Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মন্ত্রিসভার রদবদলে চমক মোদির প্রতিরক্ষায় নির্মলা সীতারামন

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতে নয়া মন্ত্রিসভা গঠনে চমক দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। তিনি নির্মলা সীতারামনকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেছেন যিনি পূর্ণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নারী। এ রদবদলে বিজেপির শরিকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি জেডিইউ-শিবসেনা। মন্ত্রিসভায় আমলাদের প্রাধান্য প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে এর সমালোচনা করেছে ভারতের বিরোধী দলগুলো। কংগ্রেস একে বুড়োদের মন্ত্রিসভা বলে আখ্যায়িত করেছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা।
মন্ত্রিসভার রদবদলে নিজের দফতর লাগোয়া সাউথ বøকে সুষমা স্বরাজের পাশেই আর এক মহিলাকে নিয়ে এলেন মোদী। সকলকে চমকে দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বে এনেছেন নির্মলা সীতারামনকে। বাণিজ্যের স্বাধীন দায়িত্বের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এই প্রথম কোনো মহিলা হলেন ভারতের পূর্ণ সময়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। আর নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার কমিটিতে দুই মহিলাও স্বাধীন ভারতে প্রথম।
মন্ত্রিসভার রদবদলে দেখা গেছে, সুরেশ প্রভুর ছেড়ে যাওয়া রেল পেলেন পীযূষ গয়াল। তাঁর সঙ্গে পদোন্নতি হলো ধর্মেন্দ্র প্রধান, মুখতার আব্বাস নকভি আর নির্মলার। মোদী বিমানে চাপার পরেই এল আসল চমক। এতদিন প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা অরুণ জেটলি যাকে বললেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত মাইল ফলক। নতুন দায়িত্ব পেয়ে নির্মলা বলছেন, ‘‘গুরু দায়িত্ব। আপ্রাণ চেষ্টা করব লক্ষ্যপূরণে।’’
রদবদলে কোনও শরিক মন্ত্রীর দফতরে হাত পড়েনি । তবে নতুন কেউ আসেনওনি শরিকদের মধ্যে থেকে। আর তা নিয়েই শরিকদের সঙ্গে তিক্ততা বাড়ল বিজেপির। শপথ অনুষ্ঠানে আসেইনি জেডিইউ-শিবসেনা। কংগ্রেস বলেছে, এ সবই আসলে চমক। যে সব মন্ত্রক থেকে সরকারের আয় হয়, সে সব মন্ত্রীদেরই ইস্তফা দিতে হয়েছে খারাপ কাজের জন্য! এ তো প্রধানমন্ত্রীরই ব্যর্থতা। এখন চমকের আড়ালে নতুন মুখ দিয়ে কি বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরবে?
আমলা প্রাধান্যঃ প্রতিভার অভাব?
দেখা যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া ন’জনের মধ্যে চার জনই এক সময়ে কর্মরত ছিলেন আমলা হিসেবে। মন্ত্রিসভায় আমলাদের ঢালাও অন্তর্ভুক্তিতে প্রশ্ন উঠেছে যে নিজেদের ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড়দল’ বলে বড়াই করা বিজেপিতে কি এখন প্রতিভার অভাব? নাকি বাস্তবের জমিতে পরিকল্পনার সফল প্রয়োগের লক্ষ্যে নেতাদের বদলে দক্ষ আমলাদের উপরই বেশি ভরসা করছেন প্রধানমন্ত্রী?
যে প্রাক্তন আমলারা মন্ত্রিসভায় এসেছেন, তাঁরা হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ, রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি হরদীপ সিংহ পুরী, আর এক প্রাক্তন আইএএস অফিসার অ্যালফোন্স কান্নানথানম এবং মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সত্যপাল সিংহ। প্রথম তিন জন স্বাধীন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন যথাক্রমে বিদ্যুৎ, আবাসন ও পর্যটনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকে। সত্যপালকে দেওয়া হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও জলসম্পদ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
এ নিয়ে বিজেপির অন্দরেই নানা অসন্তোষ। বিজেপির একাংশ মনে করছে, এতে সাধারণ কর্মীরা কাজের উৎসাহ হারাবেন। ক্ষুব্ধ এক নেতার কথায়, ‘‘রাজকুমার ২০১৩ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে পরের বছরই সাংসদ হন। আজ তিনি মন্ত্রী হলেন। সত্যপালও তা-ই। পুরী ২০১৪-য় দলে যোগ দিয়ে তিন বছরে মন্ত্রিত্ব পেলেন। আর দিল্লিতে অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে খ্যাতি পাওয়া কান্নান তো এক সময়ে বাম রাজনীতি করতেন। ২০১১-য় বিজেপিতে আসেন।’’
১৯৯০ সালে ‘রথযাত্রা’র সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী বিহারের সমস্তিপুরে ঢোকা মাত্রই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদের নির্দেশে তাঁকে গ্রেফতার করেছিলেন জেলাশাসকের পদে থাকা রাজকুমার। স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে তিনি দাবি করেছিলেন, ২০০৭ সালে হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদের বিস্ফোরণে সঙ্ঘের যোগ রয়েছে। সত্যপালের ফ্ল্যাটে আবার যৌন চক্র চলার অভিযোগ উঠেছিল। আজ এই সব পুরনো বিতর্কের কথাও তুলছেন দলের কেউ কেউ।
বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন, ‘‘রাজনীতিকদের চেয়ে বেশি ভরসা করা হচ্ছে প্রাক্তন আমলাদের।’’
মন্ত্রিসভা ‘বুড়োদের ক্লাব’ঃ কংগ্রেস
রদবদলের পর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকে ‘বুড়োদের ক্লাব’ বলে কটাক্ষ করেছে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস। কংগ্রেসের মুখপাত্র মনিশ তিওয়ারি রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের বয়স নিয়ে কটাক্ষ করে নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা ‘সিনিয়র সিটিজেন ক্লাব’-এ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যেখানে দেশে বাসিন্দাদের গড় বয়স ২৭, সেখানে নয়া মন্ত্রীদের গড় বয়স ৬০ বছর।
মন্ত্রিসভার আয়তন ৭৩ থেকে বেড়ে ৭৬ হওয়ায় তিনি একে ‘অধিকতম সরকার ও শূন্য শাসন’ বলে অভিহিত করেন। নরেন্দ্র মোদি সরকারের শ্লোগান ছিল, ‘ন্যূনতম সরকার ও সর্বোচ্চ সুশাসন’।
কংগ্রেসের মুখপাত্র মনিশ তিওয়ারি কর্ণাটকের সংসদ সদস্য অনন্তকুমার হেগড়েকে মন্ত্রিসভায় শামিল করায় অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এক ভিডিও চিত্রে, হেগড়ের বিরুদ্ধে উত্তর কর্ণাটকে এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে প্রকাশ্যে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। হেগড়ের সাম্প্রদায়িকভাবে মেরুকরণ করার পুরোনো রেকর্ডও রয়েছে। তাকে সরকারে শামিল করায় এটা স্পষ্ট আলামত যে বিজেপি কর্ণাটকে সাম্প্রদায়িকতা ছাড়তে চাচ্ছে।’
মন্ত্রিসভায় কয়েকজন সাবেক আমলাকে শামিল করায় মনিশ তিওয়ারি বলেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে, মোদিজি তার রাজনৈতিক সঙ্গীদের ওপর এখন আর তেমন ভরসা রাখতে পারছেন না।’ দলীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার কথায়, ‘‘যে প্রধানমন্ত্রী কেবল তারুণ্যের কথা বলেন, এই রদবদলের পরে তাঁর মন্ত্রিসভারই গড় বয়স ষাটের উপরে!’’
প্রসঙ্গত, ‘যতদিন মুসলিমরা থাকবে, ততদিন সন্ত্রাসবাদ থাকবে।’ ‘আমার বিরুদ্ধে ৬৩ ফৌজদারি মামলা রয়েছে, আরও একটা বাড়বে কিন্তু মুসলিমদের মিছিল আটকাবোই।’-এসব উক্তির জন্য খ্যাত, কর্ণাটকের কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা আরএসএসঘনিষ্ঠ অনন্তকুমার হেগড়ে নয়া মন্ত্রী হয়েছেন। বারবার মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য করার জন্য সমালোচিত হেগড়েকে ‘দক্ষতা বৃদ্ধি ও শিল্পোদ্যোগ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী করে বিশেষ ফায়দা তোলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
অন্যদিকে, ‘গো-রক্ষক বাহিনীর আশ্রয়দাতা’ বলে মধ্য প্রদেশের আরএসএস কর্মী ও বিজেপি নেতা বীরেন্দ্র কুমারের খ্যাতি রয়েছে। মধ্য প্রদেশে গো-রক্ষা বাহিনীর যাবতীয় কুকর্মের পেছনে তার প্রশ্রয় প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে এনডিএ শরিকরা আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে শরিকরা। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘এই রদবদল বিজেপি’র, এনডিএ’র নয়। ওদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, সেজন্য ওরা ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এনডিএ মৃতপ্রায়। আমরা মন্ত্রী পদ বা ক্ষমতার ক্ষুধার্ত নই। রদবদল রাজনৈতিক কারণে পরিসংখ্যানের খেলা। আমরা সঠিক সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেব।’ শিবসেনা শপথ অনুষ্ঠানেও যোগ দেয়নি।
মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে নীতিশ কুমারের দল ডাক না পাওয়ায় এবং মন্ত্রিসভায় তাদের ঠাঁই না হওয়ায় কটাক্ষ করেছেন এক সময়ের জোট সঙ্গী ও আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব। এনডিএ’র নয়া শরিক বিহারের নীতিশ কুমারের জেডিইউ ডাক না পাওয়ায় তিনি বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদি, নীতীশ কুমারকে কাঁচকলা দেখাল। ধীরে ধীরে এরপর নীতীশ কুমারের দলকে কোণঠাসা করা হবে শিবসেনার মতো।’
লালুপ্রসাদ বলেন, ‘আপনজনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে এমনই হয়। অন্য কেউ পাশে থাকে না। জেডিইউ নেতারা নতুন কুর্তা-পাজামা পরে মন্ত্রী হওয়ার জন্য বসেছিলেন। ডাক-ই পেলেন না!’ লালুপ্রসাদ কটাক্ষ করে বলেন, ‘ডাল থেকে কোনো বাঁদর একবার নীচে পড়ে গেলে ফের দলে জায়গা পায় না।’
বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেছেন, দেশের অর্থনীতির বিপর্যয় থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই এই রদবদল করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোদি

২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ