Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুস্তাফিজ-মিরাজে বাংলাদেশের দিন

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে : | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১১৩.২ ওভারে ৩০৫
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ১১৮ ওভারে ৩৭৭/৯
তৃতীয় দিন শেষে ৭২ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত এক ডেলিভারী। তার চাইতেও দুরন্ত হলো ইমরুল কায়েসের ক্যাচ। চার বারের প্রচেষ্টায় তালুবন্দী হলো অবাধ্য বল, তাতে কাটা পড়লেন সেঞ্চিুরিয়ান ডেভিড ওয়ার্নার। নিজের জন্মদিনে দামি উইকেটটি পেলেন মুস্তাফিজ। গতকাল ২২ বছরে পা দেয়া বাঁহাতি পেসারের বাউন্সার লেগ গালির ওপর দিয়ে পার করে দিতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক। ঠিক মতো পারেননি, ক্যাচ যায় ইমরুলের কাছে। চতুর্থ প্রচেষ্টায় হাতে জমান তিনি। তালগোল পাকিয়েও শেষ পর্যন্ত ক্যাচ মুঠোয় নিলেন বল। দুইবার জীবন পাওয়ার পর দারুণ এক শতক করে ফিরলেন বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। জন্মদিনে সতীর্থের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো উপহার আর কি-ই-বা পেতে পারতেন কাটার মাস্টার! আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই এই ওপেনারকে ফিরিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। সেই স্বস্তি গতকাল শেষ বিকেল পর্যন্ত সঙ্গী হয়ে ছিল মুশফিকের দলের। তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩৭৭। বাংলাদেশের চাইতে এগিয়ে ৭২ রানে, হাতে এক উইকেট।
তবে এই স্বস্তিতে অবদান অনেকটাই বৃষ্টির। দিনের প্রথম প্রহরে সংশয় জেগেছিল তৃতীয় দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার। আগের রাত থেকেই চট্টগ্রামের আকাশ ভার হয়ে ছিল কালো মেঘে। কিছু জায়গায় থেমে থেমে হয়েছে বৃষ্টিও। গতকাল সকাল থেকেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে ছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মাঠ। তার মাঝে মাঠে নামার তোড় জোড় শুরু হয়েছিল দু’দলের ড্রেসিংরুমে। তবে সেসব আশা গুড়িয়ে হুড়মুড়িয়ে শুরু হয় বৃষ্টি। টানা সেই ভারী বর্ষণে সাগরিকায় চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন হওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছিল শঙ্কা। তবে অবশেষে থামে বৃষ্টি, কাটে শঙ্কার মেঘ। তৃতীয় দিন দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে প্রথবারেরমত মাঠে নামে মুশফিক-স্মিথের দল। তৃতীয় দিনে খেলা হয় ৫৪ ওভারের। প্রথম ইনিংসে ১১৩.২ ওভারে অলআউট বাংলাদেশের করা ৩০৫ রানের জবাবে ৬৪ ওভারে ২ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া করে ২২৫ রান। সেখান থেকে গতকাল দিন শুরু করে ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্ব।
আগের দিন যেখানে শেষ সেখান থেকেই যেন শুরু করেছিলেন সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন দু’জনে। শুরু থেকেই মনে হয়েছে থিতু। দুই ব্যাটসম্যান সহজেই খেলেছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে। তৃতীয় উইকেটে তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২৬১ বলে আসে জুটির দেড়শ রান। এক রান হলেই শতক হবে ওয়ার্নারের। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের চেয়ে যেন রানটার জন্য বেশি উৎসাহী ছিলেন হ্যান্ডসকম। সতীর্থ বল স্কয়ার লেগে ঠেলে দিতেই ছুটেছিলেন তিনি। রান হবে না বুঝতে পেরে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সরাসরি থ্রো করে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন সাকিব, ৮২ রান করে ফেরে হ্যান্ডসকম, ভাঙে জুটিও।
এর কিছু পরে ফেরেন ওয়ার্নারও। ৩৬২ মিনিট আর ২৩৪ বলে তার ১২৩ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটি ৭টি চারে সাজানো। স্টিভেন স্মিথকে ছুঁয়ে ফেলা ওয়ার্নারের ২০তম টেস্ট সেঞ্চুরিটি ৩১৩ মিনিট আর ২০৯ বলের, যার তার ক্যারিয়ারের মন্থরতম। এর আগে অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে ২০১৪ সালে করা ১৫৪ বলে করা শতকটিই ওয়ার্নারের পূর্বের ধীরতম।
নিজের বলে হিল্টন কার্টরাইটকে জীবন দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তরুণ অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারই ফিরিয়েছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে। চা-বিরতির আগে শেষ বলে স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন কার্টরাইট (১৮)। এরপর বোলিংয়ে ফিরেই ফের মুস্তাফিজের আঘাত। বার্থডে বয়’র এবারের শিকার ৮ রান করা ম্যাথু ওয়েড। একটু ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটের কানা ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। তাতে পাল্টায়নি সিদ্ধান্ত, ষষ্ঠ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ১০ রানে গেøন ম্যাক্সওয়েলকেও জীবন দিয়েছিলেন মিরাজ। তরুণ অফ স্পিনারই ফেরালেন ম্যাক্সওয়েলকে। তার ব্যাট-প্যাড ছুঁয়ে আসা ক্যাচ গøাভসে জমান মুশফিকুর রহিম। দলের দ্বিতীয় রিভিউটা নষ্ট করে যান ৩৮ রানের সময়োচীত ইনিংস খেলা এই অলরাউন্ডার।
দিনের ১৫ ওভার মাত্র বাকি। ৮ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ তখন ৩৭৩। ২১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে অ্যাস্টন অ্যাগার। নিজের শেষ স্পেলে বল করতে এসেছিলেন এই টেস্টে এখন পর্যন্ত উইকেটশূণ্য সাকিব আল হাসান। ঢাকা টেস্ট জয়ের নায়কের সামনে প্রথম বলেই সুযোগ এসেছিল, তবে সেটি হতে দেননি স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকার। সহজ একটি ক্যাচ হাত থেকে যেন ছেড়ে দিলেন এই ওপেনার! এর আগে এই স্লিপেই ওয়ার্নারেরও ক্যাচ ছাড়েন স্যেম্য। তবে জীবন পেয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হননি অ্যাগার। ওই ওভারের শেষ বলে অন্য কারো মুখাপেক্ষি না হয়ে বোল্ড করে তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। মিরপুর টেস্টে ঘূর্ণির জাদুকরের দুর্দান্ত একটি বল অ্যাগরের ব্যাট ফাঁটি দিয়ে সজোরে আঘাত হানে লেগ স্ট্যাম্পে, থিতু হয়েও ফেরেন ২২ রানে। আর কোন অঘটন ওখানেই শেষ হয় দিনে খেলা। আলোকস্বল্পতায় দিনের ১৩ ওভার বাকি থাকতেই দুই দলের মধ্যস্থতায় খেলা শেষ করেন আম্পায়ার।
তবে স্বপ্নের শেষ হতে এখনও বাকি। আগের দিন নাসির যেটি দেখিয়ে গিয়েছিলেন গতকাল তারই রেশ রেখে গেলেন মুস্তাফিজ-মিরাজ-সাকিবরা। আজ সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পালা তামিম-ইমরুলদের। হাতে আছে দুই দিন। স্বপ্ন পূরণের জন্য যথেষ্ঠ নয় কি?

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেস্ট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ