Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রাম অঞ্চলে কৃষকের দুঃসময় : তিন দফা ফলসহানির পর আমনেও হোঁচট

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষকের চরম দু:সময় যাচ্ছে। অতিবৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল আর সামুদ্রিক জোয়ার তিন দফা ফসলহানীর পর আমন আবাদে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে তাতেও হোঁচট খাচ্ছেন এই অঞ্চলের প্রান্তিক চাষীরা। আউশ-ইরি ফলন বিনষ্ট হয়েছে। পঁচে গেছে শাক-সবজি আর আমনের বীজতলা। এখন আমন আবাদ করতে গিয়েও সঙ্কটে কৃষক। দেশের উত্তর ও সিলেট অঞ্চলের মতো এ অঞ্চলে বন্যা না হলেও অতিবর্ষণ হয়েছে কয়েক দফা।
আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে চট্টগ্রাম বিভাগে গেল জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬.৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রের্কড হয়েছে। স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ৭২০ মিলিমিটার। আর ওই মাসে বৃষ্টিপাত রের্কড হয়েছে ১০৫৪ মিলিমিটার। এরফলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া অব্যাহত থাকায় উত্তর চট্টগ্রামে আমন বীজতলা ও রোপা আমন তলিয়ে আছে পানির নীচে।
কৃষি বিভাগ ও প্রান্তিক চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গেল তিনমাস ধরে একের পর দুর্যোগ মেঋকাবেলা করছে এই অঞ্চলের কৃষকেরা। টানা ভারিবর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক আবাদি জমিতে এখনও কয়েক ফুট বালির আস্তরণ। বালির নীচে চাপা পড়েছে শাক-সবজি, আউশ-ইরি আর আমনের বীজতলা। ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলা এবং ফেনী, নোয়াখালী ও ল²ীপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সামুদ্রিক জোয়ারে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, স›দ্বীপ, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, কক্সবাজারের পেকুয়া, চকোরিয়া, ফেনী ও নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের। কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়া অব্যাহত থাকায় দেশের অন্যতম খাদ্যভান্ডার হিসাবে পরিচিত উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার অনেক এলাকায় এখন পানিতে তলিয়ে আছে। একই অবস্থা রাউজান ও হাটহাজারীতেও। ফটিকছড়িও পাহাড়ী ঢলের পাশাপাশি তিন দফা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ফেনীর উত্তর অংশে ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা। সেখানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসাবে গত কয়েকদিনের বর্ষণে এই অঞ্চলের ৫ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃতীয়বারের মতো ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৫৫ হেক্টর আউশ-ইরি ফসল, ৭৮৩ হেক্টর আমন বীজতলা, ২ হাজার ৪৪০ হেক্টর রোপা আমন ও ৭৮০ হেক্টর জমির শাক-সবজি নিমজ্জিত ছিল। গ্রীস্মকালীন শাক-সবজির পুরো মওসুম জুড়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন চলছে শরৎকালীন শাক-সবজির আবাদ। তাতেও কৃষক মার খাচ্ছেন। কোথায় ভারী বর্ষণের কারণে আবার কোথায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ফসল তলিয়ে গেছে।
শাক-সবজি এবং আউশ-ইরির ফসলে মার খাওয়ার পর কৃষকরা আমান আবাদে মনযোগী হন। কিন্তু সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অতিবর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও জোয়ার। তিন দফায় ভারী বর্ষণে অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এরপরও হাল ছাড়েনি প্রান্তিক চাষীরা। নতুন করে বীজতলা তৈরী করে আমন আবাদ চলছে। কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে অনেক এলাকায় এসব রোপা আমনও পানির নীচে চলে গেছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫ জেলায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ শেষ হয়েছে। আর গতকাল পর্যন্ত নিমজ্জিত ছিল ২ হাজার ৪৪০ হেক্টর রোপা আমন। কৃষি বিভাগ জানায়, এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫ জেলায় ৫ লাখ ২৭ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা এবার আমন আবাদে বেশি মনোযোগী হন। তাছাড়া গত কয়েক মাসের বৈরী আবহাওয়া ও দুর্যোগে অন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর আমন আবাদে জোর দেয় কৃষক। অন্য ফসলের তুলনায় আমন আবাদে তুলনামূলক খরচ কম। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৪ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। কক্সবাজারে আবাদ হয়েছে ৪৫ হাজার ৫২৮ হেক্টরে, সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার ৭৩৩ হেক্টর। নোয়াখালীতে ৮১ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৮ হেক্টর। ফেনীতে আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ২১৫ হেক্টরে, লক্ষ্যমাত্রা ৬৪ হাজার ১০৫ হেক্টর। আর ল²ীপুর জেলায় আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৪২৫ হেক্টরে, লক্ষ্যমাত্রা ৭৩ হাজার ১৫৭ হেক্টর। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার ৪৯ শতাংশ জমিতে আমন আবাদ শেষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, অতিবৃষ্টি, জোয়ার, পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় এই অঞ্চলে তিন দফা ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এখনও অনেক এলাকায় আমনের বীজতলা, রোপা আমনসহ অনেক ফসল নিমজ্জিত রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি ছেড়ে দেওয়া অব্যাহত থাকায় উত্তর চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় আমন বীজতলা, রোপা আমনসহ অনেক ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান এবং হাটহাজারীতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রোপা আমন পানির নীচে আছে, এসব ফসল পচে যাবে। তিনি বলেন, এসব এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে কয়েকটি এলাকায় নতুন বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত আমন চাষ করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, কোন এলাকায় জমি অনাবাদি থাকবে না। অন্য এলাকায়ও আমনের নতুন নতুন বীজতলা তৈরী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমন আবাদে যাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ