন, আমাদের কোনো সুযোগই নেই। কিন্তু আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। এটাকে উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন বলতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমরা হারাতে পারি, এই বিশ্বাসটা আমাদের থাকতেই হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড ধর্তব্যে নিলে মুশফিকের স্বপ্নটা উচ্চাভিলাষী মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় কেবল দুটি দ্বিপক্ষীয় সফর করেছে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে প্রথমবার, এরপর ২০০৮ সালে। মাঝে অংশ নিয়েছে ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এই চার সফরের ফলাফল কিন্তু ভয় ধরিয়ে দিতেই পারে। সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত হতে হবে টেস্ট ম্যাচগুলোর ফলের দিকে তাকিয়ে। তবে মুশফিককে সাহস জোগাচ্ছে সা¤প্রতিক কালে বাংলাদেশের সাফল্যই, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আমাদের ভালো রেকর্ড নেই। আমাদের খুব কম খেলোয়াড়ই আছে, যারা দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে খেলেছে। ওটা এমনই একটা জায়গা, যেখানে অনেক দলই খারাপ খেলে। আমাদের জন্যও ওখানে খেলাটা কঠিন হতে পারে, তবে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব। বাংলাদেশ যে কয়বার দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছে, সে তুলনায় বাংলাদেশ অবশ্যই এবার অনেক ভালো করবে। যেহেতু বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত দল; আমরা যদি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে মনে করি, একটা দল হিসেবে আমাদের ভালো করার সুযোগ আছে।’
সাকিব আল হাসানকে বড্ড মিস করবেন মুশফিক। অকপটেই জানিয়েছেন সেটি, ‘সাকিবের জায়গায় দুইটা প্লেয়ারকে খেলাতে হয়, এটা বাস্তবতা। একটা বোলার, একটা ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক হিসেবে ওর মতো খেলোয়াড়ের অভাব অনুভব করবই।’
কিন্তু সাকিবকে ছাড়া খেলার একটা সুবিধাও দেখছেন মুশফিক, ‘সাকিবকে ছাড়া খেললে বোঝা যাবে, ওর মতো একজন খেলোয়াড় ছাড়া আমরা কেমন খেলি। ওর জায়গায় যে খেলোয়াড়েরা খেলবে, এটি তাদের জন্যও বড় সুযোগ। সেই সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত তাদের।’
সাকিব আল হাসানের বিশ্রাম নিয়ে অনেক কথাবার্তা, আলোচনা-সমালোচনা। সাকিব যদি বিশ্রামে যান, তাহলে বিশ্রাম চাইতেই পারেন তামিম ইকবাল কিংবা মুশফিকুরা। কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রসিকতা করেই বলেছেন, ‘আমি এত বড় খেলোয়াড় হইনি যে আমাকে বিশ্রাম নিতে হবে।’
সাকিবের বিশ্রামে যাওয়াটা অধিনায়ক হিসেবে তাঁর জন্য যে বড় ধাক্কা, সেটা স্বীকার করেছেন অকপটেই। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যেহেতু সাকিবের একান্ত নিজের, তাই এটিকে সম্মান জানান তিনি, ‘সাকিব থাকলে সেটা যেকোনো অধিনায়কের জন্যই প্লাস পয়েন্ট। ওকে অনেক মিস করব। তবে সাকিবের বিশ্রামটা যেন ঠিকঠাক হয়। ফ্রেশ হয়ে সে আবার আগের রূপে ফিরে আসবে, এটাই আশা করি।’
সংবাদ সম্মেলন শেষ ভেবে সবাই যখন উঠে যাচ্ছিলেন তখন একটি কথায় আবারও থমকে দাঁড়াতে হলো- ‘আমার একটা অনুরোধ আছে’- মুশফিকের এই কথায় আবারও পিনপতন নীরবতা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে কী অনুরোধ বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের?
ধারাবাহিক কোনো খেলোয়াড় ব্যর্থ হলেই চারদিকে সমালোচনা হয় এন্তার। কেন তিনি দলে, কান পাতলেই শোনা যায় এমন প্রশ্ন। এখন যেটা হচ্ছে সৌম্য সরকার-ইমরুল কায়েসকে নিয়ে। মুশফিকের কথা, খারাপ সময় একজন খেলোয়াড়ের যেতেই পারে। এটি নিয়েই বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের তাই অনুরোধ, ‘সব খেলোয়াড়ই চায় ভালো খেলতে। খেলোয়াড়দের নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে, এটা সমস্যা নয়। তবে অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা করবেন না, যাতে ওদের স্বচ্ছন্দের জায়গা থেকে ওরা বেরিয়ে আসে। ওরা যদি ভালো না করতে পারে ক্ষতিটা বাংলাদেশ দলেরই। এখন যারা খেলছে, তাদের বদলি পেতেও অনেক সময় লাগবে। এখন বছরের নয় মাসই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হয়। এত বিশ্লেষণ করে প্রতিপক্ষ, ধারাবাহিক ভালো খেলাটাও কঠিন। ওরা যদি খারাপও করে আশপাশের মানুষগুলোর সমর্থন পেলে সাহস পাবে রানে ফেরার।’
গত কিছুদিনে সমালোচনা হয়েছে মুশফিককে নিয়েও। এই সমালোচনাটা করেছেন স্বয়ং বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান। বিসিবি সভাপতি অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পরই মন্তব্য করেছেন মুশফিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে। বিসিবি-প্রধানের মন্তব্যে যে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক বেশ কষ্ট পেয়েছেন তা বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশ এত ধারাবাহিক টেস্টে কখনোই ছিল না। হয়তো তাদের চাহিদা আরও বেশি। তারা হয়তো ভাবছে বাংলাদেশে দল আরও ভালো করার সামর্থ্য আছে। চেষ্টা থাকবে যেটা চাইছে, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি। এখানে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। আপনি যে জিনিসটা এত সততার সঙ্গে করছেন, সেটা নিয়ে কথা উঠলে তো খারাপ লাগবেই। আমার মনে হয় সমালোচনা যেকোনো সময়ই হতে পারে, সেটা সামলে নেওয়ায়ই ক্রিকেটারদের জীবন। আমি সে চেষ্টাই করি।’
শুধু অধিনায়কত্ব কেন, প্রশ্ন উঠেছে মুশফিকের কিপিং নিয়েও। শোনা যাচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাঁকে হয়তো খেলতে হতে পারে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে। এটি নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই মুশফিক। বললেন সেই পুরোনো কথাটাই, ‘টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব। সামনে আমাদের একটা তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। ওখানে কন্ডিশন দেখে যদি মনে হয় আমার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললে ভালো হবে তাহলে সেটাই হবে। যদি তারা (টিম ম্যানেজমেন্ট) মনে করে আমি একজন ব্যাটসম্যান-কিপার হিসেবে খেললে ভালো হবে তাহলে সেভাবেই খেলব। আমাকে দলের জন্য যেটা করতে বলবে সেটাই করব।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।