Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কগুলো নজরদারিসহ জরুরি মেরামত অব্যাহত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আসন্ন ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কে ঝুকির কথা ভেবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দুঃশ্চিন্তা বাড়লেও আগামী ৩দিনের মধ্যে বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কসহ সবগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের জরুরী মেরামত কাজ শেষ করতে চাইছে সড়ক অধিদফ্তর। এবারের বর্ষা মওশুমে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশী বৃষ্টিপাতের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কগুলো যথেষ্ঠ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও সড়ক অধিদফ্তর থেকে নিবিড় নজরদারীসহ জরুরী মেরামত অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নানামুখি দীর্ঘ সূত্রীতায় দক্ষিণাঞ্চলের ১১৪.১০কিলোমিটার জাতীয় মহাড়ক, ৩৬৩কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ১হাজার ১৩২কিলোমিটার জেলা সংযোগ সড়কের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে এখনো কোন সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা নেই। ফলে বর্ষা মওশুম সহ ঈদ-কোরবানী এলেই পরিবহন মালিকদের আন্দোলনের হুমকি সহ সড়ক বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ঘুম হারাম হয়।
বর্ষা যত বাড়ে রাস্তাঘাটের ক্ষতিও তত বাড়ে। বাড়ে দূর্ঘটনার পাশাপাশি জানমালের ক্ষতির পরিমানও । আবহাওয়া বিভাগের মতে, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১৫২% ও ১৬০%-এর মত বেশী বৃষ্টি হয়েছে। তবে মে মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমান কিছুটা কম থাকলেও জুনমাসে তা ৫% বেশী হবার পরে জুলাই মাসে বরিশাল অঞ্চলে ৪০.২% বেশী বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসের ২১তারখ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ২৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী বুলেটিনে চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে ৩৯০ থেকে ৪৭৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ভাদ্র মাসের অমাবশ্যা পরবর্তি সময়ে আগামী কয়েকটি দিনও দক্ষিণাঞ্চলে কমবেশী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক মহাসড়কগুলোর প্রতি কেন্দ্রীয়ভাবে নিবিড় নজরদারী সহ মাঠ পর্যায়ের চাহিদা মোতাবেক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে নিয়মিত তহবিলের যোগন দেয়ার বিষয়টিও এখনো অনুপস্থিত। এমনকি সারা দেশের মধ্যে এখনো বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়ক দুটির বেশীরভাগ অংশই ১৮ফুট প্রসস্ত। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এ মহাসড়কটি ৪লেনে উন্নীত করার কথা শোনা যাচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তহবিলে এজন্য ‘সম্ভাব্যতা সমিক্ষা’ সহ ‘বিস্তারিত নকশা’ও প্রনয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন দাতা যোগার হয়নি। ফলে প্রকল্পটি অনেকটাই অন্ধকারে। তবে এ প্রকল্পটি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের বড় বড় বক্তৃতা অব্যাহত আছে স্থানীয় পর্যায়ে। বরিশাল-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটির বরিশাল অংশের ভুরঘাটা থেকে বরিশাল মহানগরী হয়ে পটুয়াখালী-কুয়াকাটাগামী লেবুখালী ফেরিঘাট পর্যন্ত ৬০কিলোমিটার মহাসড়ক ১৮ফুট থেকে ২৪ফুটে প্রসস্ত করনের লক্ষে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রায় ১২০কোটি টাকার এ প্রকল্পটির জন্য চার গ্রুপে ৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়ার পরে কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রসস্ত করনের কাজ চলমান অবস্থাতেই প্রবল বর্ষনে গৌরনদী থেকে ভুরাঘাটা পর্যন্ত প্রায় ১৫কিলোমিটার মহাসড়কে বেশ কিছু স্থান ঝুকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি সড়কটির জয়শ্রী থেকে গৌরনদী পর্যন্ত অংশেরও কিছু এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অতি বর্ষণে। ইতোমধ্যে বরিশাল বাস মালিক সমিতি সড়ক মেরামতের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন এবং মানব বন্ধনও করেছে। এমনকি ঈদের কাগে মেরামত কাজ শেষ না হলে এক সপ্তাহ পরে পরিবহন ধর্মঘটেরও হুমকি দেয়া হয়েছে। তবে বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে নিবিড় মেরামতি কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিন্তু এবারের অস্বাভাবিক ও অতিবর্ষণ সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের সব রাস্তাঘাটের অবস্থাই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে গেছে। এবারের অস্বাভাবিক অতি বর্ষণের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের বণ্যার পানির ঢল এখন সাগরমুখি হবার মুখে প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের দু ধারের জলাশয়গুলো সহ রাস্তা ছুই ছুই করছে। ফলে রাস্তার বেড ক্রমশ দূর্বল হচ্ছে। এর সাথে মাত্রাতিরিক্ত বোঝাই পণ্যবাহী যানবাহন সড়ক-মহাসড়কগুলোকে ভয়াবহ নাজুক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।এমনকি ১৯৬১থেকে ’৬৪সালের মধ্যে ১২ফুট প্রসস্তায় ৫টন বহন ক্ষমতার যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মিত বরিশাল-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কে এখন ৩০টন পণ্যবাহী যানও চলছে। তবে ১৯৮৮’র বণ্যার পরে মহাসড়কটি ১৮ফুটে প্রসস্ত করা হয়। আর ১৯৯২-৯৪সালের মধ্যে বরিশাল-ফরিদপুর পুরো মহাসড়কটির ১২৪কিলোমিটার এলাকা পরিপূর্ণ ‘ওভার-লে’ করা ছাড়া আর কোন বড় ধরনের সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে মহাসড়কটির বরিশাল-ভুরঘাটা অংশের স¤প্রসারন সহ ওভার-লে’র কাজ চলমান। ফলে ভড়া বর্ষায় বেশ কিছু অংশেই রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু বর্ষার কারনে ‘বিটুমিনাস কার্পেটিং’ সহ ‘ওভার-লে’র কাজ শুরু করাই সম্ভব হচ্ছেনা। মূল সড়কের দুপাশে যে ৩ফুট করে প্রসস্ত করা হচ্ছে তার ম্যাকাডম সম্পন্ন করা হলেও বর্ষায় তার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মহাসড়কটির ভুরঘাটা থেকে মোস্তফাপুর পর্যন্ত প্রায় ১১কিলোমিটার অংশ আগেই ২৪ফুট প্রসস্ত করা হলেও মোস্তফাপুর থেকে টেকেরহাট অংশের বেশ কিছু এলাকা সহ ভাংগা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ৩০কিলোমিটার মহাসড়কের আরো বেশ কিছু এলাকায় মহাসড়কটি খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, মাদারীপুর,গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর সড়ক বিভাগ পুরো মহাসড়কটির মেরামত কাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। পাশাপাশি ঈদের আগে-পরে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো সড়ক বিভাগ ও উপ-বিভাগের প্রকৌশলীগন মাঠ পর্যায়ে নজরদারী সহ মোবাইল মেইনন্টেনেন্স টিম নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম। এমনকি বরিশাল ও পটুয়াখালী ফেরি বিভাগকেও সবগুলো পয়েন্টে সার্বক্ষনিক ফেরি চলাচল নিশ্চিত করা ছাড়াও তাদের কারিগরি টিম সহ মোবাইল ক্রেনও সার্বক্ষনিকভাবে প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কোন অবস্থাতেই সড়ক বিভাগের কোন সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটবে না বলে বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণাঞ্চল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ