Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তুফান কান্ডই ছিল মুখ্য বিষয়

নারীর প্রতি সহিংসতা : ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সভায়

| প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৯ম শ্রেণীর ছাত্রীর বক্তব্যে বিস্মিত সবাই !
বিশেষ সংবাদদাতা, বগুড়া থেকে : বগুড়ায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা ঃ সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রায় সকল বক্তাই বহুল আলোচিত তরুণী ধর্ষণ ও ধর্ষিতা ওই ও মেয়ে এবং তার মাকে শারীরীক নির্যাতনকারীদের কঠোর সমালোচনায় মুখর হলেও সেখানে উপস্থিত বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীন জননেতা আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন, নারী নির্যাতন আদালতের স্পেশাল পিপি এ্যাড নরেশ মুখার্জি এবং পিপি আব্দুল মতীনের ভিন্নমুখী বক্তব্যে সকলেই স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি বগুড়া ভি এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী আফিয়া আঞ্জুমের যৌক্তিক প্রাসঙ্গিক ও হ্যদয়স্পর্শি বক্তব্যে বিস্মিত হন। গতকাল রবিবার সকাল ১০ টায় বগুড়া জেলা প্রশাসন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-এর চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বগুড়ায় সংঘটিত কিশোরী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা যাতে কোন ভাবে আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। সভায় বগুড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র গন, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাগন, বিভিন্ন এনজিও, নারী সংগঠন এবং স্কুলের ছাত্র / ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন । বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় বগুড়ার পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবুর রহমান, বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর তালুকদার হেনা, নারী সাংবাদিক নাসিমা সুলতানা ছুটু, বগুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র এ এম এবং বগুড়া ভি এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী আফিয়া আঞ্জুমসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অনেক বক্তা ।
প্রাসঙ্গিক ভাবেই ২বক্তার সকলের কণ্ঠেই বহুল আলোচিত ধর্ষক তুফান সরকারে বিচার দাবির বিষয়টিই উচ্চকণ্ঠে ধ্বনিত হয় । সবারই ছিল একটাই দাবি, কোন ভাবেই ধর্ষক তুফান গং যেন পার পেতে না পারে। বক্তাদের মধ্যে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী আফিয়া আঞ্জুম বলেন, যে মেয়েটি ধর্ষিতা হল সে একটা ফুল, এই ফুলকে যারা মেরে ফেললো, সে ও তার পৃষ্টপোষকতা যারা করেছেন তারা আগে থেকেই ক্রিমিনাল, যখন ফুলের মত একটি মেয়ে ধর্ষিত হল তখন সবাই সোচ্চার হল, মিডিয়ায় হৈ চৈ পড়লো, তুফানের বিরুদ্ধে উঠলো, নিন্দা, ধিক্কারের ঝড় !
কিন্তু আগেই যদি তাদের রোখা যেত, প্রশাসন, মন্ত্রী নেতাদের পাশে ঘেঁষতে তারা যদি না পারতো তাহলে ফুলের মতো একটি মেয়ের কি আজ এই পরিণতি হতো ? নারীদের সহিংসতা রোধ করতে চাইলে, আসলে শুধু সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করলেই হবে, না আসলে আমাদের ভিতর থেকে পরিবর্তিত হতে হবে, আমাদের মনোজগতে পরিবর্তণ আনতে হবে ?
আঞ্জুম আরো বলেন, আমাদের ( মেয়েদের ) সুরক্ষা চাইলে আমাদের শারীরীক মানষিকভাবে শক্তি অর্জনে সাহায্য করুন, যেন কেউ ফুলের মত সুন্দর একটি মেয়ের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটাবার চেষ্টা করলে, আমরা মেয়েরাই একজন অথবা কয়েকজন ( মেয়ে ) একত্রিত ভাবে মোকাবেলা করতে পারি। এই স্কুল ছাত্রীর যৌক্তিক প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে বিস্ময়ে অভিভুত পুরো অডিয়েন্স বার বার টেবিল চাপড়ে নিজেদের বিস্ময় ও উচ্ছাস প্রকাশ করে।
সভার প্রায় শেষ পর্যায়ে বগুড়ার প্রবীণ রাজনীতি বিদ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যের শুরুতে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ঘটনাটি প্রসঙ্গে বলেন, ১৭ তারিখের ঘটনার ( ধর্ষণ ) পর ১০ দিন কেন চুপ থাকলো (মেয়েটি), ১০ দিন পর একজন নারী কাউন্সিলর রুমকি) ওদের (ধর্ষিতা মা ও মেয়ে) চুল কাটলো, চুলতো কাটলোতো একজন মেয়ে তাহলে এখানে পুরুষের দোষটা হল কোথায় ?
তিনি আরো বলেন, আইন আছে, আদালত আছে, বিচার চলছে চলুক । আমিও দোষীদের শাস্তি চাই । মমতাজ উদ্দিনের বক্তব্যের পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যূনাল আদালত ১ এর স্পেশাল পিপি নরেশ মুখার্জি তার বক্তব্যে ধর্ষণ মামলার বিভিন্ন আইনী দুর্বলতা, ধর্ষনের আলামত, প্রমান, বাদীর অসহযোগিতা, ধর্ষনের ব্যাপারটা পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে কিনা, ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য দেন । পিপি আব্দুল মতিনও বগুড়ায় কিছু হলেই তোলপাড় তোলা হয়, সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্নের জন্যই এসব করা হয় বলে যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন পুরো অডিয়েন্সে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়, একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ী করে বলাবলি করতে থাকেন পিপি সাহেব এসব কি বলছেন ?
তাদের বক্তব্যের পর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ইনকিলাবের রিপোর্টার মহসিন রাজু আইনজীবীদ্বয়ের কাছে জানতে চান, যে মেয়েটির বয়স ১৮ এর নীচে তার ক্ষেত্রে কি সম্মতিতে ধর্ষণ বলে আ্ইনী ছাড়ের কোন সুযোগ আছে কি ?
জবাবে এ্যাড. নরেশ মুখার্জি বলেন, আমি বিতর্কে যাবনা, আইনে যা আছে, আমি তাই বলেছি, সাংবাদিকরা তথ্য প্রমান নিয়ে আসুন, সঠিক তথ্য প্রমান আদালতের কাছে উপস্থাপন হলে ধর্ষনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দন্ডই হবে ।
পরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমি সবার বক্তব্যই শুনলাম, বগুড়ার এই ঘটনাটি বিদেশে কিছুটা হলেও দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্নের কারণ হয়ে উঠেছে। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আরও বলেন, বগুড়ায় সংঘটিত কিশোরী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা যাতে কোন ভাবে আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে । সবার সচেতনতা ও সজাগ ভুমিকায় কেবল এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারে । তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়াও আমাদের অনেক অর্জন আছে । তাই সেই অর্জন যেন কেউ ম্লান করতে না পারে সেজন্যে সতর্ক থাকা জরুরী।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ