Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টেকনিক বদলেও বদলায়নি ভাগ্য

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

২০০০ সালে টেস্টে স্বিকৃতি পাবার ৪ বছর ৫৭ দিন পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই চট্টগ্রামেই প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। সেবার ভেন্যু ছিল এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। এরও প্রায় ৫ বছর কাটিয়ে বিদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে মুশফিকুর রহিমের দল। ৫১টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে জয়ের সংখ্যা হাতেগোনা ঐ তিনটিই। ৭টি ড্র। আর বাকি ৪১টিতেই হারের গøানি নিয়ে ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশকে। জিম্বাবুয়ে আর য়েস্ট ইন্ডিহের পর সেই টালিতে যোগ হতে পারতো আরেকটি বড় নাম, অস্ট্রেলিয়াও। তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সেটি আর হলো কই। কাছে গিয়েও অধরাই থেকে গেল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। তবে হতে পারতো। সেই স্বপ্নের বীজ মিরপুরে বুনেই চট্টগ্রামে পা রেখেছিল মুশফিকের দল।
ঢাকা টেস্টে সাড়ে তিন দিনে অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়ে টেস্টে নতুন এক বাংলাদেশের আবির্ভাবেরই অবতারনা করেছিল মুশফিক বাহিনী। যে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশকে দেখা গিয়েছিল মিরপুর টেস্টের শুরু থেকেই, সেই দলটি চট্টগ্রামে এসেই যেন উবে গেছে কর্পুরের মত। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাচ্ছে উইকেট, নাকি সেই রঙের ভেল্কিতে পড়ে নিজেরাই কুপোকাত বাংলাদেশ? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে গতকাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাজির অধিনায়ক নিজেই। জানালেন আশাহতের এক উপাখ্যান।
বাংলাদেশ দল প্রথম ইনিংসে করেছিল ৩০৫ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে যেন পুরোই বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দল ১৫৭ রান তুলতেই অল আউট হয়। অবধারিতভাবে শুরুতেই এলো এ প্রসঙ্গ। আক্ষেপটা লুকাতে পারেননি মুশফিকও, ‘ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ ভালো ছিল উইকেট। তবুও দ্বিতীয় ইনিংসে রান কম করার মাশুল দিতে হয়েছে আমাদের। প্রথম ইনিংসেও আরো ৫০ রান যোগ করা উচিত ছিল।’ প্রশ্ন উঠেছিল অমন আত্মাহুতির মিছিল নিয়েও, সেটিও দক্ষ হাতে সামলালেন সেনাপতি, ‘কেউই চায় না আউট হতে। সকলেরই উদ্দেশ্য থাকে দলের জন্য কিছু করার। তবে সবসময় সেটি হয়ে ওঠেনা। আমরাও চেষ্টার কোন ত্রæটি করিনি।’
সেটি অবশ্য ভালোই টের পাওয়া ব্যাটিং অর্ডার দেখেই। চারে নামলেন নাসির হোসেন। খানিকটা বিস্ময়কর। পাঁচে সাকিব আল হাসান, ছয়ে মুশফিকুর রহিম। মুমিনুল হক কোথায়? এমনকি সাতেও সাব্বির রহমানকে দেখে অনেকের বিস্ময় চূড়ায়। মুমিনুল কেন আট নম্বরে! ব্যাটিংয়ে হতাশার দিনে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটির উত্তর দিলেন শান্ত মুশফিক। জানালেন আগের দিন ফিল্ডিংয়ের সময় গায়ে বল লেগেছিল মুমিনুলের। তবে অধিনায়ক জানালেন, চোট নয়, চিন্তা-ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট’ ‘আসলে চিন্তা ছিল ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন করার। এখন আটে নেমে মুমিনুল ভালো খেলেছে বলে হয়তো বলতে পারেন আরেকটু আগে কেন নামানো হয়নি। তবে আমরা তো ফল দেখে চিন্তা করি না। দলের যেটায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেটা করার চেষ্টা করি আমরা। আটে খেলা, সত্যি বলতে, আমাকেও যদি খেলতে বলেন, খুবই কঠিন। কোনো ব্যাটসম্যানেরই আটে খেলা যথার্থ নয়। তবে যেটা বললাম, সিদ্ধান্তটি ছিল ট্যাকটিকাল।’
সেই ট্যাকটিক্যাল ব্যাপারটির বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিলেন মুশফিক, ‘চার নম্বরে গত কয়েক টেস্টে স্পেশালিস্ট সেভাবে নেই আমাদের। সাব্বির খেলেছে। ওর কাছ থেকে যতটা পাওয়ার, আমরা পাচ্ছিলাম না। সাব্বির যেহেতু সাত নম্বরে খেলে ভালো রান করেছে, আমরা চেয়েছি ওকে ওই জায়গায় রাখতে। আর সাকিব সবসময় পাঁচে খেলে। তিন নম্বরে মুমিনুল আগে খেলেছে। তবে আমদের যেহেতু তিনজন ওপেনার খেলে, ওই জায়গাটা বদলানো কঠিন হয়ে যায়। আমরা চিন্তা করেছি, অন্তত মাঝে একটা ডানহাতি ব্যাটসম্যান গেলে ওদের ছন্দের সমস্যা হতে পারে।’
চারে বিশেষজ্ঞ নেই বললেন বটে, অথচ চার নম্বরে মুমিনুলের রেকর্ড দুর্দান্ত। কারিয়ার গড় এই পজিশনে ষাটের বেশি। এই টেস্টেও প্রথম ইনিংসে করেছেন ৩১ রান। এবার খানিকটা অসহায় শোনা গেল মুশফিকের কণ্ঠ, এই প্রশ্ন করতেই পারেন, মুমিনুলই নিচে কেন? কিন্তু একজন ব্যাটসম্যানকে তো যেতেই হবে নিচে।’ দ্বিতীয় ইনিংসে চারে সুযোগ পেয়েও নাসির হোসেন কাজে লাগাতে পারেননি, মুশফিক ইঙ্গিত দিলেন সেই ব্যর্থতার দিকে, ‘অনেকে প্রশ্ন করতে পারে সাব্বির সাতে কেন। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ও সাতেই ব্যাট করেছে এবং ভালো করেছে। আমরা চেষ্টা করি, টিম ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করে, যে ব্যাটসম্যান আছে সেভাবে পরিকল্পনা করার। বাস্তবায়ন সেভাবে না হওয়া মানেই সিদ্ধান্তে ভুল ছিল, এমনটি নয়। বরং যাদের প্রমোশন দেওয়া হয়েছে, তারা যদি আরও বেশি নিবেদন দেখাতে পারত, তাহলে অন্যরকম হতে পারত।’
ক্যারিয়ারে আগে সব সময় তিন-চারের বাইরে কখনও খেলেননি মুমিনুল। এই টেস্টে এসেছিলেন প্রবল চাপ নিয়ে। দুই ইনিসে খুব বড় কিছু করতে পারেননি। তবে প্রথম ইনিংসে ৩১ রানের পথে খেলেছেন স্বচ্ছন্দে। দ্বিতীয় ইনিংসে আটে নামানো হলেও করেছেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান। এই পারফরম্যান্সে মুমিনুলকে নিয়ে, মুমিনুলের জন্য আশা দেখছেন অধিনায়ক, ‘ও অফ স্পিন খেলতে পারে না বলে কথা ছিল। কিন্তু সে দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনারকে খেলে। যতক্ষণ ছিল, ভালো খেলেছে। ভবিষ্যতে আমরা চেষ্টা করব এগুলো মাথায় রাখতে এবং সেভাবেই পরিকল্পনা গড়তে।’
তবে ম্যাচটি হারলেও সিরিজ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলেও দাবি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের। বিশেষ করে মুস্তাফিজকে স্বরুপে ফিরে পাবার পর এমন কথা বলতেই পারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
টেস্টে বাংলাদেশের যত সিরিজ ড্র

প্রতিপক্ষ ম্যাচ ফল সাল স্বাগতিক
জিম্বাবুয়ে ২ ১-১ ২০১৩ জম্বাবুয়ে
নিউজিল্যান্ড ২ ০-০ ২০১৩/১৪ বাংলাদেশ
ভারত ১ ০-০ ২০১৫ বাংলাদেশ
দ.আফ্রিকা ২ ০-০ ২০১৫ বাংলাদেশ
ইংল্যান্ড ২ ১-১ ২০১৬/১৭ বাংলাদেশ
শ্রীলঙ্কা ২ ১-১ ২০১৬/১৭ শ্রীলঙ্কা
অস্ট্রেলিয়া ২ ১-১ ২০১৭ বাংলাদেশ

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া, ২য় টেস্ট (৪র্থ দিন)
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম ২০১৭
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০৫
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : (৩য় দিন শেষে ৩৭৭/৯)
রান বল ৪ ৬
ও’কিফে অপরাজিত ৮ ৩৪ ১ ০
লায়ন ক ইমরুল ব মুস্তাফিজ ০ ৬ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৮, লে বা ৩, ও ১) ১২
মোট (১১৯.৫ ওভার, ৯ উইকেট) ৩৭৭
বোলিং : মিরাজ ৩৮-৬-৯৩-৩, মুস্তাফিজ ২০.৫-২-৮৪-৪, সাকিব ৩১-৩-৮২-১, তাইজুল ২১-১-৭৮-১, নাসির ৬-২-১৪-০, মুমিনুল ২-০-৬-০, সাব্বির ১-০-৯-০।
উইকেট পতন : ১-৫ (রেনশ), ২-৯৮ (স্মিথ), ৩-২৫০ (হ্যান্ডসকম্ব), ৪-২৯৮ (ওয়ার্নার), ৫-৩২১ (কার্টরাইট), ৬-৩৪২ (ওয়েড), ৭-৩৪৬ (ম্যাক্সওয়েল), ৮-৩৬৪ (কামিন্স), ৯-৩৭৬ (আগার), ১০-৩৭৭ (লায়ন)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম স্টা. ওয়েড ব লায়ন ১২ ৩৮ ২ ০
সৌম্য ক রেনশ ব কামিন্স ৯ ১৬ ২ ০
ইমরুল ক ম্যাক্সওয়েল ব লায়ন ১৫ ৩৫ ৩ ০
নাসির ব স্মিথ ব ও’কিফে ৫ ১৮ ১ ০
সাকিব ক ওয়ার্নার ব লায়ন ২ ৮ ০ ০
মুশফিক ক ওয়েড ব কামিন্স ৩১ ১০৩ ১ ০
সাব্বির স্টা. ওয়েড ব লায়ন ২৪ ৫৯ ২ ০
মুমিনুল ক কামিন্স ব লায়ন ২৯ ৬১ ২ ০
মিরাজ অপরাজিত ১৪ ৫৪ ১ ০
তাইজুল ব লায়ন ৪ ৩২ ০ ০
মুস্তাফিজ ব ও’কিফে ০ ৪ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১২) ১২
মোট (৭১.২ ওভার, অল আউট) ১৫৭
বোলিং : কামিন্স ১১-৩-২৭-২, লায়ন ৩৩-১১-৬০-৬, ও’কিফে ২২.২-৬-৪৯-২, আগার ৫-১-৯-০।
উইকেট পতন : ১-১১ (সৌম্য), ২-৩২ (তামিম), ৩-৩৭ (ইমরুল), ৪-৩৯ (সাকিব), ৫-৪৩ (নাসির), ৬-৯৭ (সাব্বির), ৭-১২৯ (মুশফিক), ৮-১৪৯ (মুমিনুল), ৯-১৫৬ (তাইজুল), ১০-১৫৭ (মুস্তাফিজ)।
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস (লক্ষ্য ৮৬)
রেনশ ক মুশফিক ব সাকিব ২২ ৪০ ২ ১
ওয়ার্নার ক সৌম্য ব মুস্তাফিজ ৮ ১৩ ১ ০
স্মিথ ক মুশফিক ব তাইজুল ১৬ ৯ ৩ ০
হ্যান্ডসকম্ব অপরাজিত ১৬ ১৪ ২ ০
ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত ২৫ ১৭ ২ ২
অতিরিক্ত ০
মোট (১৫.৩ ওভার, ৩ উইকেট) ৮৭
বোলিং : মুস্তাফিজ ৫-১-১৬-১, সাকিব ৬-১-৩৫-১, তাইজুল ৪-০-২৬-১, নাসির ০.৩-০-১০-০।
উইকেট পতন : ১-১৩ (ওয়ার্নার), ২-৪৪ (স্মিথ), ৩-৪৮ (রেনশ)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : নাথান লায়ন।
সিরিজ : ২ ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র।
সিরিজ সেরা : নাথান লায়ন ও ডেভিড ওয়ার্নার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেস্ট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ