Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলের সীমান্তে চামড়া পাচার রোধে সতর্কাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক কাটছে

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এবার টানা ১৫ দিন কোরবানীর চামড়া পাচার রোধে সতর্ক অবস্থায় থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। খুলনাঞ্চলের সীমান্তবর্তী ৪টি করিডোরে থাকছে বিশেষ নজরদারি। দৈনিক ইনকিলাবে খবর প্রকাশ এবং ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে এ অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ী ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাঝে সৃষ্ট আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে। তবে প্রতিদিন সীমান্তের ৪টি করিডোর দিয়ে ভারতীয় গরু আসায় এ অঞ্চলের খামারীরা বিপাকে পড়েছে। কিন্তু কোরবানীর গরু কেনা ক্রেতারা ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশের খবরে স্বস্তি ফেলছে। গরুর বাজারমূল্য আগুন থাকায় ভারতীয় গরু আসলে সে আগুন কিছুটা কমতে পারে বলে ক্রেতারা মনে করেন।
সূত্রমতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কোরবানীর পশুর চামড়া পাচারের আশংকা রয়েছে বলে দৈনিক ইনকিলাবে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর সাথে গত ২০ আগষ্ট খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা খুলনার ফেরিঘাট, ব্রিজ এলাকা এবং সাতক্ষীরার সীমান্তগুলো দিয়ে যাতে চামড়া পাচার না হয় তার দাবি জানান সরকারের কাছে। অবশেষে চামড়া পাচার রোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী টানা ১৫ দিন বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহন করে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি সহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা সর্তক অবস্থায় থাকবে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারতের কয়েকটি প্রদেশে গরু জবাই বন্ধ থাকলেও ট্যানারি বন্ধ হয়নি। আর সেকারণে এবারের চামড়া ভারতে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে তাই ভারতীয় বøাকাররা চামড়া পাচারে এবার আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের চোরাচালানীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মোকামে বøাকে চামড়া নিতে অর্থলগ্নি করছে। খুলনাঞ্চলের সীমান্ত তথা অবৈধ ঘাটগুলো দিয়ে প্রতি বছর চামড়া পাচার হয়। খুলনাঞ্চলে ৪টি করিডোরের মধ্যে রয়েছে কলোরোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া, সাতক্ষীরা জেলা সদরের সাতানী, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর ও দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া। গত কয়েকদিন ধরে ট্রাকযোগে করিডোর অতিক্রম করে হরিয়ানা জাতের গরু আসছে। পশু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের আওতায় খামারীরা জেলার পশুর হাটগুলোতে গরু ছাগল আনতে শুরু করেছে।
খুলনাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পশুর হাটগুলো হচ্ছে কলারোয়ার হাট, সাতমাইল হাট, দেবহাটার পারুলিয়ার হাট, কালীগঞ্জের হাট, শ্যামনগরের হাট, সাতক্ষীরা সদর হাট, আশাশুনির হাট, তালার হাট, দিঘলিয়া উপজেলার পথের বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বারাকপুর স্কুল মাঠ ও মোল্লা জালাল উদ্দিন কলেজ মাঠ, রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ পূর্বপাড়া, বাগমারা ও আমতলা, পাইকগাছা উপজেলার বাকা, গদাইপুর, চাঁদখালী ও কাছিকাটা, ডুমুরিয়া উপজেলার বানিয়াখালী, খর্ণিয়া, চুকনগর, সাহাপুর, কয়রা উপজেলার আমাদী, হোগলা, ঘুগরা কাঠি, গিলেবাড়ী, হায়াতখালী ও বানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, দাকোপ উপজেলার চালনা ও বাজুয়া, ফুলতলা উপজেলা সদরের তাজপুর, তেরখাদা উপজেলা সদরের ইখড়ি কাটেঙ্গা, ও আঠারো মাইল, বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোরিয়া ছাগলের হাট ও খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট। কেসিসি’র সূত্র জানায়, আগামী শনিবার থেকে জোড়াগেটে পশুর হাট বসতে শুরু করবে। পশুর হাটের নিরাপত্তায় ৮টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। কেএমপির একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও জালনোট প্রতিরোধের জন্য মেশিন বসানো হবে।
অপরদিকে, ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতা, লবনের মূল্য বৃদ্ধি, পুজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রির টাকা সময় মত না পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে সুযোগ বুঝে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চামড়া বাজারের নিয়ন্ত্রন নিতে কোটি কোটি টাকার পুজি লগ্নি করেছে। এ ক্ষেত্রে অনেক পুজিপতিরা হুন্ডির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খুলনাঞ্চলে বিনিয়োগ করছে। এ কারনে এবারের কোরবানির চামড়া খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও টেনারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রমতে, গত অর্ধযুগে চামড়া পাচার বেড়েই চলেছে। আসছে কোরবানী। অথচ খুলনাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই। মূলধনের অভাবে ব্যবসায়ীরা সাধারণত বাকিতে বেচা কেনা করেন। পরবর্তীতে ঢাকার আড়ৎ থেকে বকেয়া টাকা আদায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হাপিয়ে ওঠে। প্রায় শত বছর পূর্বে গড়ে ওঠা খুলনা শের-এ-বাংলা রোডের চামড়া পট্টিতে কাঁচা চামড়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল প্রায় দুই শতাধিক। এর মধ্যে এখন কোনও রকমে টিকে আছে মাত্র ২/৩টি প্রতিষ্ঠান। ঈদের আগেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। এক বস্তা লবণ এখন কিনতে হচ্ছে ১২৫০ টাকা দিয়ে। সব মিলিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত এই চামড়া শিল্পের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের রাজম্ব কমবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়া

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ