Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে আসছে গরু

| প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন : রাজধানীর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়ক ও নৌপথে গরু আসতে শুরু করেছে। দেশের সড়ক মহাসড়ক ভাঙ্গাচোরা থাকায় পশুভর্তি ট্রাক নিয়ে ব্যাপারীরা দ্রæত আসতে পারছে না। এতে তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। তাই এবার অনেক ব্যাপারী নৌ-পথে গরু নিয়ে আসছেন। রাজধানীতে ২৩টি পশুর হাটে এখনও পুরোদমে কেনাবেচা শুরু হয়নি। পশু বেপারী ও খামারীরা ভারত ও মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে গরু আসায় লোকসানে পড়ার আশংকা করছেন। খামারী ও বেপারীদের অভিযোগ, দেশে কোরবানীর জন্য পর্যাপ্ত পশু থাকলেও সীমান্ত পথ দিয়ে বিজিবির সহযোগিতায় অবাধে গরু আসছে। এতে তারা ন্যায্য মূল্য পাবেন কিনা সে ব্যাপারে শঙ্কিত। অবাধে ভারতে গরু আসতে থাকলে আগামীতে দেশের অভ্যন্তরে গরু উৎপাদন কমে যাবে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকায় এবার রাস্তায় এখনো চাঁদাবাজি শুরু হয়নি। এতে ব্যপারি ও খামারিরা কিছুটা স্বাচ্ছন্দে তারে পশুভুর্ত গাড়ি নিয়ে ঢাকায় আসতে পারছেন। এবার উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও যশোর থেকে বেশি গরু, ছাগল ও মহিষ আসছে। বেশি লাভের আশায় কোরবানির পশু নিয়ে ওই সব এলাকা থেকে ব্যাপারীরা ছুটছেন রাজধানীতে। হাটেও গরু ওঠাতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন ঢাকার ইজারাদাররা। অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে খুঁটি কিনছেন ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগও রয়েছে। গরুর খাবারের উপকরণসহ সবকিছুই মিলছে বাড়তি দামে।
রাজধানীর হাটগুলোর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষের পর্যায়ে রয়েছে। হাটে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। হাটগুলোকে কেন্দ্র করে র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সক্রিয় রয়েছে। পশু কেনা-বেচার সময় যাতে টাকা পরিবহন ও জাল টাকা নিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য কাজ করছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে অনেক স্থানে অবৈধ হাট বসছে। অনেক স্থানে সড়কের মাঝেই একাধিক তোরণ নির্মাণ করে হাট বসানো হচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। দেশের মহাসড়কগুলোতে পশুবাহী ট্টাকে যাতে ছিনতাই বা চাঁদাবাজির ঘটনা না ঘটে সে জন্য সক্রিয় রয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। রাজধানীর ২৩টি হাটকে কেন্দ্র করে মহানগর পুলিশ ও র‌্যাবের তিন স্তর বিশিস্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। বেপারীরা স্বাধীনভাবে যাতে পশু তাদের পছন্দমত হাটে নিয়ে যেতে পারেন সে জন্যও র‌্যাব-পুলিশ সক্রিয়।
র‌্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি বেনজীর আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি বছরই আমরা কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশের হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি। রাজধানীসহ সারাদেশে পশু পরিবহন ও নিদিষ্ট হাটে পৌছাতে চাঁদাবাজি বা অন্য কোন সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য র‌্যাব কাজ করছে। আমরা আগেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। ফলে এখন কোন সমস্যা হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতি মুহুর্তে উন্নত করার জন্য র‌্যাব কাজ করছে। রাজধানীসহ সারাদেশের বড় বড় হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্ত করনে মেশিন বসানো হয়েছে। বেপারীরা পশু বিক্রির পর যাতে নগদ টাকা নিরাপদে রাখতে পারেন সে জন্যও কাজ করেছে র‌্যাব।
প্রানি সম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আইনুল হক সাংবাদিকদের জানান, দেশে যে সংখ্যক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে তা দিয়ে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। সারাবছর দেশে প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। এর প্রায় ৫০ ভাগ জবাই করা হয় কোরবানির ঈদের সময়। সে হিসেবে কোরবানির ঈদের সময় প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ পশুর দরকার হয়। এই সংখ্যক গবাদিপশু দেশের খামারি ও গৃহস্তদের ঘরে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে প্রতিটি হাটের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ডিএমপি। কোরবানি পশুর হাটের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক সমন্বয় সভায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রাজধানীর পশুর হাটে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শ্যামপুর বালুর মাঠের ইজারাদার শেখ মাসুদ রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হাট পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এরই মধ্যে ৫শতাধিক গরু এসে গেছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে কয়েক হাজার পশু হাটে উঠবে। তিনি অভিযোগ করেন যে, পাশেই জুরাইন বালু মাঠে অবৈধ হাট বসানো হচ্ছে। এতে করে নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। তিনি এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করছেন, গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে খুঁটিপ্রতি। এছাড়া হাটের ব্যবসা না জমলেও গরুর খাবারের উপকরণসহ সবকিছুই মিলছে বাড়তি টাকায়। রাজধানীতে দিনের তুলনায় রাতেই বেশি ঢুকছে ট্রাকভর্তি গরু। হাটে সবচেয়ে বেশি আসছে দেশী গরু। পাশাপাশি ভারতীয় ও মিয়ানমারের গরু ও আসছে গাবতলীর হাটে। রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ-উল-আযহাকে ঘিরে রাজধানীর পশুরহাটে কোরবানির পশুর আমদানি শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ অনুযায়ী ঈদের ৪ দিন আগে থেকে নগরীর অস্থায়ী পশুরহাট বসার কথা রয়েছে। কিন্তু এসব হাটের ইজারাদাররা ৬-৭ দিন আগেই গরু, মহিষ রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। ফলে ঈদের আগ মুহূর্তে সড়কে যানজট ও চাঁদাবাজি এড়াতে এবং দর্শনীয় স্থানে পশু রাখার জন্য ব্যাপারীরা আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর এসব হাটে গরু আনা শুরু করে দিয়েছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটগুলো বাঁশ দিয়ে খুঁটি গেড়ে প্রায় প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব হাটে পশু আমদানি শুরু হলেও বেচাকেনা জমতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। হাটে ঈদ আমেজ। নানা রঙে সাজানো হয়েছে ব্যানার ও গেট। ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন হাটের ইজারাদাররা। জানা গেছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানীর ২৩ স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে রয়েছে ২২টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী হাট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩টি হাট বসবে। একমাত্র স্থায়ী হাট গাবতলীতেও ােরবানির পশু কেনাবেচার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবার কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসাবে ১৩টি স্থানে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-মেরাদিয়া বাজার, উত্তর শাহজাহানপুর-খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ এবং সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, আমরা এ বছর ১৩টি হাট ইজারা দিয়েছি। হাটে নাগরিকগণ যাতে স্বাভাবিক পরিবেশে কোরবানির পশু কিনতে পারেন সেই দিকে লক্ষ্য রাখা হবে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোশেন এবার ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসাবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুড়িল ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন, বসিলা এলাকা, মিরপুর ডিওএইচএস, উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টর, খিলক্ষেত বনরূপা এলাকা, আশিয়ান সিটি, ভাটারার সাঈদনগর, আফতাবনগর ও মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশন। ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা এবারের হাটগুলো রাজধানীর জনবহুল এলাকা থেকে একটু দূরে দেয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে পশুর হাটের জন্য যানজটের সৃষ্টি না হয়। হাটগুলোতে সুস্থ ব্যবস্থাপনা রাখতে ইজারাদারদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশ যখন প্রানিসম্পদ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে, গড়ে উঠেছে ৫ লাখ ২২ হাজারের বেশি খামার, তখনই ভারতীয় গরু ঢুকতে দেয়ার ক্ষেত্রে সীমান্তে নমনীয়তাকে আন্তজাতিক ষড়যন্ত্র মনে করছেন খামারিরা। চোরাই পথে গরু আসা প্রতিরোধে নিস্কিয় বিজিবি। অথচ ভারতীয় সীমান্তের ৯৬টি পথ দিয়ে গরু আনার ব্যাপারে আগের কঠোর অবস্থান শিথিল করেছে বিএসএফ। সীমান্ত দিয়ে অবাধে অবৈধভাবে গরু আসার কারণে আর্থিক ক্ষতির আশংকায় রয়েছেন দেশের খামার মালিকরা। উৎসাহ হারাবেন খামারীরা, ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের অর্থনীতি। খাটাল ছাড়াও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে বিজিবির সহযোগিত্য়া বন্যার পানিতে গরু ভাসিয়ে নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা।



 

Show all comments
  • Hossain ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৩:৩২ এএম says : 0
    WE need more meat because meat is very expensive . middle class people can't buy meat so they live with out proper nutrition. Unless we have enough to feed our own people. I rather prefer to import more cow no matter from where to meet our need.
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজ ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:২৬ পিএম says : 0
    সীমান্তের করিডোর দিয়ে ঢুকছে ভারতীয় গরু। এটা বন্ধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবু রায়হান ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:২৭ পিএম says : 0
    জরুরিভাবে করিডোরগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:২৮ পিএম says : 0
    মহাসড়কগুলোতে পশুবাহী ট্টাকে যাতে ছিনতাই বা চাঁদাবাজির ঘটনা না হয় সেদিকে প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আসিফ ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:২৯ পিএম says : 0
    কেউ কী বলতে পারেন এবার গরুর দাম কেমন ?
    Total Reply(0) Reply
  • আতিক ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:৩০ পিএম says : 0
    পশুর হাটের জন্য যেন যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:৩৩ পিএম says : 0
    কোন সীমান্ত দিয়েই যাতে গরু প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে সরকার ও প্রশাসনকে নজর দিতে হবে। না হলে আবার আমাদেরকে গরুর জন্য ভারতনির্ভরশীল হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গরু

২৪ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ