Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

রাজধানীতে বৃষ্টি ও যানজটে ভোগান্তি

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বৃষ্টির পানি ঢেউ খেলছে। শহরের এঁকে বেঁকে যাওয়া রাস্তাগুলো যেন প্রভাহমান নদী। আর এ নদীতে বাসগুলো যেন ছোট ছোট লঞ্চ। থেমে থেমে বৃষ্টি হতে থাকে রোববার রাত থেকেই, সোমবার সকালে তুমুল বর্ষণ শুরুর পর ঢাকা শহরের একেকটি রাস্তা যেন এককেটি নদী হয়ে যায়। এ অবস্থায় অফিসগামী যাত্রীদের নাকাল হতে হয়েছে দিনের শুরুতেই।
গতকাল সোমবার সকালের এই ভারি বৃষ্টিতে পানি জমার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের ভোগান্তিও পোহাতে হয় রাজধানবাসীকে। বিকাল নাগাদ অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে গেলেও যানজটও ছিল প্রায় সবখানে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সকালে তিন ঘণ্টায় ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। চলতি মৌসুমে এ নিয়ে পাঁচবার ভারি বর্ষণ দেখল রাজধানীবাসী। এসময় পানিবদ্ধতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগও ছিল চরমে। সোমবারের আগে সর্বশেষ ৩ অগাস্ট রাজধানীতে তিন ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয় বৃষ্টিপাত। প্রবল বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তির। সকাল থেকেই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিস আদালত যাওয়া মানুষসহ নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। রাস্তায় নেমেই নগরবাসীকে বৃষ্টিতে কাকভেজা হতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কোথয়ও যানবাহনও ছিল কম আবার কোথায়ও ছিল দীর্ঘ যানজট। বৃষ্টির কারণে রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ায় রিকশা ও অটোরিশার চালকরাও যাত্রিদের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে আদায় করেছে অতিরিক্ত ভাড়া।
বৃষ্টিতে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় মিরপুর থেকে ফার্মগেটে যাওয়ার পথে ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সায়মা আক্তার। তিনি সাধারণত বাসেই চলাচল করেন, তবে বৃষ্টির কারণে প্রতি বাসে উপচেপড়া ভিড়। এ ভিড় ঠেলে উঠতে পারেননি তিনি। অগত্যা তিনগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশায় ফার্মগেইটের পথ ধরেন। বৃষ্টি হলেই বাসে জায়গা পাওয়া যায় না। আর এ সুযোগে রিকশাওয়ালারা দাম বাড়িয়ে দেন বলে জানান সায়মা। নিউ মার্কেট ও পিলখানার বিডিআর গেইট এলাকায় প্রায় কোমর পানি জমার কথা জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, নীলক্ষেতে থেকে বিজিবি গেইট পর্যন্ত কোমর পরিমাণ পানি। নিউ মার্কেটের ভেতরেও পানি ঢুকছে। যানবাহনের অভাবে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে চড়ে রমনার পুলিশ কনভেনশন হলে যাওয়ার কথা জানান ফজলুর। দুইবার রিকশা পরিবর্তন করে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনের অফিসে যান এটুআই কর্মকর্তা নাজমুল আলম। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে পশ্চিম রাজাবাজার, পূর্ব রাজাবাজার ও ইন্দিরা রোডের বিভিন্ন সড়কে পানিবদ্ধতা তৈরি হয়। জাতীয় সংসদ এলাকার পূর্বদিকের সড়কের একটি অংশেও পানিবদ্ধ হয়। রাস্তায় পানি জমে থাকায় মিরপুর রোড, মগবাজার থেকে মহাখালীগামী সড়ক, ডিআইটি রোড ও প্রগতি সরণিতে যানজট সৃষ্টি হয়।
ট্রাফিক ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, মৎস্য ভবনের সামনে, শাহবাগ, বেইলি রোড, শান্তিনগর, আজিমপুর চৌরাস্তা, আজিমপুর, নাজিম উদ্দিন রোড এসময় এলাকায় পানি ছিল। যে কারণে গাড়ির গতি শ্লথ। তবে একেবারে থেমে থাকেনি।
একটু বৃষ্টি হলেই রাজপথ থেকে গলিপথ পানিতে থৈ থে করে। এতে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগে পড়ত হয়। যানজট ও পানিবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। নগরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোন সংস্কার না করা এবং কোন কোন এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে ডুবে যায়। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে নেই কাজের সমন্বয়। এ কারণেই যতো দুর্ভোগ নগরবাসীর।
গতকাল সোমবার সকালে সরেজমি দেখা গেছে, খোদ বঙ্গভবনের সামনের রাস্তাটি যেন একটি ছোটখাট নদী। আর এ নদীতে উত্থাল পাত্থাল ঢেউ খেলছে পানি। এসময় বেশ কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় পানি ঢুকে বিকল হয়ে যেতে দেখা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ অফিসের সামেন খিলগাঁও তিলপাপাড়া সড়কটিতে অতীতে কখনো পানি জমেনি। কিন্তু গতকালের বৃষ্টিতে সড়কটি পরিণত হয়েছে ভরা জোয়ার সম্পন্ন একটি ছোট নদীতে। একই অবস্থা রাজধানীর ফরিকরাপুল, আরামবাগ, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, আগারগাঁও, মিরপুর, গুলশানসহ পুরো নগরী। এসব এলাকায় ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর নেই। ফলে বৃষ্টির পানি জমে থাকলেও সরে যাওয়ার কোন পথ থাকে না। তাই দিনের পর দিন হাঁটু পানিতেই চলাচল করতে হয় ওই এলাকার মানুষকে। সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তায় পানি জমে চিরাচরিত দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অফিসগামী মানুষদের। অল্প বৃষ্টিতে নগরীতে পানিবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও সমাধানের অংক শূন্য!
কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় সকালের বৃষ্টিতে সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে। হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। পানিবদ্ধাতায় অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
অল্প বৃষ্টিতে মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ করেন দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা।
নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেককে অফিস ও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা।
বৃষ্টিতে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্টান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়। অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কের উপর পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। রাজধানীর পানিবদ্ধতার কারণ হিসেবে ওয়াসার ড্রেন ও নগরীর খালগুলো দখলকেই দায়ী করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। এ বিষয়ে বিআইডাবিউটিএ’র সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, পবার নির্বাহী সদস্য ও নগর বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে ঢাকার প্রায় ৬৭টি খালের মধ্যে আমরা ২৬ খালই বেদখল। বাকি খালগুলোর অবস্থা ব্যহাল। এগুলো উদ্ধারে উল্লেখ যোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। ওয়াসার কর্মকর্তাদের যোগসাজসেই প্রভাবশালীরা খালগুলো দখলে মরিয়া। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ