নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনকক্ষ দেখে একটু অবাকই হলেন মুশফিকুর রহিম, ‘বিশাল সমাগম!’ কৌতুক করেই বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন এক-দেড় ঘণ্টা হবে নাকি?’
কেউ একজন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ককে জানালেন, ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে বলেই হয়তো তাঁর সংবাদ সম্মেলন নিয়ে সবার এত আগ্রহ। মুশফিক আপত্তি তুললেন এই ‘ঐতিহাসিক’ শব্দটাতেই। উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘ঐতিহাসিক কেন? বাংলাদেশ খেললেই ঐতিহাসিক হয় নাকি? নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারতে গেলাম টেস্ট খেলতে, সেগুলোও বলা হলো ঐতিহাসিক।’
ইতিহাসের ছাত্র মুশফিক পরে অবশ্য মানলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজটা আসলেই ঐতিহাসিক। প্রায় আধঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে অধিনায়ক বললেন, ভালো খেলেই সিরিজটা স্মরণীয় করে রাখতে চান তাঁরা, ‘প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অন্যান্য দলের মতো বছরে ১০-১২টা টেস্ট খেলি না। আমাদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দিন পরপর খেলি বলে প্রতিটি টেস্টই আমাদের জন্য ঐতিহাসিক হয়ে যায়। তবে ম্যাচ শেষেও যেন এটি “ঐতিহাসিক” হয়ে থাকে। যেন বলতে পারি, বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছিল।’
কম্বিনেশন নিয়ে মুশফিকের কখনও ন্যুনতম ধারণা দেন না, এবারও দেননি। তবে নিজের ব্যাপারে আগে কখনও খুব একটা রহস্য করেননি। এবার নিজেকেও ঢেকে রাখলেন ধোঁয়াশায়। টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়ায় শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম টেস্টে কিপিং ছেড়ে মুশফিক খেলেছিলেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। লিটন দাসের চোটে পরের ম্যাচেই ফিরেন কিপিংয়ে। সেই ম্যাচে উইকেটের সামনে পিছনে তার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। লিটন চোট থেকে সেরে উঠেছেন, আছেন দলেও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে উইকেটের পেছনে কে দাঁড়াবেন? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেননি অধিনায়ক, লম্বা সময় কিপিং করার পর চার নম্বরে ব্যাটিং করা খুব কঠিন। এ নিয়ে আমাদের চিন্তা আছে। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে যেভাবে বলেছে, চেষ্টা করবো সেভাবে করার। এটা কাল দেখতে পারবেন আশা করি। আমি যেখানেই ব্যাটিং করি না কেন, আমার সব সময়ই ইচ্ছা থাকে যতটা সম্ভব দলের জন্য অবদান রাখার।’
বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললে চারে ব্যাট করেন মুশফিক। কিপিং করলে ছয়ে। এই প্রসঙ্গ ধরেই এল ঢাকা টেস্টের কম্বিনেশন। যথারীতি একাদশে স্কোয়াডের সবাইকে রেখে দিলেন অধিনায়ক, ‘আমাদের কম্বিনেশনের কথা যদি বলেন, আমাদের স্কোয়াডে তিনজন করে পেসার-স্পিনার আছে। ওয়েদার, কন্ডিশন তো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এর সঙ্গে পিচ, প্রতিপক্ষের কতজন ডানহাতি-বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে সব বিবেচনা করে আমাদের সঠিক কম্বিনেশন ঠিক করতে হবে। সাকিবের মতো একজন বিশ্বমানের অলরাউন্ডার আছে আমাদের, যে কি না আমাদের একজন বাড়তি বোলার বা ব্যাটসম্যান খেলানোর সুবিধা দেয়। একাদশের জন্য আমরা ম্যাচের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।’
কলম্বোয় বাংলাদেশের শেষ টেস্টের আগ পর্যন্ত তিন নম্বরে স্বয়ংক্রিয় পছন্দ ছিল মুমিনুল হক। সেই ম্যাচের একাদশে জায়গা হারানোর পর তিনি বাদ পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দল থেকে। এ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর দলে ফিরেন মোসাদ্দেক হোসেনের চোখের সমস্যায়। মুমিনুলের জায়গায় শ্রীলঙ্কায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ইমরুল কায়েসকে খেলায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে খুব ভালো না করলেও তিন নম্বরে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে খেলে যাওয়ার সবুজ সংকেত দিয়েছেন কোচ। মোসাদ্দেকের জায়গায় মুমিনুল দলে ফেরার পর তাকেই তিন নম্বরে দেখতে চায় ক্রিকেট ভক্তদের বড় একটা অংশ। ১৪ জনের সবাই একাদশে খেলার যোগ্য এই ব্যাপারকেই বাড়তি গুরুত্ব দিতে চান মুশফিক। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার এটাও একটা প্রমাণ, ‘এটা ভালো যে আমাদের কাছে ‘এনাফ রিসোর্স’ আছে। আমরা যদি ভালো খেলি এবং যদি ম্যাচটাও জিততে পারি তাহলে সেই খুশিতে যেন তার (হাথুরুসিংহের) ঘুমাতে না পারে।’
একদিন আগেও অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে উইকেট ছিল রহস্যময়। জানতেই পারছিল না কোন উইকেটে হবে খেলা। অবশেষে মিরপুর টেস্ট উইকেট দেখতে পেরেছেন স্মিথরা। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের কাছে উইকেট মনে হচ্ছে মন্থর। তবে উইকেট দেখেও সম্ভাব্য আচরণ নাকি ঠিক অনুমান করতে পারছেন না মুশফিকও, ‘আসলে মিরপুরের উইকেট পড়া কঠিন। আবাহাওয়া ও কন্ডিশনও ভিন্ন। যদিও আমরা অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি, তারপরও উইকেট নিয়ে অনুমান করা কঠিন। এরকম আবহাওয়ায় উইকেটের ধরণ সব সময় পরিবর্তন হতে থাকে। দেখা যায় সারাদিন রোদ পাওয়া যায় না, আবার একটা সময় পাওয়া যায়। এটা কঠিন।’
এ মাসের শুরুতে চট্টগ্রামে অনুশীলন ক্যাম্পের সময় মুশফিক বলেছিলেন, ইংল্যান্ড সিরিজের মতো টার্নিং উইকেট চান এই সিরিজেও। সেই প্রতাশা কি মিটতে যাচ্ছে? বাংলাদেশ অধিনায়ক জানালেন আবহাওয়ার কারণে কিউরেটরের সীমাবদ্ধতার কথা, ‘যে উইকেট প্রস্তুত করছে, তার জন্যও কাজটা কঠিন। কারণ যে কন্ডিশন- কতুটুক পানি দিতে হবে, রোদ উঠবে কিনা পরদিন, এগুলো বিবেচনায় আনতে হবে।’
বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে উইকেটের ধরনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ খেলার ধরন, ‘উইকেট যেমনই হোক, দুই দলের জন্য সব কিছু সমান হবে। কন্ডিশনের সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে আমারা কতুটুক নিবেদন দেখাতে পারি। আপনি যতই ভালো কন্ডিশন পান না কেন যদি আপনি পারফর্ম করতে না পারেন তাহলে কিছুই ভালো হবে না। আমাদের প্রথম ইনিংস অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেটা বোলিং বা ব্যাটিং হোক। আমরা যেন শুরুতেই ওপরে থাকতে পারি। চেষ্টা করব ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করতে। প্রত্যেকটা সেশন বাই সেশন, বল বাই বল যদি ভালো করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু সম্ভব।’
উইকেট শেষ পর্যন্ত যেমনই হোক, অধিনায়কের ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশও। কে না জানে, ম্যাচ জয়ের উইকেটই সবচেয়ে ভালো উইকেট! পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট
বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া
৯ বর্তমান র্যাঙ্কিং ৪
৪ মোট ম্যাচ ৪
০ জয় ৪
৪ হার ০
৪২৭ (ফতুল্লা, ২০০৬) দলীয় সর্বোচ্চ ৫৮১/৪ ডি. (চট্ট., ২০০৬)
৯৭ (ডারউইন, ২০০৩) দলীয় সর্বনিম্ন ২৬৯ (ফতুল্লা, ২০০৬)
শাহরিয়ার নাফিস- ১৩৮ ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ জেসন গিলেস্পি- ২০১*
হাবিবুল বাশার- ২৮২ (৮ ইনি.) ব্যক্তিগত মোট লেহম্যান- ২৮৭ (২ ইনি.)
মোহাম্মাদ রফিক- ৫/৬২ সেরা বোলিং স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল- ৮/১০৮
মোহাম্মদ রফিক- ১১টি সর্বোচ্চ উইকেট স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল- ৩৩টি
খালেদ মাসুদ- ৩টি সর্বোচ্চ ডিসমিসাল অ্যাডাম গিলক্রিস্ট- ১৫টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।