পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের নদ নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধিতে এখনো শঙ্কিত উপকুলবাসী। আসন্ন পূর্ণিমায় এ অঞ্চলের কমপক্ষে ১০টি নদ নদীতে পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। তবে আগামী আমাবশ্যায় পানির চাপ তুলনামুলক আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি নদীতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে খুলনা শহর রক্ষা বাঁধসহ খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার স্পর্শকাতর বাঁধগুলো আবারও চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক বাঁধ তলিয়ে পানি ঢুকছে শহরে ও গ্রামে। গত ১৫ দিনে খুলনা বাগেরহাট সাতক্ষীরা তথা গোটা উপকুলীয় অঞ্চলের অনন্ত দুই শতাধিক স্পটে নীচু বাধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। বাঁধ ভেঙ্গেছে বেশ কয়েকটি স্থানে। চরম ঝুকিপূর্ন অবস্থায় প্রায় ৭-৮টি উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার প্রহর গুনছে।
সূত্রমতে, আমাবশ্যার জোয়ারে খুলনা ও রূপসার বাঁধ উপচে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। গত সপ্তাহে জোয়ারে পানিতে তলিয়ে গেছে রূপসা উপজেলার প্রীফলতলা, আইচগাতি, সেনেরবাজারসহ বেশকিছু গ্রাম। এছাড়া প্রতিদিন দুই বেলা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে মহানগরীর ভেতরের নিম্নাঞ্চলের সড়ক। হঠাৎ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে চুকনগর এলাকা। ভদ্রা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এই আকস্মিক প্লাবন হয়। এদিকে, বৃহত্তর খুলনার রূপসা, ভৈরব, পশুর, চালনা, মংলা, শিবসা, কপোতক্ষ, ইছামতি, কাকশিয়ালি, শ্যামনগর, আশাশুনি খোলপেটুয়া, মরিচাপ ও কয়রার নদ নদীতে পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত আমাবশ্যায় এসব নদীর অববাহিকায় অবস্থিত বহু গ্রামের বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাছাড়া কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে যায়। বর্তমানে আরও ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে। পাউবোর সূত্রমতে, সাধারণ ২ দশমিক ৫৯ মিটারকে বিপদসীমা হিসেবে গন্য করা হয়। কিন্তু গত এক পক্ষকালে এ অঞ্চলের নদ নদীর পানি এই বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। গত আমাবশ্যা ও পূর্ণিমায় যে পানি হয়েছে তা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে এসব নদীগুলোতে ৩ দশমিক ৪৩ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে এর পরিমান আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। পাউবো উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, উজানের পানি এখনো আমাদের অঞ্চলের নদ নদীতে আসেনি। যে কারণে পানির চাপ তুলনামুলক কম। এই বিপদসীমায় প্রবাহিত পানির সাথে উজানের পানির চাপ থাকলে হয়তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো। তবে আগামী আমাবশ্যায় সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়া গত সপ্তাহে জোয়ারের সময় ক্ষোদ খুলনা মহানগরীর জেলখানা ঘাটের ওপারে গিয়ে দেখা গেছে, জোয়ারে পানির উচ্চতা বেড়ে নদী ও সড়ক একাকার হয়ে যাচ্ছে। পানির উচ্চতা এতোই বেড়েছে যে, জোয়ারের সময় দেখে বোঝার উপায় থাকে না, কোথায় নদী, কোথায় সড়ক।
অপরদিকে, মধুমতি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন দেখা দিলে পরানপুর গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে এসব মানুষের। বাগেরহাট জেলার চিতলমারীর বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামে মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিন দিন নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এসব মানুষেরা। সামান্য আয়ের এ মানুষগুলোর বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেলে রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
এদিকে, কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন ভয়াবহ আকারে রুপ নিয়েছে। গত ক’দিনে উজানের পানির তোড়ে আগরঘাটা বাজারের আশপাশের এলাকা সহ হরিঢালী ও কপিলমুনি ইউনিয়নের চার গ্রামের বহু মানুষের ঘর বাড়ি, ফসলী জমি, গাছপালা নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনরোধে অবিলম্বে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে ক্ষতিগ্রস্তরা সহ এলাকাবাসী।
অপরদিকে, সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর এলাকার দাতিনাখালী গ্রামে চূনা নদীর ওয়াপদার ভেড়ীবাঁধে ৫ নম্বর পোল্ডারে আবারও ফাটল ধরেছে। প্রায় ৫শ’ ফুট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে। খুলনার শেষ প্রান্ত সুন্দরবন উপকুল কালাবগী এলাকায় ভেড়ীবাধ চরম হুমকির সম্মুখীন। বাগেরহাটের শরনখোলা ও মংলার জয়মনিতে যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হতে পারে। অর্থাৎ কোন রকম ঝড় ঝঞ্জা হলেই এসব এলাকাকে রক্ষা করা কঠিন হবে।
এছাড়া সম্প্রতি দাকোপের সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বপ্নলোক কেন্দ্রের ব্যানারে নলিয়ানের নদী ভাঙ্গন সহ ১৪টি ঝুকিপূর্ন ভয়বহ নদী ভাঙ্গন মেরামতের দাবীতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। এদিকে, তালার কপতোক্ষ নদের পূরাতন নদী জেঠুয়া ভাটা হতে জেঠুয়া বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার বাঁধ এখন হুমকির মুখে। এখানে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিতে আশেপাশের গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে। শ্যামনগরের বেশ কয়েকটি গ্রাম জোয়ারের পানির নিচে তলিয়ে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী ২০ বছরের মধ্যে উপকূলের ৪ হাজার কিলোমিটার বাঁধ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার কিলোমিটারে পৌছাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তরে নেতিবাচক প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে উপকূলবেষ্টিত বেড়িবাধসহ সারাদেশের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাধসমূহের উপর ভয়াবহ রকমের এই ঝুকি ক্রমেই ত্বরান্বিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দুর্যোগ আসলেই কেবল টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। মন্ত্রী এমপি জনপ্রতিনিধিরা স্বস্তা বাহাবা নিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তড়িৎ কিছু কর্মকান্ড শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ ও স্থায়ী কোন পদক্ষেপ দুর্যোগের আগে নেয়া হচ্ছে না। গত একমাসে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের তিন জেলার ঝুকিপূর্ন অন্তত শতাধিক স্পটে বাঁধ তলিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ভাঙ্গন বেড়েছে এসব অঞ্চলে। আসন্ন ভরা কটালে পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা ৫-৬টি উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ নদী গর্ভে যাওয়ার জন্য প্রহর গুনছে। ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন নদ নদীতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।