পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উদ্বাস্তুদের বেঁচে থাকার আশা জাগানো প্রধানমন্ত্রীর সফরের রেশ
ওরা বনিআদম। ওরা নিরীহ। ওরা মুসলমান। ওরা হাজার বছর ধরে মিয়ানমারের (বার্মা) নাগরিক, রাখাইন (আরাকান) রাজ্যের আদিবাসী রোহিঙ্গা। বর্মী সেনাবাহিনীর বর্বর দমনাভিযানের মুখে জন্মভূমিতে টিকতে না পেরে চৌদ্দ পুরুষের ভিটে-মাটি জমি-জিরাত এবং আগুনে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়িঘর সহায়-সম্বল সবকিছুই পেছনে ফেলে পালিয়ে এসেছে। অনেকেই পরিবার-পরিজন হারিয়ে শুধুই জীবন আর মহিলারা ইজ্জত-আব্রুটুকু বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে এক ভিনদেশ- বাংলাদেশে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসা তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধ এখন ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও আশ্রয়হারা। এদের মধ্যে হাজারো রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ, আগুনে পোড়াসহ বিভিন্ন রোগ-জরায় অসুস্থ। শিশুরা চরম অপুষ্টিতে কাহিল। সেই ভাগ্যাহত রোহিঙ্গাদের পাশেই একটানা তিনটি দিন অতিবাহিত করলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চিরায়ত ও সহজাত মানবতাবোধের মায়া-সহমর্মিতার তাগিদ থেকেই তিনি ছুটে গেছেন কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্ত সংলগ্ন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ক্যাম্পগুলোতে। সেখানকার পথে-প্রান্তরে। এদিকে অসহায় রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মাঝে বেঁচে থাকার আশা জাগিয়ে তোলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত মঙ্গলবারের সেই সফরের রেশ রয়ে গেছে বিপন্ন লাখো বর্মী মুসলমানের মনে। আর অতীতের মতোই তাদের প্রতি মানবিক সহায়তার উদার হাত বাড়িয়ে দেয়া সমগ্র কক্সবাজারের জনগণের মাঝে।
গতকালও (বুধবার) মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উখিয়ায় রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মাঝে তৃতীয় দিনের মতো খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ হরেক ত্রাণ সাহায্য সামগ্রী এবং নগদ আর্থিক সহায়তাও বিতরণ করেন। বিপন্ন মানুষদের হাতে ত্রাণ সহায়তা তুলে দিয়ে তিনি আশ্বস্ত করেন, তারা মিয়ানমারে স্বদেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ওদের দুঃখ-দুর্দশায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে পাশে থাকবে। সরকারের সিনিয়র একজন মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে বর্মী রোহিঙ্গারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদেরকে হাত তুলে দোয়া করতেও দেখা যায়। রোহিঙ্গারা স্বদেশে বর্বর বর্মী বাহিনীর হাতে নিপীড়িত হওয়ার কথা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে বাংলাদেশ সরকারের সহমর্মিতা ও সদয় আচরণ রোহিঙ্গাদের মনে কিছুটা হলেও বেঁচে থাকার আশাকে জাগরুক করছে। সেই সাথে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী, স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা।
গত সোমবার দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-এমপি, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। মাঝখানে গত মঙ্গলবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। গতকাল পর্যন্ত তিন দিন যাবত ত্রাণ সহায়তা বিতরণের পাশাপাশি তিনি সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সরেজমিনে খোঁজ-খবর নেন। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু সমন্বয় ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। ওবায়দুল কাদের স্থানীয় প্রশাসন, সাহায্য কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রতি মানবিক আচরণের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি উদ্বাস্তুদের এ মুহূর্তে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, সুচিকিৎসা ও ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় এবং সুষ্ঠুভাবে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য, মন্ত্রীবর্গকে নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় ত্রাণ বিতরণকালে অসহায় রোহিঙ্গাদের প্রতি সকলকে সবসময়ই মানবিক ও সদয় আচরণের আহ্বান জানান। পরে ঐদিনই প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার সার্কিট হাউসে জনপ্রতিনিধি, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, স্থানীয় নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত এক সভায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ সমগ্র কার্যক্রম সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে পরামর্শসহ সুষ্ঠু সমন্বয়ের বিষয়ে নিবিড় দেখভাল করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়। শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী এ সফরকালে রোগাক্রান্ত ও বাবা-মা হারা শিশু-কিশোর-কিশোরী, স্বামী-সন্তান হারা মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ তাদের প্রতি বিশেষভাবে সহানুভূতিশীল থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশ দেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে কক্সবাজার থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে আসেন। তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিবেশী দেশ ভারত সরকারের তরফ থেকে প্রেরিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের না খেয়ে থাকতে হবে না
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের না খেয়ে থাকতে হবে না। এটাই আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার। র্দীঘ ২০দিন পর রোহিঙ্গাদের জন্য বিএনপির ত্রাণ বিতরণ নিছক মায়াকান্না ও প্রতারণা ছাড়া কিছু নয় বলে উল্লেখ করেন।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামিম, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, উখিয়া-টেকনাফ সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মঙ্গলবার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।