Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লালমনিরহাটে প্রতিবন্ধী মাসুমের এতিমখানা

| প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লালমনিরহাট থেকে মোঃ আইয়ুব আলী বসুনীয়া : চাচ্চু ডাক যখন ‘মধুময়’ হৃদয় নাড়িয়ে যায়, তখন তাদের জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছা হয়। কিন্তু ভাই নেই, ভাতিজাও নেই, তাহলে চাচ্চু ডাকবে-কে। তাই প্রতিমাসের বাসা ভাড়া টাকা দিয়ে গড়ে তোলা হয় এতিমখানা। মরহুম ভাইয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে লালমনিরহাটের শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম পাভেজ এর প্রাণপ্রয়াস চেষ্ঠায় এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার এমন কাজ সমাজে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আদরের ছোট ভাইটি বিয়ের আগে বøাড ক্যান্সারে মারা গেলে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম পাভেজ। ভাইয়ের স্মৃতি নিয়ে এতিম শিশুদের জন্য খুলেন এই এতিম খানাটি। প্রতিষ্ঠানটি দুই এতিম শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ৪ বছরে এতিমের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। এতিমখানা এই এতিম শিশুদের থাকা-খাওয়া, লেখাপড়া, পোশাক-পরিচ্ছেদ, শিক্ষা ও চিকিৎসা খরচসহ পুরো ভরণপোষণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মাসুম পারভেজ। অথচ তিনি নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। চলেন ক্রেসে ভর করে। তবুও এতিমদের প্রতি হৃদয় আঙ্গিনায় ভালবাসার কোন কমতি নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন একবার হলেও এতিমখানার শিশুদের খোঁজ খবর, দেখাশুনা এমনকি একসঙ্গে খাবার খান তিনি। প্রতিবন্ধী মাসুম পারভেজ লালমনিরহাট শহরের বিডিআর হাট এলাকার সাবেক কমিশনার মোক্তার আলীর ছেলে ।
মাসুম পারভেজ জানান, জন্মের ৬ মাস পরে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই থেকে তার প্রতিবন্ধী জীবন শুরু। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মেঝো। একমাত্র ছোট ভাই মাসুদ রানা বøাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে পরপারে পাড়ি জমান। ফলে একা হয়ে পড়েন তিনি। বিয়ে করে ৩ সন্তানের জনক হলেও চাচা হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। তাই চাচ্চু ডাক শুনতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এতিম শিশুদের জন্য এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা একমাত্র ছোট ভাই মাসুদ রানা নামকরনে এতিমখানাটির নাম রাখা হয় “তালুক খুটামারা মোক্তারটারী মাসুদ রানা হাফেজিয়া মাদরাসা। সেখানে বর্তমান অধ্যয়রত ৩০ জন এতিমের ভরসাস্থল প্রতিবন্ধী মাসুম এই এতিমখানার সকল শিশু মাসুম পারভেজকে চাচ্চু বলে ডাকে। এতিমখানার শিক্ষক ও কেয়ারটেকারের বেতনসহ শিশুদের যাবতীয় খরচ মেটাতে প্রতি মাসে ৩০ হাজারের বেশি অধিক টাকা খরচ হয়। পৈত্রিক বাসাবাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া টাকা দিয়ে চলে এতিমখানাটি। এছাড়াও সার, কীটনাশক, সিমেন্টসহ পরিবহন ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ব্যাংকের কাছে যে ঋন নিয়েছেন, তা স্বাভাবিক মানুষের মত সুদ দিতে হচ্ছে তাকে। প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনি ব্যাংক থেকে কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না বলে অনেকটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি সুদ মুক্ত ঋন পেলে হতদরিদ্রদের সেবার পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে পারতেন। এতিমখানার শিক্ষার্থী বলেন, মাসুম পারভেজ আমাদের অভিভাবক, আমাদের থাকা-খাওয়া, লেখাপড়া, পোশাক-পরিচ্ছেদ, শিক্ষা ও চিকিৎসা খরচসহ পুরো ভরণপোষণের দায়িত্ব তিনি পালন করেন। এমনকি আমাদেরকে নিজের ছেলের মত আদোর শ্নেহ করেন। বিভিন্ন দিন উপলক্ষ্যে আমাদেরকে বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যান ও এতিমদের প্রতি হৃদয় আঙ্গিনায় ভালবাসার কোন কমতি নেই তার। প্রতিবন্ধী মাসুম পাভেজ দাবী করে বলেন, আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী, আমারও ইচ্ছা আছে, একজন প্রতিবন্ধীই অন্য প্রতিবন্ধীর কষ্ট সম্পর্কে বুঝতে পারে। বিষয়টি অনুধাবন করে নিজ উদ্দ্যাগে তিনি প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য পৃথক ফান্ড গঠন করেছেন। সেখান থেকে প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করা হয়। আমি প্রতিবন্ধীদের সুখ-দুঃখ বিষয়গুলি বলার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের জন্য অধির অপেক্ষায় রয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লালমনিরহাট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ