Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

রাজধানীতে চুরি ছিনতাই বেড়েছে

পুলিশের টহল চোখে পড়ে না বলে অনেকেরই অভিযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে চুরি ছিনতাই বেড়েই চলেছে। দিনে দুপুরে বাসা বাড়ির দরজার তালা ভেঙ্গে দুর্ঘর্ষ চুরির ঘটনা ঘটছে অহরহ। অথচ পুলিশ নীরব। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় দিনে কিংবা রাতে পুলিশের টহল নেই বললেই চলে। এ কারণেই দিন দিন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টির তৎপরতা বেড়েইে চলেছে। গত শনিবার দুপুরে রমনা থানার পূর্ব নয়টোলার এক বাসায় একই সাথে দুই ফ্লাটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ১৮ আগস্ট মুগদার মানিকনগর মিয়াজান লেনের এক বাসায় ল্যাপটপ, মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। কয়েকদিন আগে কদমতলীর শনিরআখড়ায় ঢাকা টাওয়ারে এক স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকায় প্রতিদিনই মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটছে। জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, অপরাধ প্রবণতাকে শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব নয়। পুলিশের কাজ অপরাধ প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে অপরাধীচক্র মাথাচাড়া দেয়, সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য টহলসহ পুলিশী তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মুগদা থানাধীন মানিকনগর মিয়াজান লেনের ৭৮/৫ বি-১ নং বাসায় ঢুকে একটি দামী ল্যাপটপ, মোবাইল সেট ও মানিব্যাগ চুরি করে লিটন দাস (৩৫) নামে এক চোর। ঘটনার পর মুগদা থানা পুলিশ গিয়ে ওই বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজে দেখা যায়, চোরটি প্রথমে একটি রুমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলে ওই রুমের মেস মেম্বার বাইরে বেরিয়ে আসেন। তখন চোরটি পাশের এক বাথরুমে প্রবেশ করে। এরপর আরেক রুমের একজন বাথরুমে গেলে চোরটি ওই রুমে প্রবেশ করে ল্যাপটপ , মোবাইল ও মানিবাগ নিয়ে সটকে পরে। এই ঘটনার পর মুগদা থানায় একটি মামলা (নং ৩৯) করেন ল্যাপটপের মালিক দৈনিক ইনকিলাবের সহ-সম্পাদক নুরুল ইসলাম। পুলিশ ওই ঘটনার পর সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করলেও প্রকৃত চোর থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার কয়েকদিন পর সকালে আবার চোরটি ওই বাসার সামনে এক দোকানে সিগারেট নিতে আসলে চুরি হওয়ার বাসার কেয়ারটেকার তাকে চিনতে পেরে আটক করে। পরে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে চোর লিটন দাস জানায়, তার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানা এলাকায়। কুমিল্লা থেকে সে প্রতিদিন ভোরে ঢাকায় এসে চুরি করে। সন্ধ্যায় চুরির মালামাল স্টেডিয়াম মার্কেটে বিক্রি করে বাসযোগে বাড়ি চলে যায়। ধরা পড়ার দিনও লিটন দাস এক বাসা থেকে মোবাইল চুরি করে ওই দোকানের সামনে সিগারেট কিনতে এসেছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার চিহ্নিত অপরাধীদের সঙ্গে পাশের জেলাগুলো থেকে আসা চোর, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। চুরি ও ডাকাতির জন্য মাসিক-দৈনিক মজুরিতে কিশোর-যুবকদের ভাড়া করছে অপরাধী চক্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরো রাজধানীজুড়ে এরকম শতাধিক অপরাধী কাজ করছে। অপরাধ ঘটিয়ে তারা সহজেই ঢাকার বাইরে পালিয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে অন্তত ১০টি বড় ধরনের অজ্ঞান করা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। গত শনিবার দৈনিক ইনকিলাবের চীফ রিপোর্টার রফিক মোহাম্মদের পূর্ব নয়াটোলার ভাড়া বাসায় এক দুর্ধষ চুরির ঘটনা ঘটে। ওই দিন দুপুরে ৭ তলা ভবনের ৪র্থ তালার বাসার তালা ভেঙ্গে সংঘবদ্ধ চোরের দল নগদ টাকা, সোনার গহনা ও ল্যাপটপসহ প্রায় ৭ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে রমনা থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত পুলিশ মালামাল উদ্ধার বা ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। একই সাথে ওই বাসার ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটেও চুরির ঘটনা ঘটে। দিনে দুপুরে একটা ৭তলা ভবনের দুটি ফ্ল্যাটে এক সাথে চুরির ঘটনায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেছেন, আগের মতো পুলিশের টহল নেই বললেই চলে। কোনো ঘটনা ঘটলে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। এ ছাড়া পুলিশ চোখে পড়ে না। অথচ পুলিশের দাবি, ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। রমনা বা মুগদা থানার মতো ডিএমপি সবগুলো থানায় প্রতিনিয়ত এরকম চুরির ঘটনা ঘটছে। মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, মিরপুর বিহারী পল্লীর আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পুলিশকে বার বার বলার পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন তা বেড়েইে চলেছে।
অনেকেই মনে করেন, গত ঈদুল ফিতরে রাজধানীতে পুলিশের অভিযান জোরদার করায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই অনেকটাই কমে এসেছিল। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ঈদুল ফিতরের আগে বিশেষ অভিযানে শতাধিক ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও অজ্ঞানপার্টির সদস্য গ্রেফতার হয়। জনগণের নিরাপত্তায় নেয়া হয় ভিন্নধর্মী কৌশল। এবারও তা অব্যাহত রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা দাবি করেন। তবে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিনই রাজধানীর অলিগলিতে চুরি, ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। ছিনতাইকারীদের হাতে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ঘটনা প্রকাশ পায়। কিন্তু আহত করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে কম। অস্ত্র ঠেকিয়ে বেশি ছিনতাই হয়। কখনও কখনও পরিচিত ব্যক্তির ভান করে থামিয়ে ছিনতাই হয়। চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার বেশিরভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। এতে করে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয় কম। মামলা হলেও চুরি ও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। এতে করে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে চাঁদাবাজিও। পেশাদার অপরাধী থেকে শুরু করে মৌসুমি অপরাধী, রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়লেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চুরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ