পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্যাপক বর্ষণ ও একাধিক দফায় বন্যায় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো অত্যন্ত শোচনীয় দশায় পতিত হয়েছে। অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কেই খানাখন্দক সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থান ভেঙ্গেচুরে গেছে। এখনো কোনো কোনো সড়ক মহাসড়কের অংশ বিশেষ পানি ডুবে আছে। বর্ষণ ও বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে সড়ক-মহাসড়কের আরো ক্ষতি সাধিত হবে, সেটা নিশ্চিত। ঈদুল আজহার বাকী আছে আর দু’সপ্তাহ। এমতাবস্থায়, ঈদে ঘরে ফেরা রীতিমত দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ঢাকা থেকে রংপুরের দূরত্ব সাড়ে তিনশ কিলোমিটার। স্বাভাবিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে বড়জোর সাত ঘণ্টা সময় লাগার কথা। এখন লাগছে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা। এই মহাসড়কের হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া ও পলাশবাড়ি থেকে মোকামতলা পর্যন্ত এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, রাস্তা আছে কি, নেই বুঝার উপায় নেই। অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কের অবস্থাও কম বেশি একই রকম। প্রতি বছরই বর্ষা মওসুমে সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এবার বর্ষণের আধিক্য ও বন্যার তান্ডবে অবস্থা হয়ে পড়েছে ভয়াবহ। ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-যশোর, ঢাকা-কুষ্টিয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মৌলবীবাজার প্রভৃতি কোনো সড়ক-মহাসড়কই এখন স্বাভাবিক যান চলাচলের পর্যায়ে নেই। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অধিদফতরের আওতাধীন সড়কের মধ্যে ছয় হাজার ২০৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে জেলা সড়কগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ভালো অবস্থায় আছে ছয় হাজার ৫০৯ কিলোমিটার সড়ক। বাকী তিন হাজার ৯০৫ কিলোমিটার সড়ক মোটামুটি চলনসই অবস্থায় আছে। এই হিসাব-পরিসংখ্যান বা তথ্য থেকেই অনুধাবন করা যায়, যান চলাচল ও যাতায়াত কতটা কঠিন হয়ে পড়েছে বা পড়তে পারে। অনেকেই মনে করেন, সড়ক-মহাসড়কের প্রকৃত চিত্র এর চেয়েও খারাপ। এমত পরিস্থিতিতে ঈদযাত্রীদের দুশ্চিন্তার অবধি নেই। অনেকই সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা দেখে ট্রেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সেখানেও বিপত্তি ও অনিশ্চয়তার আশঙ্কা কম নেই। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে রেল লাইন ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও লাইনের ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে ট্রেনচলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঈদের আগে সড়ক-মহাসড়ক ও রেললাইন মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে কিংবা অবনতি ঘটলে কোনো আশা নেই। বন্যা যদি কমেও যায় এবং পানি সরে যায়, তারপরও এই অল্প সময়ে সড়ক মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা যাবে কিনা, তাও বলা মুশকিল। মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, জাতীয় মহাসড়কগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছরে দুই হাজার কিলোমিটার মেরামত করতে হবে। এছাড়া ২৫৫ কিলোমিটার আংশিক এবং ১৭৯ কিলোমিটার পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর মধ্যে চলতি অর্থ বছরে দুই হাজার ৪৮ কিলোমিটার মেরামত এবং ১৭৯ কিলোমিটার আংশিক ও ১৫২ কিলোমিটার পুরোপুরি পুনর্নির্মাণ করতে হবে। জেলা সড়কগুলোর দুই হাজার ৭৬৮ কিলোমিটার মেরামত ও বাকীটা পুনর্নির্মাণ করতে হবে। সবমিলে প্রয়োজন হবে নয় হাজার কোটি টাকার বেশী। অত্যন্ত দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, প্রতিবছরই সড়ক-মহাসড়ক মেরামত ও পুনর্নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করা হয় এবং সেই বরাদ্দ নিতান্ত কম নয়। অথচ তার একটা বড় অংশই লুটপাট হয়ে যায়। অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না এবং কাজের মানও হয়না সন্তোষজনক। গত অর্থ বছরে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতে ১০টি জোনে ১০০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত বছর জুনের মধ্যে এসব প্রকল্পের মাত্র ২৮ টি শেষ হয়। বাকীগুলো আজও শেষ হয়নি। এটা সাধারণভাবেই ধারণা করে নেয়া যায় যে, গত অর্থবছরে নেয়া প্রকল্পগুলো যথাসময়ে মানসম্পন্নভাবে শেষ হলে এবারের বন্যায় সড়ক-মহাসড়কের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো। রাস্তাঘাট নির্মাণ, মেরামত নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা একেবারেই সুখকর নয়। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, অতিরিক্ত ব্যয় ও সময় খরচ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরেই দেখা গেছে, অনেক স্থানে খানাখন্দক সৃষ্টি হয়েছে এবং ভেঙ্গেচুরে গেছে। চুরি বন্ধ ও কাজের মান যথাযথ না হলে সড়ক-মহাসড়ক মসৃণ ও নির্বাধ যাতায়াতের উপযোগী কখনোই হবে না।
এখন সড়ক-মহাসড়কের যে করুণ অবস্থা তাতে দ্রুত মেরামত ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ঈদুল আজহার সাতদিন আগে ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দকে ভরা সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের নির্দেশনা জারি করেছে। লক্ষ্যটা স্পষ্ট। ঈদযাত্রীরা যাতে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা। প্রশ্ন হলো, সাতদিনে এই ব্যাপক মেরামত কাজ সম্পন্ন করা কি সম্ভব? এর আগেও আমরা এধরনের উপলক্ষভিত্তিক মেরামত কাজ করতে দেখেছি। তাতে ফল ভালো পাওয়া যায়নি। নামকাওয়াস্তে মেরামত হয়েছে এবং ক’দিন যেতে না যেতেই সাবেক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখান থেকে অর্থ লোপাট ও অপচয় হয়েছে। এবার আরো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মেরামত কাজে যত টাকা প্রয়োজন ততটাকা আসবে কোথা থেকে? মেরামত কাজে প্রয়োজন নয় হাজার কোটি টাকার ওপরে। অথচ এখাতে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৭০৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বাকী টাকা কিভাবে জোগাড় হবে? অনুমান করা যায়, লোক দেখানো মেরামত কাজ শুরু হবে। আবার জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট ও চুরি হবে। এই ট্রাডিশন বন্ধ করতে হবে। কাজ শেষ করতে হবে যথাযথ মানসম্পন্নভাবে। যেহেতু একটা উপলক্ষ সামনে রয়েছে, তাই সড়ক-মহাসড়কগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করে যাতায়াত যতটা সম্ভব যথা সময়েও মসৃণ করার চেষ্টা করতে হবে। অবশিষ্ট কাজ পরে পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। খবর পাওয়া গেছে, বাস মালিকরা সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা বিবেচনা করে বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এতে যাতায়াতের ঝাঁক্কি-ঝামেলার বাইরে ঈদযাত্রীরা বাসের সংকটেও পড়তে পারে। এদিকটিও দেখা দরকার। রাস্তা মেরামতের পাশাপাশি বাস-মালিকদের আশ্বস্থ করতে হবে, বুঝতে হবে যাতে তারা অধিক সংখ্যায় বাস চালায় এবং ঈদযাত্রীরা স্বস্তিকরভাবে যাতায়াত করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।