পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অক্টোবরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর ১৬ বছর পূর্ণ হবে। এটি এমন বার্ষিকী নয় যে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা তা উদযাপন করবে। বুশ প্রশাসনের আমলে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে ৯/১১ হামলার প্রেক্ষিতে যে আফগান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা উপর্যুপরি তৃতীয় প্রেসিডেন্টের আমলে গড়িয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগান যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং গত বছর তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানেও তা দেখা গেছে। আফগান যুদ্ধ সরকার ও তালিবানের মধ্যে গৃহযুদ্ধের পর্যায়ে রয়েছে এবং ট্রাম্প নিজেকে এর মধ্যে দেখতে অনাগ্রহী ছিলেন।
বিশ^পর্যায়ে অধিকাংশ সমস্যার মত কিছু সহজ জবাব ও দ্রæত নির্ধারণ করার মত কিছু সমস্যাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ রকম কিছু থেকে থাকলে ট্রাম্পের কোনো পূর্বসূরী ইতোমধ্যে তার সমাধানও করে গিয়ে থাকতে পারেন। যে সব সমস্যার সমাধান হয়নি বা ঝুলে আছে সেগুলো এখন এসে পড়েছে বিলিওনেয়ার প্রেসিডেন্টের কাঁধে। এ হবে এক চ্যালেঞ্জ। গত কয়েকমাস ধরে ট্রাম্পের সঙ্গী এ সব বিরোধের পশ্চাৎপটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তা কিছু পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি করেছে।
বোস্টন বিশ^বিদ্যালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী মার্কিন কংগ্রেস আফগানিস্তান যুদ্ধের জন্য ৭৮৩ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে। এটা করা হয়েছে ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অর্থ বছরগুলোতে বৈদেশিক আপৎকালীন কার্যক্রম আখ্যা দিয়ে। এ অর্থের পরিমাণ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দের বেশী, যার অর্থ আফগানিস্তান বিষয়ক ব্যয়ের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ডলারকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ৭৮৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে আফগানিস্তানে ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রমে মাত্র ১৫ শতাংশ (১১৭ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় হয়েছে। যুদ্ধ ব্যয়সাপেক্ষ নয়Ñ এ কথা বলার জন্য এটা বলা হচ্ছে না, কিন্তু এ পরিমাণ অর্থ আফগানিস্তানে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সমাজ পুনর্গঠনে পর্যাপ্ত নয় এবং তা ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
বস্তুগত ক্ষতি ছাড়াও আফগান যুদ্ধে প্রাণহানির ক্ষতিও ইল্লেখযোগ্য। ব্রাউন বিশ^বিদ্যালয়ের যুদ্ধ ক্ষতি প্রকল্প প্রদর্শিত তথ্যে দেখা যায়, ২০০১ সাল থেকে ৩১ হাজার বেসামরিক আফগান নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৪০ হাজার। এটা এক ধরনের রক্ষণশীল হিসাব। এর বাইরে ২০০১ সাল থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সাড়ে ৩ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে। তবে সৈন্য প্রত্যাহারের কারণে ২০১৩ সাল থেকে সৈন্য নিহতের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
অবশ্য কিছু সাফল্যের ব্যাপারও আছে। ২০১৭ সালে লাখ লাখ বালিকা ও কিশোরী শিক্ষা গ্রহণ করছে। অথচ তালিবান আমলে তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। তবে এ সাফল্য খুব বেশি কিছু নয় এবং এর মূল্য খুবই চড়া।
একটি প্রভাবশালী ও নির্দলীয় আমেরিকান থিংকট্যাংক দি কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর হিসাব যে আফগান সরকার বর্তমানে দেশের মাত্র ৬০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। ৩০ শতাংশ এলাকা তালিবান ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের দখলে। আফগানিস্তানের ইতিহাসের সাথে যাদের কিছু পরিচয় আছে, বিশেষ করে ব্রিটিশ ও সোভিয়েত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস, তাদের কাছে এটা এক ধরনের সমাধান বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তা নয়। ব্রিটিশরা আফগানিস্তানে অল্প কিছু সময়ের জন্য ছিল (দু’বার)। সোভিয়েতরা ছিল প্রায় এক দশক। সেখানে মার্কিন সম্পৃক্ততা এখন ১৬ বছরে প্রবেশ করল। এখন প্রতিষ্ঠিত ধারণা হচ্ছে, আফগানিস্তান হচ্ছে সা¤্রাজ্যবাদের গোরস্তান।
বিশ্লেষকরা যে বিষয়ে উদ্বিগ্ন তাহল মার্কিন জোট ও আফগান সরকারগুলোর অর্জিত সাফল্য উল্টে যেতে পারে। যদি বিদেশী সৈন্যরা হঠাৎ করে আফগানিস্তান ছাড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারকে আর্থিক সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে আফগান সরকার দেশকে তালিবান দখলে যাওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হবে। কাবুলে সরকার বাইরের সব প্রদেশ থেকে অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আফগান সমাজ কাঠামো যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বের দাবি রাখে এবং উপজাতীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য আফগান কর্তৃপক্সের জন্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা কঠিন করে তুলেছে। তালিবান ছিল বর্বর, কিন্তু তারা দেশব্যাপী তাদের শাসন ও উপস্থিতি কার্যকর ভাবে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অসম্ভব সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হয়েছেনঃ যুদ্ধ অব্যাহত রাখা অথবা ধীরে ধীরে বিপর্যয়ের শেষ পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আরেকটি পথ হল যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে আনা। তা করা হলে উগ্রপন্থীরা আফগানিস্তানকে দখল করবে এবং সম্ভবত আরেকটি সন্ত্রাসীদের স্বর্গভূমি প্রতিষ্ঠা করবে যার উৎপাটন করাই ছিল ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে হামলার প্রথম লক্ষ্য। আফগানিস্তানে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত, কিন্তু শর্তভিত্তিক কৌশল বাস্তবায়ন , সন্ত্রাসীদের খুঁজে ফেরা এবং দেশ গঠন পরিহার করার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত হচ্ছে জেনে বা না জেনে এ সংঘাতে বুশ ও ওবামার নেয়া পদক্ষপে পানি ঢেলে দেয়া। বুশ অসফল ভাবে দেশ গঠন পরিহারের চেষ্টা করেন , অন্যদিকে ওবামা সৈন্য সংখ্যা হ্রাস করেন, হামলার জন্য ড্রোনের উপর নির্ভর করতে শুরু করেন, তালিবান ও আল কায়েদা জঙ্গিদের নিধনের উপর জোর দেন যাতে মিশ্র সাফল্য অর্জন করেন।
সত্যি বলতে কি, পূর্বসূরীদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যুদ্ধ ছাড়া ট্রাম্পের সামনে বিকল্প খুব সামান্যই আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আফগানিস্তানের প্রতি সমর্থন (সামরিক ও অর্থনৈতিক) অব্যাহত রাখে তাহলে তালিবানের আফগানিস্তান দখল করা সম্ভব হবে না।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আকর্ষণীয় কোনো পথ নেই। আফগানিস্তান এখন যেমন স্থিতিশীল, তালিবান যদি অস্ত্র সমর্পণ ও কার্যকর শান্তি আলোচনায় প্রবেশ না করে তা হলে অবস্থা এ রকমই থাকবে। ইসলামিক স্টেট আফগানিস্তানে তাদের নাম লিখতে চাইছে, আর বাইরের শক্তি যেমন ইরান, চীন, রাশিয়া ও ভারত যখন আফগানিস্তানের উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো জটিলতার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেছেন তার বিপরীত কথা হচ্ছে আফগানিস্তানে যুদ্ধ অব্যাহত রাখা বিজয় অর্জনের জন্য আর কাজ করবে না, বরং তা অচলাবস্থাকে দীর্ঘায়িত করবে, অথবা একেবারে খারাপ হলে কৌশলগত পরাজয়কে বিলম্বিত করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।