Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিন্নাহর স্বপ্নের বাড়িটি পরিত্যক্ত হলেও শত্রুসম্পত্তি

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে গলার কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে

| প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে পাকিস্তানে কায়েদ-এ-আজম বলা হলেও সাধারণ পাকিস্তানীরা তাঁকে বাবা-এ-কৌম বলেই সম্মানিত করে থাকেন। কিন্তু এই জিন্নাহকেই ভারতের বেশির ভাগ মানুষ ঘৃণা করে। দেশটিতে তাঁর নাম উচ্চারণ করাও হয়ে থাকে কিছুটা অশ্রদ্ধার সঙ্গেই। কারণ, তাঁকেই দেশভাগের জন্য দায়ী বলে মনে করেন ভারতীয়দের অনেকে। সেই সময়ের দাঙ্গায় কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলেন, ছিন্নমূল হয়েছিলেন এক কোটিরও বেশি মানুষ। দেশভাগের সেই ক্ষত এখনও অনেকের মন থেকে মুছে যায়নি। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজের তৈরি দেশ পাকিস্তানে চলে গেলেন, কিন্তু ভারতে ফেলে গেলেন নিজের একটি অতি প্রিয় জিনিস- মুম্বাইস্থ তাঁর বাড়ি। ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে অন্য অনেক বিষয় নিয়ে যেমন বিবাদ রয়েছে, তেমনই বিবাদ রয়েছে জিন্নাহর বাড়ি নিয়েও। এই বাড়িতে থাকার সময়েই পাকিস্তান তৈরির পরিকল্পনা করেন জিন্নাহ, লড়াইটাও চলেছিল এখান থেকেই। সে জন্যই পাকিস্তান এই বাড়িটিকে তাদের সম্পত্তি বলে মনে করে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে মুম্বাইয়ে জিন্নাহর বাড়ি একটা তীর্থস্থানের মতো। তবে ভারতের কাছে মুম্বাই শহরে জিন্নাহর ওই বাড়িটি চোখে বালি পড়ার মতো। এই বাড়িটিকেই দেশভাগের পরিকল্পনার মূল আড্ডা বলে মনে করা হয়। ভারত এই বাংলো বাড়িটিকে শত্রুসম্পত্তি বলে চিহ্নিত করে রেখেছে। সরকারের দখলে থাকা বাংলো বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। মুম্বাইয়ের এক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, যার আবার রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও রয়েছে, তিনি জিন্নাহর বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলারও দাবি তুলেছেন। তাঁর কথায়, এটা শত্রুসম্পত্তি। দেশভাগের জন্য দায়ী যে জিন্নাহ, তিনি বানিয়েছিলেন বাড়িটি। দেশভাগের কারণে যে রক্তপাত ঘটেছে, এই বাড়ির দিকে তাকালে সেই সব কথা মনে পড়ে কষ্ট হয়। সেজন্যই বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা উচিত। সেখানে একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়া যেতে পারে। জিন্নাহর কিন্তু মুম্বাই শহর - বা যেটি সে সময় বোম্বে নামেই পরিচিত ছিল, তার প্রতি খুব টান ছিল। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে সেখানেই বাস করতেন তিনি। আরামে থাকার জন্যই বাংলো বাড়িটি বানিয়েছিলেন। ইউরোপীয় বাংলোর ধাঁচে তৈরি হয়েছিল ‹সাউথ কোর্ট’ নামের বাড়িটি। ১৯৩০র দশকে বাড়িটি বানাতে জিন্নাহর খরচ হয়েছিল প্রায় দুলক্ষ টাকা। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের মালাবার হিলস এলাকার ঐ বাড়িটি থেকে সমুদ্র দেখা যায়। প্রখ্যাত আর্কিটেক্ট ক্লড বেটলী বাংলোটির ডিজাইন করেছিলেন। ইতালিয়ান মার্বেল বসানো হয়েছিল - সঙ্গে ছিল কাঠের কারুকাজ। স্বপ্নের বাড়ির মতো করেই বাংলোটি বানিয়েছিলেন জিন্নাহ। মিস্ত্রী আনা হয়েছিল ইতালি থেকে। সেই সময়ে পেশায় ব্যারিস্টার জিন্নাহ এই বাংলো তৈরির জন্য যতটা যত্ম নিয়েছিলেন, তা থেকেই বোঝা যায় যে তিনি মুম্বাইতেই থাকার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু একটা সময়ে আইন পেশার চেয়েও বেশি তিনি রাজনীতিতে সময় দিতে লাগলেন আর মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তুললেন। সেই দাবি আদায় করেও ছাড়লেন। আর শেষে নিজের তৈরি দেশেই পাড়ি জমালেন। জিন্নাহর ধারণা ছিল দেশভাগের পরে ভারত আর পাকিস্তানের সম্পর্ক এতটাই ভাল হয়ে উঠবে যে তিনি ইচ্ছে হলেই মুম্বাইতে এসে নিজের বাড়িতে কিছুদিন কাটিয়ে যেতে পারবেন।
কিন্তু বাস্তবে ঘটল অন্যরকম। দুই দেশের মধ্যে সীমানা তৈরি হতেই মানুষের মনেও উঁচু প্রাচীর গড়ে উঠল। নিজের স্বপ্নের বাংলোয় ফিরে আসার স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল জিন্নাহর। পাকিস্তানে চলে যাওয়ার আগে জিন্নাহ চেয়েছিলেন কোনও ইউরোপীয় পরিবারকে নিজের বাংলোটা ভাড়া দিয়ে দেবেন। জওহারলাল নেহরু তাতে রাজীও ছিলেন। কিন্তু দলিলপত্র তৈরি করে সইসাবুদের আগেই জিন্নাহর মৃত্যু হয়। তখন থেকেই ওই সুন্দর বাংলো বাড়িটি ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে গলার কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে। জিন্নাহর মেয়ে দীনা ওয়াদিয়াও এই বাংলো বাড়ির ওপরে নিজের মালিকানা দাবি করেছেন। কিন্তু বাড়িটি এখনও ভারত সরকারেরই দখলে রয়ে গেছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের ঠিক সামনে জিন্নাহর এই বাড়িটি ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে অন্য অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের একটা হয়ে রয়ে গেছে। বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ