Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসছে নির্বাচন আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা

চলতি মাসের শেষে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৩৭ এএম

 চিকিৎসার জন্য এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসা শেষে চলতি মাসের শেষেই দেশে ফিরছেন তিনি। তার এই সফরকে ঘিরে শুরু থেকেই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে ব্যপক আগ্রহ এবং রাজনৈতিক মহলে চলছে জল্পনা-কল্পনা। কারণ বিএনপি প্রধানের এই সফরের মাধ্যমে আসতে পারে আগামী নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা এবং আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এজন্য বেগম খালেদা জিয়ার ফিরে আসার দিকেই তাকিয়ে আছেন বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সফরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির নীতি-নির্ধারকরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না বলে প্রচার করলেও তারা চান খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর যেন পারিবারিক সফরের ভেতরই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যদিকে বিএনপিও সফরের বিষয়ে বিস্তারিত কোন কিছুই জানাচ্ছে না। তারাও বলছে পারিবারিক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণেই এই সফর। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরই এ বিষয়ে বলা যাবে।

তবে বিএনপি সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসর জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন গেলেও তাঁর এই সফরেই হবে দলটির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত। সফরের মধ্যে নির্ধারণ হবে আগামী নির্বাচনের সহায়ক সরকারের রূপরেখা ও প্রয়োজনে আন্দোলনের রোডম্যাপ। দেশে ফিরেই তিনি জাতির সামনে সহায়ক সরকারের ফর্মুলা দেয়া ছাড়াও নির্বাচন বিষয়ে অনেক কিছু খোলাসা করবেন। এছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্তসহ তাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে মাঠে নামার গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হতে পারে। এজন্য বিভিন্ন জরিপের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকাও খালেদা জিয়া সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। লন্ডনে ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনটি, উপদেষ্টা পরিষদের একটি, যুববিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকসহ বেশ কয়েকটি শূন্যপদ পূরণ এবং দল পুনর্গঠন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তৃণমূল চাঙ্গা করতে দ্রæতই বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবেন বিএনপি প্রধান।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চেয়ারপারসন এক মুহূর্তের জন্যও দেশের বাইরে অবস্থান করতে চান না। চিকিৎসা শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। তিনি বলেন, দেশে ফিরে যথাসময়ে তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন।
সূত্র জানায়, লন্ডন সফরকালে খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া, এতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর ব্যাপারে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবার একঝাঁক তরুণ নেতা মনোনয়নযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। ৩০০ সংসদীয় আসনে নবীনসহ সহ¯্রাধিক নেতা-কর্মী এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী। সবাই লন্ডন থেকে নতুন বার্তার অপেক্ষায়। দলীয় টিকিট পেতে অনেকেই এরই মধ্যে লন্ডনে দৌড়ঝাঁপের চেষ্টাও করেন। তবে কেউই সফল হননি। নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীর খসড়া তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। তবে তালিকা যাই হোক, পরবর্তীতে পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে কিছু প্রার্থী পরিবর্তনও হতে পারে। এদিকে লন্ডনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্মানে সুধী সমাবেশে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে বেগম জিয়ার। সেখানে তারেক রহমানও অংশ নেবেন। যদিও এই তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, দেশে ফিরে সরকারবিরোধী জনমত তৈরিতে রাজপথে নামবে দলটি। লন্ডন থেকে দেশে ফিরে বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশ করতে পারেন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শও নেয়া হবে। তবে একটি সূত্র জানায়, তারেক রহমানই চাচ্ছেন চেয়ারপারসন রাজপথে সক্রিয় হোক। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবেন, যা আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে মাঠে দলটির ভোটের যে শক্তি রয়েছে সেটাই সরকারের জন্য বড় আতঙ্কের বিষয়। তাই আন্দোলনের নামে কোনো ঝামেলায় না গিয়ে নির্বাচনের তফসিল পর্যন্ত আরও শক্তি সঞ্চয় করার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চিকিৎসা শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন কখনই দেশের বাইরে থাকেন না। তবে কবে ফিরবেন সে বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না বলে জানান। খালেদা জিয়া দেশে ফিরে নির্বাচনকালীন সরকার ও আন্দোলনের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে সকলের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবেন। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে সকলকেই জানানো হবে।
এদিকে বেগম জিয়ার দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসনের ফেরার সময় নেতাকর্মীদের ব্যপক সমাগমের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানোরও প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। বিশাল শোডাউন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাপক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। খালেদার সংবর্ধনার দিন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ঢাকাকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করতে চায়। পাশাপাশি বিমানবন্দরেও দলীয় নেতাকর্মীর ব্যাপক সমাগম ঘটাবে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, বেগম জিয়া দেশে ফিরবেন না আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া জবাব দিতে ও দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতেই মূলত এ শোডাউনের আয়োজন করা হচ্ছে।
গত ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। পরদিন বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। লন্ডন পৌঁছার পর থেকে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সেখানে অনেকটা একান্তেই পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন। দেড় মাসের মতো সেখানে অবস্থান করলেও এখন পর্যন্ত একদিনই প্রকাশ্যে এসেছেন। আগস্টের শুরুর দিকে লন্ডনে একটি সুপার শপে ছেলে তারেক রহমান এবং পুত্রবধূ জোবাইদা রহমানের সঙ্গে তাকে বই কিনতে দেখা গেছে। এছাড়া তাকে কোথাও দেখা যায়নি। ৮ আগস্ট লন্ডনের মনফিল্ড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চোখে অস্ত্রোপচার হয়। চোখ ও হাঁটুর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে দেশে ফেরার কথা তার। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা করাতে লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ওই সময় প্রায় দুই মাসের বেশি সময় তিনি সেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটান। দীর্ঘদিন পর ঈদুল আজহা উদযাপন করে ওই বছর ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। ##



 

Show all comments
  • Shuvo Sarkar ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:৫৭ পিএম says : 0
    ১৪ নিরর্বাচনের পরে থেকেই তো শুনছি আন্দোলন শুরু করবে আর কবে করবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ