পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের পণ্যপ্রবাহ সামাল দিতে গিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরের হিমশিম অবস্থা। প্রতি বছর প্রধান এই সমুদ্র বন্দরে কন্টেইনার ও খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিংয়ের চাপ ও চাহিদা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বার্ষিক ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার, প্রায় ১২ কোটি মেট্রিক টন খোলা সাধারণ (ব্রেক বাল্ক) কার্গো উঠানামা এবং প্রায় ৪ হাজার মার্চেন্ট জাহাজ আসা-যাওয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। ইয়ার্ডসমূহের ধারণক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার। তার ওপর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হয়েছে। ‘ভারতের পণ্য ভারতে’ একমুখী পরিবহনে তথা একতরফা ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবস্থায় বন্দরের সীমিত অবকাঠামো সুবিধার উপর পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চাপ বেড়ে গেছে। বন্দরের এহেন বেসামাল অবস্থার মধ্যেই ভারত চাইছে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘বিশেষ জায়গা’ (ডেডিকেটেড স্পেস বা ইয়ার্ড)। যা বন্দর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট সুবিধাকে আরো মসৃণ এবং সম্প্রসারিত করবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে ‘ডেডিকেটেড স্পেস’ বা বিশেষ জায়গা চেয়ে বাংলাদেশের কাছে ‘অনুরোধ’ জানিয়েছে ভারত। এ সুবিধা দেয়া হলে ভারতের পণ্য ভারতে স্থানান্তর করা হবে আরও সহজে, মসৃণ গতিতে। প্রতিবেশী দেশটির ‘দ্য সেভেন সিস্টার’ হিসেবে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি শক্তিশালী হতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের কাছে এমন অনুরোধের কথা গত ১১ নভেম্বর জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং। এ খবর জানায় ইকোনমিক টাইমস এবং ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই।
খবরে বলা হয়, ১১ নভেম্বর ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের বার্ষিক অধিবেশনে বক্তৃতাকালে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ওই অনুরোধের বিষয়টি তুলে ধরেন। এতে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বিশেষ জায়গা করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের কাছে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। এই অনুরোধ রাখা হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকৃত হবে। সেখানকার অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ। তিনি পিটিআইয়ের কাছে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে খুব জট লেগে থাকে। তাই যদি একটি বিশেষ জায়গা দেয়া হয় তাহলে মসৃণ গতিতে পণ্য স্থানান্তরে সহায়ক হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সচিব ওমর ফারুক গতকাল শনিবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। আমরা মিডিয়ায় তা জেনেছি। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সেটা বিবেচনা করে দেখবে। সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সবসময়ই প্রস্তুত।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মু. সিকান্দার খান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের জানামতে পৃথিবীর কোন দেশের বন্দরে এ ধরনের কোন জায়গা, স্থান দেয়া হয়নি- হয়না। সার্বভৌম কোন দেশে একমাত্র দূতাবাস বা হাইকমিশনের জন্য জায়গা ছাড়া অন্য দেশকে এ ধরনের কোন জায়গা দেয়া যায় না। এ ধরনের জায়গা কোন দেশ দিয়েছে এমনটি আমাদের জানা নেই। এর কোন যুক্তি আমি দেখি না। বন্দরের ভেতরে বিশেষ কোন জায়গা অন্যান্য দেশও যদি চায় তখন আমরা কী তা দিতে পারবো? দুনিয়ায় যা ব্যতিক্রমী সেটা অপরিহার্য নয়। পৃথিবীর কোথাও কোন দেশের বন্দরে যা নেই তা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা থাকলে সেটা পরিহার করা উচিৎ। প্রফেসর সিকান্দার খান আরও বলেন, আমি খেতে পারলে এরপর অবশিষ্ট থাকলে বন্ধুকে দেব। কিন্তু নিজে না খেয়ে বন্ধুকে দেবো কীভাবে? দেশের আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন ও মজুদ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এমনিতেই হিমশিম দশা।
বাংলাদেশের কাছে ভারতের আবদার-অভিলাষ পূরণে ‘কানেকটিভিটি’ বা ’ট্রান্সশিপমেন্টে’র নামে ট্রানজিট ও করিডোর চুক্তির বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ট্রানজিট চুক্তির প্রথমেই বলা হয়েছে: ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফরম ইন্ডিয়া’। অর্থাৎ চুক্তি অনুসারে ‘ভারতের পণ্য ভারতেই’ যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পাচ্ছে করিডোর সুবিধা। যা একতরফা ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবস্থা। কেননা এ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কোন পণ্য ভারতে রফতানি হচ্ছে না। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক ট্রানজিট-করিডোর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই চালু হবে পুরোদমে ট্রানজিট ব্যবস্থা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর ও ১৯ অক্টোবর ভারতের কলকাতা বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ‘এমভি ট্রান্স সামুদেরা’ জাহাজযোগে ট্রানজিটের ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। এর আগে ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে গত ৮ আগস্ট ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ জাহাজ যোগে ভারতের ট্রানজিট পণ্যের চালান আসে মোংলা বন্দর দিয়ে। ট্রানজিট চুক্তির পর ভারতের পণ্যবাহী প্রথম জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’ বিগত ২১ জুলাই’ ২০২০ইং কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার বোঝাই পণ্য নিয়ে ভিড়ে।
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং গত ১১ নভেম্বর ট্রানজিট ব্যবস্থা আরও সফল করতে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘বিশেষ জায়গা’ পাওয়ার আবদার প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে খুব জট লেগে থাকে। তাই যদি একটি বিশেষ জায়গা বা স্পেস নির্ধারণ করে দেয়া হয় তাহলে পণ্য স্থানান্তরের জন্য সেটি সহায়ক হবে। পিটিআই এবং ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটের অধীনে বাংলাদেশের বড় দুটি বন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে দেশটির অন্যান্য স্থানের (মূল অংশের) সঙ্গে সংযুক্ত করে পরীক্ষামূলক কার্গোর ট্রান্সশিপমেন্ট সম্পন্ন করেছে ভারত। ভারতের সুযোগ সুবিধাকে ব্যবহার করে তৃতীয় দেশগুলোতে পণ্য রফতানি করতে বাংলাদেশকে প্রস্তাবও দিয়েছে ভারত। রেল, সড়ক ও নৌপথের মাধ্যমে সংযুক্তি উন্নীত করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন মন্ত্রী রাজকুমার সিং। তিনি বলেন, বিশ্বের কারখানা এবং অফিসে পরিণত হতে চলেছে ভারত। আর, এরজন্য সংযুক্তি (কানেকটিভিটি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।