Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সব ক্ষমতারই ঝোঁক থাকে দুর্নীতির প্রতি

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়-১৯

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট অষ্টম সংশোধনী ও পঞ্চম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তা সংবিধানের অংশ করেছে, কেননা শীর্ষ আদালতের সিদ্বাস্তই চূড়ান্ত। আর সেটা শুধু এই কারণে নয় যে সেগুলো অভ্রান্ত, বরং এই কারণে যে, সিদ্ধান্তগুলো সাংবিধানিকভাবে চূড়ান্ত বিধায় সেগুলো অকাট্য এবং প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের আরও দুজন সতীর্থ সিনিয়র বিচারক নিয়ে গঠিত সুপ্রিম জডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানকে পঞ্চম সংশোধনী মামলায় শীর্ষ আদালত আরও স্বচ্ছ দেখতে পেয়েছে এবং সেটি বাতিল ও কাটছাট না করে নবম জাতীয় সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একে স্কীকৃতি দিয়েছে, সেহেতু আমি এই অভিমত দিচ্ছি যে, উচ্চতর বিচার বিভাগের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে অর্পণ করার ক্ষেত্রে আমার সতীর্থ ভাইদের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। অপরদিকে উচ্চতর বিচার বিভাগের বিচারকদের নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইনসভা অনুচ্ছেদ ৯৫(২)(গ) অনুসারে কোন আইন পাস না করায় বিচারক নিয়োগের দায়িত্ব প্রথান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বর্ণিত কাউন্সিলের ওপর দিতে হবে। প্রথান বিচারপতি কোন প্রার্থীর ব্যাপারে অন্যান্য বিভিন্ন পন্থায় তথ্য/মতামত সংগ্রহ করতে পারেন এবং এর পর তিনি প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে চূড়ান্ত নিয়োগ/অপসারণ আদেশ সংগ্রহ করতে পারেন। এই পদ্ধতি অনুসৃত না হলে এবং সাংবিধানিক নির্দেশনার বাইরে উচ্চতর আদালতে বিচারক নিয়োগ কিংবা অপসারণের ক্ষমতা নির্বাহী/আইনসভাকে দেয়া হলে একটা আশঙ্কা থেকে যাবে। তা হচ্ছে ঐ দুটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সুপিরিয়র হওয়ায় অন্য যেকোন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করতে পারে। ফলে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের ক্ষমতা পৃথকীকরণ ও স্বাধীনতা সম্পর্কিত সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ক্ষুন্ন হবে। সেক্ষেত্রে লর্ড একশন-এর পর্যবেক্ষণ ‘সব ক্ষমতারই দুর্নীতির প্রতি ঝোঁক থাকে, চরম ক্ষমতাই চরম দুর্নীতিপরায়ণ’ কথাগুলো প্রযোজ্য। বীর শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে উপেক্ষা করে আমাদের রক্ত স্রাত সংবিধানের প্রস্তাবনায় এবং ৮ অনুচ্ছেদে এমনই লক্ষ্য জুড়ে দেয়া হতাশাব্যাঞ্জক। এই অভিমত ও পর্যবেক্ষনের ভিত্তিতে আমি বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতির যুক্তিতর্ক ও আমার বিজ্ঞ ভ্রাতৃবৃন্দের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। অতএব উপরোক্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই আপিল খারিজ হলো।
বিচারপতি মির্জা.......
আদেশ
যেহেতু একজন (বিচারপতি) ছাড়া এক্সপাঞ্জসকলেই তাদের পৃথক পৃথক রায়ে অভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন, সেহেতু আমরা সর্বসম্মতভাবে আপিলটি খারিজ ও প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণে উল্লেখিত হাইকোর্ট বিভাগের মন্তব্য প্রত্যাহার (এক্সপাঞ্জ) করিলাম এবং অনুচ্ছেদ ৯৬-এর (২), (৩), (৪), (৫), (৬) ও (৭) ধারা পূনঃপ্রর্বতন করতঃ মূল রায়ে প্রণীত আচরণ বিধি অনুমেদন করিলাম।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা,
বিচারপতি মোঃ আন্দুল ওহহাব মিয়া,
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা,
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন,
বিচারপতি মহাম্মদ ইম্মান আলি,
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী
বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ষোড়শ সংশোধনী

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ