২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ডায়াবেটিস বাড়ছে। এখন প্রায় ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস এমন একটি জটিল রোগ যার প্রভাব থেকে আমাদের শরীরের কোনো অংশই বাদ থাকে না। ডায়াবেটিস হলো রক্তে শর্করার আধিক্য অর্থাৎ এই রোগে রক্তে সুগার বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেয়ে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি করে। আমাদের চামড়ায় রক্তের যে প্রবাহ আছে, সেখানেও শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন নানারকম চর্মরোগ হতে পারে। জটিলতায় শুরু হয়। ডায়াবেটিসের জটিলতা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে হয়। কিছু নির্দিষ্ট চর্মরোগ আছে, যা সরাসরি ডায়াবেটিস এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং শুধু ডায়াবেটিক রোগীদেরই হয়। আর কিছু চর্মরোগ আছে যা যেকোন লোকেরই হতে পারে, তবে ডায়াবেটিক রোগীদের কিছুটা বেশী হয়। এ ছাড়া অধিকাংশ অন্যান্য চর্মরোগই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে বেড়ে যায় এবং সহজে ভাল হয় না। বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে বাঁচতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাটা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হল ত্বক। যা সমগ্র দেহকে আবরণ দেয়। আরও বিভিন্ন কাজ আছে ত্বকের । বিশাল এই অঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে সংক্রামণ দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস হলে এই সংক্রমণের হার বেড়ে যায় । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলেই এমন হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা চর্ম রোগে ভোগেন। গরমকালে এই রোগের প্রকোপ বেশ বেড়ে যায়। গরম এবং আর্দ্রতার কারণে সবারই কম বেশি চর্মরোগ হতে পারে। অপরদিকে ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষতও সহজে শুকায় না। তাই সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। এছাড়াও যাদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস আছে তাদের ত্বক অন্যদের থেকে শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানির সমস্যা দেখা যায়।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক রোগীদের অনেক ধরনের ত্বকের সমস্যা হয়ে থাকে। আর এ সকল সমস্যা, প্রধানত ৩ টি কারণে হয়ে থাকে। তার মধ্যে আছে -
(১) শরীরের রক্তনালীতে চর্বি জমে রক্তনালী সরু হয়ে যায় ফলে রক্তনালীতে রক্ত চলাচল কমে যায়।
(২) স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হবার ফলে বিভিন্ন অনুভূতি জনিত সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- হাত-পা ঝিন-ঝিন করা, গরম-ঠান্ডা ও ব্যাথার অনুভূতি নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ।ফলে আঘাত লাগলেও রোগী টের পায়না। সেই আঘাত অনেক সময় মারাত্মক হয়ে উঠে ।
(৩) রোগীদের শরীরের রক্তে গুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায়, স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ও জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা অনেক কমে যায়। সে জন্য ডায়াবেটিক রোগীদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের জীবানু সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে বেশি হবার সম্ভবনা থাকে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাকটোরিয়া ও ছত্রাকজনিত চর্মরোগ খুব বেশী হয় এবং বার বার হতে পারে।
এ ছাড়া, ডায়াবেটিক রোগীদের বেশ কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ঘা, ক্ষত ও চর্মরোগ হতে পারে, যা সময়মত ভালভাবে চিকিৎসা না করলে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। পায়ের ছোট একটি ঘা বা ক্ষত থেকেও মারাত্বক গ্যাংরিন বা পচন শুরু হয়ে যেতে পারে। তাই, ডায়াবেটিক রোগীদের সবসময় খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হয় এবং পায়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হয়। ডায়াবেটিসে হঠাৎ করে ত্বকে একটা ফুসকুরির মতো উঠে তার পরে সেখানে ক্ষত হয়। ক্ষত থেকে এক ধরনের হলুদ সেমিসলিড পদার্থ বের হয়। এটাকে নেক্রোবায়সিস বলে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এই রোগের জন্য তাঁরাই বেশী ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। আবার আরেকটি রোগ আছে ফোস্কা নিয়ে ওঠে। একে বুলাস ডায়াবেটিকরাম বলে। এটা মূলত হাত-পায়ের শেষ অংশে হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের ফলে রক্তের নালি সরু হয়ে যায়। এ ফলে সমস্যা সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রেই হয়। এই সরু হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তের যে পুষ্টি পাওয়ার কথা, সেটি আর পাওয়া যায় না। ত্বকের ক্ষেত্রেও সেটি হয়। ত্বক তখন ভুগতে থাকে বিভিন্ন ধরণের রোগে।
বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে বাঁচতে ডায়াবেটিস থাকলে প্রথমেই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। রোগীরা যেসব উপসর্গ নিয়ে আসে সেগুলো বুঝে চিকিৎসা করা উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পায়ে বা হাতের ত্বকে রোগ-সংক্রান্ত চিহ্ন যখনই পাওয়া যাবে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে, গ্যাংরিন এর মতো অবস্থা নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসেন। তখন অনেক সময় পা কেটে ফেলতে হয়।
ডায়াবেটিস রোগে নিয়মিত নিজের ত্বকের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই খেয়াল রাখেন না। অনেক সময় এজন্য বড় মাশুল দিতে হয় ।এটা বিশেষভাবে পায়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। পায়ের তলায় অনেক সময় ঘা সৃষ্টি হয় রোগীরা অনেকসময় যেটা টের পায় না। ডায়াবেটিস রোগে ত্বকের অনুভূতিও কমে যায়। যার ফলে ক্ষত সৃষ্টি হলে ব্যথা হওয়ার বোধটা পাওয়া যায় না। এই ক্ষত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই পায়ে কোনো ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা করতে হবে। এ জাতীয় উপসর্গ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। তার ফলে চর্মরোগ সহ নানা জটিলতা অনেক কমে আসবে।
ষ ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।