Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুরক্ষায় বিত্তশালীদের কৃষি বিনিয়োগে সংশ্লিষ্ট হওয়া জরুরি

সিলেটে কৃষি বিপর্যয়

ফয়সাল আমীন : | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বন্যার ভয়াবহতায় কৃষি বিপর্যয় সিলেটে। উত্তরনে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা। কৃষিবান্ধব নয়, মাঠ পযার্য়ের সরকার সংশ্লিষ্টর্ওা। তাই হতাশায় কৃষককূল। এমনতিইে সিলেটের অনাবাধি জমির পরিমান বেহিসাব। তারর্পও যারা কৃষি ক্ষেত্রে মনোযোগি তার্ওা প্রাকৃতিক দূযোর্গের আশংকায় কৃষিতে আগ্রহ হারাচ্ছেনে। যার নেতিবাচক প্রভাবে সম্ভাবনাময়ী কৃষি ক্ষেত্র এক সময় রূপকথার গল্পে স্থান নিতে পারে। গরু ছিল, কৃষক ছিল, ফসল ফলতো, সেই দিন যেন ক্রমশ: শেষ হ্ওয়ার উপক্রম।, নিজস্ব কৃষি নির্ভরতা, হারিয়ে আমদানী নির্ভরতামুখীই হয়ে উঠতে পারে আমাদের আগামীর ইতিহাস এমন আশংকা কৃষি সংশ্লিষ্টদের। কৃষি টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ আব্দুল বাছিত সেলিম বলেন, সরকারের মাঠ পর্যায়ের লোকজন কৃষি বান্ধব নয়, বিপর্যয় মুকাবেলা বিষয়ে রুঠিন নির্ভর বক্তব্য ছাড়া, বাস্তবমুখী কোন পদক্ষেপ তারা দিতে পারছে না। তাই ফসল গেছে, বীজই নেই কৃষকের হাতে, বীজতল্ওা নেই, অসহায় কৃষক এখন কি করবে। সংগ্রাম করে ঠিকে থাকার যে সহযোগিত্ওা বা অভিজ্ঞত্ওা তাগের মাঝে দ্ওেয়ার লোক নেই আজ। বন্যা বান্ধব বীজ এর বদলে খাটো চারা ধান কৃষকের সম্ভল। অথচ লম্বা জাতের চারা বীজ তাদের হাতে থাকলে তারা মনোবল নিয়ে চাষে আগ্রহী থাকতো। বাস্তবিক ক্ষেত্রে ক্রমেই আমরা কৃষিহীন বাস্তবতার দিকে ধাবিত হচ্ছি। দফায় দফায় বন্যায় বোরর পর আউশ তলিয়ে গেছে। তারপর এবারকার বন্যায় চলে গেছে হাজার হেক্টর রোপা আমনে ফসল। সাথে বীজতলাও। চোখে অন্ধকার সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের। বন্যার পানিতে এখনো নিমজ্জিত রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষি জমি। দিশেহারা কৃষককুলে চলছে চরম হাহাকার। আঞ্চলিক কৃষি অফিস বলছে পানি উঠানামা করায় ক্ষয়ক্ষতি এখনো নির্ণয় হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট এর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বিভাগের চার জেলায় এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর রোপা আমন। নষ্ট হয়ে গেছে ১ হাজার ৩২ হেক্টর বীজ তলা।
এরআগে প্রথম দফা বোরো মৌসুমে সিলেট বিভাগ ও হাওর অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। তলিয়ে যায় বোরো ফসল। হাওরপারে ফসল হারানোর সেই মাতম এখনো চলছে। ২য় দফা বন্যায় আউশ ফসল পড়ে পুনরায় হুমকীর মুখে। এই বন্যায় সিলেট-মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ৬৬ শতাংশ আউশ ও ৫২ শতাংশ আমন বীজতলা বন্যায় আক্রান্ত হয়। এবার ৩য় দফা বন্যায় হানা দিয়েছে কৃষকের শেষ সম্বল রোপা আমনে।
আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫শ ৬৪ হেক্টর। ২লাখ ৪৮ হাজার ২শ ৬৬ হেক্টর জমিতে চারা রোপন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কৃষকরা যখন জমি আবাদের প্রস্তুতি নি”িচ্ছলেন ঠিক সেই মহুর্তে ৩য় দফা হানা দেয় বন্যা। এতে সিলেট জেলায় ২ হাজার ৯শ ৭০ হেক্টর রোপা আমান ও ১শ ৫২ একর বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। মৌলভীবাজারে ৫শ ৩৭ হেক্টর রোপা আমন ও হবিগঞ্জে ৭শ হেক্টর রোপা আমন ও ১০ হেক্টর বীজতলা এবং সুনামগঞ্জে ৬ হাজার ২শ ২৩ হেক্টও জমিতে রোপা আমন ও ৮শ ৭০ হেক্টর বীজতলা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
সিলেট জেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ভূপেশ চন্দ্র দাস জানান, সিলেট জেলায় ৯১ হাজার ৯০ হেক্টর রোপা আমন ও ৯ হাজার ৩শ ৬০ হেক্টওর বীজতলা আবাদ হয়। এরমধ্যে ৭ হাজার ৭শ ৪৫ হেক্টর আবাদকৃত রোপা আমনের মধ্যে ২ হাজার ৯শ ৭০ হেক্টর জমি এখনো পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। বীজতলা ২শ ১৯ হেক্টরের মধ্যে ১৫২ হেক্টর এখনো নিমজ্জিত। এছাড়া কৃষকরা সিলেট জেলায় বন্যার আগেও পরে ৫১ হাজার ৫শ ৮৬ হেক্টর আউশ ধান কর্তন করতে সক্ষম হয়।
এদিকে ২য় দফা বন্যায় সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সিলেটে প্রায় ৬৩ শতাংশ আউশ ও ১৭ শতাংশ আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া মৌলভীবাজারে ৫৫ শতাংশ আউশ ও প্রায় ৫০ শতাংশ আমন বীজতলা, সুনামগঞ্জের প্রায় ২১ শতাংশ আউশ এবং হবিগঞ্জেও বেশকিছু আউশ ও আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেলা ও আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৪০ হেক্টর, মৌলভীবাজারের নিমজ্জিত ৯৫৬ হেক্টও ও ১০ হেক্টও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সিলেটের ১২টি উপজেলার মধ্যে আটটি আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে নিমজ্জিত ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর। ৩৫ হেক্টর আমন বীজতলার ক্ষতি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মামুন উর রশীদ বলেন, পানি কমার আগ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে না। দ্রুত পানি নেমে গেলে এখনো অনেক জমিতে চাষাবাদ করা যাবে। যথেষ্ট বীজতলা যথেষ্ট রয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হবে। সিলেট দক্ষিণ সুরমার কৃষক ফখরুল আলম বলেন, সরকার সংশ্লিষ্টরা টেবিলে বসেই বক্তব্য দিয়ে যান, কৃষক আর কৃষক পরিবারে চোখে বাস্তবিক স্বপ্ন দেখানোর মতো কোনো পদক্ষেপ নেই তাদের মাঝে। সবচেয়ে আফসোসের বিষয়, বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদানন অন্ন, সেই অন্ন উতপাদন বা যোগানে যারা জড়িত, তারা যেন অচ্যুত, মর্যাদ্ওা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই দেশের বড় বিনিয়োগকারীদের কৃষি ক্ষেত্রে বাধ্যতামুলক বিনিয়োগে সরকার ভূমিকা রাখলে কৃষিই হবে অর্থনীতির নিরাপদ ক্ষেত্র্ ও খাদ্য নিরাপত্তার গ্যারান্টি। অর্থশালী ্ দক্ষ, দেশি ্ও্ আর্ন্তজাতিক বাজার অভিজ্ঞ লোকজন এক্ষেত্রে বিনিয়োগমুখী হলে, কৃষকের মান মর্যাদা শুধু বৃদ্ধি পাবে না, দেশের টেকসই অর্থনীতির পথ্ও উম্মুক্ত হবে। তিনি বলেন, অনুতপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের যে লাগামহীন প্রতিযোগিতা, সেই অশুভ মানসিকতার পথ আগলাতে কৃষি ক্ষেত্র-ই হতে পারে অন্যতম বিকল্প ব্যবস্থা। আল-হাসান অটো রাইস মিল এর মালিক রুনু মিয়া বলেন, তার মিলে ধান নেই, ধান যে আসবে ত্রা নিশ্চিয়তা নেই, কারন কৃষক এখন ফসলহীন। তাই ব্যবসা চরম মন্দা। তার পরিচিত বৃহত্তর সিলেটের কৃষকরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা উপায়হীন, আগামী দিন যে ঘুরে দাড়াতে পারবেন, র্তাও স্বপ্ন তারা দেখতে পারছেন না। তাই সামগ্রিক বিপর্যয় কৃষি সংশ্লিষ্টদের গ্রাস করে রেখেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ