Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলের দুর্ভোগ অবসান হচ্ছে আজ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কাটে ফেরি ঘাটে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপ লাভের মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের দীর্ঘ ৬০ বছরের দুর্ভোগ আর বঞ্চনার সাথে এ প্রবাদেরও অবসান ঘটতে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরে আজ সকাল থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। ফলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানীসহ পদ্মার পূর্ব অংশের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগেরও ফেরিবিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবসান ঘটছে বিগত প্রায় ষাট বছরের পদ্মায় ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনার। দেশের সবগুলো বিভাগীয় সদর এবং দ্বীপজেলা ভোলা বাদে সবগুলো জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করছে পদ্মা সেতু।

ষাটের দশকে আরিচা ও দৌলতদিয়ার মধ্যে তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন’ কয়েকটি ‘স্মল টাইপ’ ও ‘মিডিয়াম টাইপ’ ফেরির মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ চালু করে। কিন্তু সে ফেরি পারাপার খুব সুখকর ছিল না কখনোই। এমনকি পারপারের অভাবে ঘরমুখি বহু মানুষ নিকটজনের সাথে ঈদের নামাজ পর্যন্ত আদায় করতে পারতেন না। অনেক সময়ই ঘরমুখি মানুষ ফেরি ঘাটেই ঈদের জামাতে নামাজ আদায়ে বাধ্য হয়েছেন।

রাজধানীর সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের দুরত্ব হ্রাসসহ সড়ক যোগাযোগ সহজতর করতে ১৯৭৭ সালে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বরিশালÑফরিদপুর মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে চরজানাজাতÑমাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নতুন একটি মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে মাওয়া থেকে চরজানাজাত/কাওড়াকান্দীর মধ্যে পদ্মায় ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে ঐ মহাসড়কটি চালুও হয়।

১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ভাংগা থেকে চর জানাজাত পর্যন্ত মহাসড়কটির ব্যাপক ক্ষতির পরে ওপেক তহবিলে তার পুণর্বাসন সম্পন্ন হয়। পরবর্তিতে উন্নয়ন সহযোগী ‘ওপেক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং এনডিএফ’এর সহায়তায় ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনাÑমোংলা মহাসড়কের টাউন নওয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৬২.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক পুণঃনির্মাণ ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মিত হয়। নির্মাণ শেষে ঐ মহাসড়কটি ২০০৫ সালের ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উš§ুক্ত করা হয়। ওই মহাসড়কটি নির্মানের ফলে রাজধানীর সাথে বরিশাল ও খুলনার দুরত্ব প্রায় ১শ কিলোমিটার করে এবং যশোর ও বেনাপোলের দুরত্বও যথেষ্ঠ হ্রাস পায়। এমনকি এ মহাসড়কটি নির্মাণের ফলে ঢাকাÑঅরিচা মহাসড়কের ওপরও যানবাহনের চাপ প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়।

হ্রাস কিন্তু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানীসহ পদ্মার পূর্ব তীরের সংক্ষিপ্ত সড়ক নির্মিত হলেও এ অঞ্চলের মানুষের ঝুঁকি ও দুর্ভোগের শেষ ছিলনা খরশ্রোতা পদ্মা পারাপারের বিড়ম্বনার কারণে। শীত মৌসুমে নাব্যতা সংকট আর বর্ষাকালে খরশ্রোতা পদ্মায় পারপার সব সময়ই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ভোগের।
কিন্তু উপমহাদেশের দীর্ঘতম এবং বিশে^র দ্বিতীয় খরস্রোতা পদ্মায় সেতু চালুর মধ্যে দিয়ে আজ থেকে এসব বিড়ম্বনার অবসান হতে যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের সাড়ে ৩ কোটি মানুষ এখন সময় গুনছেন।

তবে ভাংগার এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতু হয়ে ২১ জেলার যানবাহন ঢাকাসহ পূর্বঞ্চলে যাবে, সে পর্যন্ত পৌছান এখনো যথেষ্ঠ বিড়ম্বনার। এ অঞ্চলের ২১ জেলার সাথে ভাংগা এক্সপ্রেসওয়েতে সংযুক্ত সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই মাত্র ১৮-২৪ ফুট প্রস্থ। এমনকি একমাত্র ঢাকাÑভাংগাÑখুলনা মহাসড়কটি ছাড়া অন্য সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই প্রায় ৬০ বছরের পুরনো। এসব মহাসড়ক ভারী যানবাহনের ভার বহনের সক্ষমতা নেই। এমনকি পদ্মা সেতু চালুর পরে এ অঞ্চলের মহাসড়কে যে বাড়তি চাপ পড়বে তার ব্যবস্থাপনাও অনুপস্থিত। এমনকি এ অঞ্চলের সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই ৬ লেনে উন্নীত করার নানা পরিকল্পনার কথা গত দশ বছর ধরে শোনা গেলেও তা এখনো কাগজেই সীমাবদ্ধ বলেও জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণাঞ্চল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ