পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বঙ্গভবনে রেখেই প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান প্রধান বিচারপতিকে জানানোর একদিন পর বিষয়টি প্রেসিডেন্টের নজরে আনতে বঙ্গভবনে গিয়ে এ বৈঠক করেন। এ সময় অন্য একটি অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বঙ্গভবনে উপস্থিত থাকলেও তাঁর (প্রধান বিচারপতি) সঙ্গে দেখা হয়নি বলে জানান ওবায়দুল কাদের। এর আগে ১১ আগষ্ট ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির কাকরাইলের বাসায় গিয়ে বৈঠক করে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। তারও আগে এর আগে ৬ আগষ্ট প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট ইউসূফ হোসেন হুমায়ুন। তারা ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ে পর্যবেক্ষণের কিছু শব্দ স্বপ্রণোদিত ভাবে এক্সপাঞ্জ করা যায় কিনা সে প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক ফাঁদে পা দেবেন না জানিয়ে বলেন, যারা রায় নিয়ে বিতর্ক করছেন বা রায়ে অতিরঞ্জিত কোনো শব্দ রয়েছে দাবি করছেন তারা পূণাঙ্গ রায় না পড়েই মন্তব্য করছেন। তিনি সকলকে পুণাঙ্গ রায় পড়ার পরামর্শ দেন।
সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনে প্রবেশ করে দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে দেড়টার দিকে তিনি বেরিয়ে আসেন। এ সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের পার্টির (আওয়ামী লীগ) অবস্থানের কথা মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরেছি। রায় নিয়ে আমাদের দলের প্রকৃত অবস্থান কী সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। যেহেতু প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের অভিভাবক, প্রধান বিচারপতি তিনিই নিয়োগ দেন। তাকে আমি বিষয়টি জানিয়েছি। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যেসব কথাবার্তা হয়েছে সে বিষয়েও প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছি।
এ সময় বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার উপস্থিতি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে যে প্রধান বিচারপতি এসেছেন, তা আমি আগে থেকে জানতাম না। তবে তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। উল্লেখ সোমবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রতিনিধিদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে বঙ্গভবনে যান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। ওবায়দুল কাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেরিয়ে আসার পরেও প্রধান বিচারপতি বঙ্গভবনে অবস্থান করছিলেন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের পর্যবেক্ষণের কিছু শব্দ এক্সপাঞ্জ এবং রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা কেবল শুরু হয়েছে। শেষ হওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ইস্যুতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘আক্রমণাত্মক’ বক্তব্যের মধ্যেই ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন। হাইকোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের পুণাঙ্গ রায় পহেলা আগষ্ট প্রকাশ হয়। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, মুক্তিযুদ্ধে নের্তৃত্ব, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাবের চিত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এতে মুক্তিযুদ্ধে একক নের্তৃত্ব এবং রাজনীতিতে আমিত্বের প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণকে ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে রায়ে সংক্ষুব্ধ সরকারি দল আওয়ামী লীগ কড়া সমালোচনা করছে। তবে বিএনপি রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায়ের পর্যবেক্ষণের ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ (বাদ) দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন। আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা আদালত স্বতপ্রণোদিত হয়ে কিছু শব্দ এক্সপাঞ্জ করবে বলে দাবি করছে। তবে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলছেন, রায় ঐতিহাসিক। গণতান্ত্রিক এবং সুলিখিত রায়ে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়নি। রায়ে এক্সপাঞ্জ করার মতো কিছু নেই। স্বতপ্রণোদিত হয়ে এক্সপাঞ্জ করারও বিধান নেই। তার জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ প্রয়োগ করে রায় পরিবর্তন করে নেয়ার চেষ্টা করছে। রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ আইনের শাসন মানে না। তারা চাচ্ছে এক দল, এক দেশ, এক নেত্রী, এক বাকশাল। তাই তারা প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে জোর করে আদালতের রায় পাল্টে দিতে চাচ্ছে। একদলীয় শাসন কয়েম করতে চায়? তবে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, যে কোন রাজনৈতিক দল চাইলে প্রধান বিচারপতির সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। বিচারপতির সাথে জাজমেন্ট নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ে যদি আপত্তিকর কিছু থেকে থাকে তা আইন অনুযায়ী বাতিল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে তা বাতিল করতে পারে। যদি আদালত তা না করেন, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।