পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতে অত্যধিক বর্ষণে ‘রেড অ্যালার্ট’ বহাল : বন্যার মুখে হাওর জেলা সুনামগঞ্জ
শফিউল আলম : ভারতে অতি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আর এ কারণে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের অববাহিকায় পানি ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে উজান ও ভাটি উভয় দিকেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ সংলগ্ন উজানভাগে হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চল ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে অত্যধিক বর্ষণ হচ্ছে। এ কারণে পাহাড়ি ঢল ও বন্যাজনিত সম্ভাব্য ব্যাপক দুর্যোগের ব্যাপারে চূড়ান্ত আগাম সতর্কতা ‘রেড অ্যালার্ট’ বহাল রাখা হয়েছে। উজানভাগে টানা অতিবৃষ্টির প্রভাবে ভাটিতে দেশের প্রধান নদ-নদী অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদ-নদীতে এই পানি বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও (তিন দিন) অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এমনকি এরপরেও তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশের নদ-নদীর প্রবাহের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর অববাহিকায়ও পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে সুরমা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল এ সময় হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্ব ভারতে উজানের মেঘালয়ের ঢলে সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে জাদুকাটা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। গত মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই বন্যার ক্ষত না শুকাতেই ফের বন্যার মুখে পড়লো হাওর জনপদ। তাছাড়া নেত্রকোনাসহ আরও বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতের মেঘালয়ের ঢলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে, দেশের ৯০টি নদ-নদীর পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল পানি বৃদ্ধি পায় ৫৩টিতে এবং হ্রাস পায় ৩৪টিতে। অথচ ঠিক আগের দিনে (বুধবার) পানি বৃদ্ধি পায় ৪৩টি এবং হ্রাস পায় ৪৬টি পয়েন্টে। যা নদ-নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধির সূচক বহন করছে। সর্বশেষ ৪টি নদী ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরমধ্যে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা নদীর পানি গত বুধবার কিছুটা কমলেও গতকাল ৩০ ঘণ্টায় ফের বৃদ্ধি পেয়ে কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদ পয়েন্টে কিছুটা হ্রাস পেয়ে শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর জেলা সুনামগঞ্জ। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অতি বর্ষণের কারণে সুনামগঞ্জের জাদুকাটা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৩ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে খুলনায় পশুর নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে হিমালয় পাদদেশীয় এলাকা ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে অতি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢল এবং বন্যার পানি ভাটির দিকে ধেয়ে আসতে থাকলেই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা-পদ্মা এবং মেঘনা (সুরমা-কুশিয়ারা) এই প্রধান তিনটি অববাহিকার নদ-নদীসমূহের উৎসভাগের মূল অববাহিকা বা ক্যাচমেন্ট এরিয়া ভারতে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে। ভাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের নদ-নদীর পানির ৭০ থেকে ৯০ শতাংশেরই উৎস হচ্ছে ভারতের উজান অববাহিকায়।
সাব-হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ভারী থেকে অত্যধিক ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে সেসব অঞ্চলে বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগের চূড়ান্ত সতর্কতা রেড অ্যালার্ট এবং বিভিন্ন অঞ্চলে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সতর্কতা বা অরেঞ্জ অ্যালার্ট বলবৎ রাখা হয়েছে আগামী ১৪ আগস্ট সোমবার অবধি। উজানের অতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি বাংলাদেশের ভাটিতে নেমে আসতে শুরু করলে আগামী সপ্তাহের দিকে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে বন্যা দেখা দিতে পারে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, ভারতের বিশাল অঞ্চলজুড়ে টানা অতি ভারী বর্ষণের কারণে রেড অ্যালার্ট বহাল রাখা হয়েছে। ভারী থেকে অত্যধিক বর্ষণে ভারতের উজানভাগের বরাকসহ বিভিন্ন নদ-নদীর অববাহিকায় পানি বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের উজানভাগের পার্বত্যাঞ্চল উত্তর-পূর্ব ভারতে অতি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সাব-হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর রাজ্যগুলোতে টানা ভারী থেকে অত্যধিক ভারী বর্ষণ হচ্ছে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ি ঢল এবং বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কা থেকে ভারত সরকার সতর্কতা বজায় রেখেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত ও পূর্বাভাসে জানা যায়, ভারী থেকে অতিভারী ও অত্যধিক বর্ষণের ফলে সাব-হিমালয়ান গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যগুলোতে রেড অ্যালার্ট তথা বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সম্ভাব্য দুর্যোগের চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়। আজ (শুক্রবার) থেকে আগামী সোমবার (১১, ১২, ১৩ ও ১৪ আগস্ট) পর্যন্ত পরবর্তী ৪ দিনে ভারী থেকে অত্যধিক ভারী বর্র্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এরফলে উপরোক্ত অঞ্চলজুড়ে অতিবর্ষণে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে দুর্যোগের চূড়ান্ত সতর্কতার লক্ষ্যে ‘রেড অ্যালার্ট’। এরমধ্যে রয়েছে সাব-হিমালয়ান গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মনিপুর। আজও সেসব অঞ্চলে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতা বজায় রাখা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।