Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলনবিলবাসীর উন্নয়নে বদলে গেছে জনপদ

| প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : দেশের বৃহত্তম বিল খ্যাত চলনবিলের অবহেলিত গ্রাম বিলসা ও রুহাই। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা জুড়ে এ বিলের পরিধি। বর্ষার এ সময়ে গ্রামগুলো দ্বীপের মত জেগে আছে। গ্রীষ্মকাল এলেই মাটি রোদে ফেটে গিয়ে খাঁ-খাঁ করে। শত বছরের বঞ্চনা বুকে ধারন করে গ্রামগুলোর ভৌগলিক অবস্থান নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সীমান্তজুড়ে। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে ‘বর্ষায় নাও আর মেহন্তে পা’-নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আটকে ছিল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা ও রুহাই গ্রাম। চলনবিলের মাঝে বিলসায় নির্মিত হয়েছে ১৭৫ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজ। সেই সাথে সংস্কার করা হয়েছে রুহাই থেকে বিলসা, বিলসা থেকে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় পর্যন্ত সাড়ে ১০ কি.মি. দীর্ঘ একটি পাকা সড়ক। এখন রুহাই থেকে রাজাপুর (উপজেলার শেষ সীমা) পর্যন্ত উম্মোচিত হয়েছে আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এজন্য ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি টাকা।
এতে করে পিছিয়ে পড়া রুহাই, বিলসা, খুবজীপুর, সিংড়া উপজেলার বেড়াবাড়ি, ইটালি এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল, বারুহাস, তাড়াশ সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এখন বর্ষাকালেও দেশের আভ্যন্তরিন জেলার মানুষের জন্য পরিবহন সুবিধা গড়ে উঠেছে। সেই সাথে বিল জনপদের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্র বদলে গেছে। বিশেষ করে চলনবিলের মাঝে বিলসায় ‘মা-জননী সেতু’ এবং পাকা সড়ক তৈরির কারনে বর্ষার সময় তৈরি হয়েছে মানুষের বিনোদনের পরিবেশ। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নানা শ্রেণি পেশার মানুষ সেখানে জমাট বাঁধে চলনবিলকে উপভোগ করতে। চলনবিলের বিলসা গ্রামের কৃতি সন্তান, নাটোর জেলা আ.লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের অক্লান্ত চেষ্টায় চলনবিলের বুকচিরে ১৬ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। যা শত বছরের পর বছর ইতিহাস হয়ে বহন করবে উন্নয়নের এক মাইলফলক।
নাটোর নির্বাহী প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, গুরুদাসপুর-তাড়াশ মৈত্রী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় থেকে উপজেলার রুহাই সীমানা পর্যন্ত সাড়ে ১০ কি.মি. সড়কের মধ্যে ৩কি.মি. সাবর্মাচেবল (ডুবো সড়ক)। সড়কটি ওয়াটার লেবেল ৪মিটার উঁচু করা হয়েছে। ভরা বর্ষায় চলনবিলের উত্তাল ঢেউয়ে সড়কটি যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য সড়কের উভয় পাশে নেট ও বাঁধ দিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর সাড়ে ১০ কি.মি. সড়ক ও দুই লেন বিশিষ্ট ১৭৫ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু। এতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সড়কের জন্য ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং ৬ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় ব্রীজ নির্মানে। স্থানীয় মেসার্স আনোয়ার ট্রেডার্স ও সরকার কন্সট্রাকশন নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই প্রকল্পের কাজগুলো বাস্তবায়ন করে।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রতন কুমার ফৌজদার জানান, চলনবিলের কৃষি ও কৃষকের পরিবহন ব্যবস্থা বিবেচনায় বিলসায় আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মান করা হয়। ছয় স্প্যান বিশিষ্ট ১৭৫ মিটার দীর্ঘ ও ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের ওই ব্রীজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একই সাথে গরু/মহিষের গাড়িসহ বাস-ট্রাক চলাচল করতে পারবে। সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, চলনবিলের অবহেলিত মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করে প্রকল্পটির বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। সর্বত্র সভ্যতার ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়লেও চলনবিলের ওই এলাকার মানুষ পিছিয়ে ছিল। আর যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে কৃষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। সেসব বিবেচনা করেই বিশাল ওই উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নেওয়া হয়েছিল। এখন তা বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনপদ

১ ডিসেম্বর, ২০২০
৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ