মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিপন্ন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় বাধার কারণে সেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ত্রাণ কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। জাতিসংঘ অভিযোগ তুলেছে, মিয়ানমার সরকারের ভূমিকার কারণেই রাখাইনে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতে বাধ্য হয়েছে তারা। জাতিসংঘ ছাড়াও আরও ১৬টি মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রমে অসহযোগিতা আর বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কখনও ভিসা বন্ধ করে, কখনও সহায়তাকর্মীদের ফেরত পাঠিয়ে, কখনওবা আবার স্থানীয় প্রশাসনের রক্তচক্ষুর মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতে লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে মানবিক সহায়তার আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো।
সা¤প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪ আগস্ট পুলিশ চেকপোস্টে হামলা এবং বিদ্রোহী-পুলিশ-সেনাসদস্য মিলে অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাসূত্র। এই হামলার দায় স্বীকার করে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)। ওই হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার হয়। অভিযান শুরুর পর বেসামরিকদের বিপন্নতার মধ্যেই ২ সেপ্টেম্বর রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। নিরাপত্তাজনিত সঙ্কটকে কারণ দেখিয়ে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে মিয়ানমারের জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় গার্ডিয়ানকে ইঙ্গিত দিয়েছে, মিয়ানমার সরকারই তাদেরকে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে না।
হঠাৎ করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের কারণ কী সে ব্যাপারে গার্ডিয়ানকে আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় জানায়, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শনে সরকারের পক্ষ থেকে কড়াকড়ির কারণে আমরা সহায়তা দিতে পারিনি। যত দ্রæত সম্ভব যেন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা যায় তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছে জাতিসংঘ।’ জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ) এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে মাঠ পর্যায়ের কোনও কাজ করেনি। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবিøউএফপি) জানায়, রাখাইনের অন্য এলাকাগুলোতে তাদেরকে কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে। এতে নিয়মিত খাদ্য যোগাড় করতে না পারা কয়েক লাখ মানুষ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
জাতিসংঘ ছাড়াও অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বিশ্বের বড় বড় ১৬টি মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানও অভিযোগ করেছে মিয়ানমার সরকার তাদেরকে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যেতে দিচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থার মিয়ানমার কার্যালয়ের মুখপাত্র পিয়েরে পেরন বলেন, ‘চলমান সহিংসতায় লাখো মানুষের পরিণতি নিয়ে ত্রাণ সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগে আছে।’
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে ত্রাণ সরবরাহের জন্য মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের সঙ্গে চুক্তিবন্ধ, সেই কন্ট্রাকটররা তাদের কাজে অপারগতা জানাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনের ভয়ে তারা অস্বীকৃতি জানাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কন্ট্রাকটরদের ধারণা, তারা এই ত্রাণ সরবরাহে অসন্তুষ্ট হতে পারে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ারমার কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সহায়তা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভিসা দিচ্ছে না। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই যারা মিয়ানমারে অবস্থান করছেন তাদেরও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
আবাস হারানো মানুষগুলো সব অন্যান্য বেসামরিক মানুষের জন্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দরকার। তাদের অবিলম্বে খাবার, পানি, আবাস, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া অপরিহার্য। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন হিউম্যানটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স এর একজন মুখপাত্র গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘মানবিক সহায়তা তাদেরকেই দেওয়া হয়, বিপন্ন অবস্থায় থাকা যে মানুষরা এর ওপর নির্ভরশীল। রাখাইনের সব স¤প্রদায়ের বিপন্ন এই বাস্তবতায় সেখানে স্থগিতকৃত ত্রাণ কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে এখনই সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সা¤প্রতিক সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে গেল এক সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ৪শ’ জন নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সেনাবাহিনী নিহত ৪শ’ জনের মধ্যে ৩৭০ জনকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে সংঘটিত সামরিক অভিযানের সময়ে জাতিসংঘের তরফ থেকে মিয়ানমারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সেখানকার পরিস্থিতিকে তারা আখ্যা দেয় ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও তুলেছিল। আর রাখাইন রাজ্যের সা¤প্রতিক সহিংসতায় ৪০০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাখাইন-পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বলে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। সূত্র : ওয়েবসাইট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।