পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যবসায়ীদের মতে বিনিয়োগ অব্যাহত থাকলে রফতানি আয় ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে
সোহাগ খান : চামড়া শিল্পের বোদ্ধাদের মতে ‘ফরাসিদের ফ্রেঞ্চ কাফের’ পর মানের দিক থেকে আমাদের দেশের চামড়াই দুনিয়ার সেরা। এরকম স্মুথ গ্রেইনের চামড়া বিশ্বের অন্য কোথাও মেলে না। তারপরেও পিছিয়ে ছিল আমাদের দেশের চামড়া শিল্প। কিন্তু গত তিন অর্থবছর থেকে সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে চামড়াজাত পণ্য রফতানির পরিমাণ। কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, চামড়ার জুতা উৎপাদনকারী প্রধান দেশ চীন, ভিয়েতনাম এবং ব্রাজিল এ খাত থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ হয়ে ওঠছে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের প্রধান আকর্ষণ। কারণ এ শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত কাঁচামাল, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, সস্তা শ্রম এবং জুতা তৈরির জন্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা।
এছাড়া চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে সরকারের ১৫ ভাগ ভর্তুকি সুবিধার ফলে বিদেশি উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে বলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। যার ফলে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এই খাতে। চামড়া শিল্পে রফতানি বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে বিনিয়োগ। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে দেশে। আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানিতে সুবিধা থাকায় ডলারেও টান পড়ছে না। সরকারি শুল্কে ছাড় রয়েছে বেশ পর্যাপ্ত পরিমাণে। লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর জানান, এরই মধ্যে অন্তত ৫১টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশের পাদুকা শিল্পে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জুতা প্রস্তুতকারী দেশ চীন এখন বিশ্ববাজার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে গার্মেন্টসের মত আমাদের দেশে এখন এ খাতের ব্যবসা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। বিপুল সম্ভাবনাও আছে এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার। চীনের চামড়া শিল্প নিয়ে রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেট ডটকমের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১২-১৩ সালে চীনে চামড়ার তৈরি জুতা শিল্পের উৎপাদন ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। চীনের ছেড়ে দেয়া বিশ্বের জুতার বাজারের ওই অংশটিই ধরতে চাইছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছর পাদুকা রফতানি করে ৪১ দশমিক ৯৩ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে হয়েছে ১২৯ কোটি ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের ৪ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে ২৩৪ কোটি ডলার আয় হয়েছে চামড়াজাত পণ্য থেকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৩০৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে যা মোট রফতানি আয়ের প্রায় ১০ ভাগ।
চামড়া ছাড়া সিন্থেটিকের জুতা বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে সিন্থেটিক জুতার উৎপাদনও বাড়ছে। কাঁচামাল তৈরিতেও বিশেষ নজর দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। জুতার বাক্স আগে আনা হত চীন, ভারত থেকে। তবে এখন থেকে বাক্স তৈরিতে দেশে আর অসুবিধা নেই।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় জুতা বিক্রেতা ডাচম্যানের তিন হাজার আট শতাধিক শোরুম রয়েছে। যারা এখন বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত জুতা আমদানি শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির শিরদাঁড়া শক্ত হতে শুরু হয়েছে । এছাড়াও চীনের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে তৈরি পোশাক খাতের পর এবার চামড়া শিল্পে নতুন আশার হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাদের বিশ্বাস, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাদুকা প্রস্তুতকারী দেশ চীন এ খাত থেকে নজর সরিয়ে নেয়ায় বাংলাদেশই হতে চলেছে চামড়া শিল্পের বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরবর্তী গন্তব্য।
এ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মন্জুর বলেন, আমেরিকা ছাড়াও বাংলাদেশের জুতা যাচ্ছে ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ইতালি, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়ামে। রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানেরও খুব পছন্দ বাংলাদেশী জুতা। চামড়ার গুণগত মান তুলনাহীন হওয়ায় রফতানি বেড়েছে, বেড়েছে চাহিদাও।
তিনি আরও বলেন, “গার্মেন্টস শিল্পের ক্ষেত্রে শুরুতে যেটা হয়েছিল, তারা বিদেশি অর্ডার পেত কিন্তু ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ছিল না। পরে সেটা ডেভেলপ করে। আর চামড়া শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ, মানে র’ম্যাটেরিয়াল বা কাঁচাচামড়া, সেই চামড়াকে প্রক্রিয়াকরণের কারখানা প্রচুর রয়েছে এখানে। অর্থাৎ চামড়ার জুতা তৈরির সকল ধরনের সুবিধাই প্রস্তুত। আমি মনে করি, গার্মেন্টস শিল্পের পর চামড়া শিল্পই এখন বিদেশি বিনিয়োগ আসার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত।”
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১০টি রফতানিমুখী কারখানায় চামড়ার পাদুকা তৈরি হয়। এর মধ্যে এপেক্স, এফবি, পিকার্ড বাংলাদেশ, জেনিস, আকিজ, আরএমএম, বেঙ্গল এবং বে’র রয়েছে নিজস্ব ট্যানারি ও চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। এর বাইরে শুধু চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে এমন কারখানার সংখ্যা ২০৭টি।
এ শিল্প থেকে চীনের পিছিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফুটওয়্যার অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, চীনের বাজারে শ্রমিকদের বেতন আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। আগের মতো সস্তা শ্রম না মেলায়, হাইটেক ব্যবসায় মনোযোগী হচ্ছে চীন।
তার হিসাব অনুযায়ী দেশীয় চাহিদা ও রফতানি মিলিয়ে এখন বাংলাদেশের জুতার বাজারের আকার প্রায় ৫০ কোটি ডলারের। আর দেশের পাদুকা শিল্প এখন সম্প্রসারিত হওয়ার জন্য অনেক বেশি তৈরি। বিভিন্ন সুবিধার কারণে আমাদের এ বাজার বিদেশিদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় খাত। আর এতো সস্তায় বিদ্যুৎ পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না, সেটাও একটা বড় দিক। সব মিলিয়ে বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগ উপযোগী স্থিতিশীল পরিস্থিতি রয়েছে এবং নিজেরা আরো বেশি করে রফতানিতে যেতে পারলে পাঁচ বছরেই এ বাজার বেড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারের হতে পারে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলী হোসেন জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন বর্গফুট ফিনিশড লেদার উৎপাদন হয়, যার বেশির ভাগটাই রফতানি হয়।
ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তর হয়ে গেলে চামড়া অপার শিল্পের সম্ভাবনা আরও জোরালো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।