Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপহরণের ঘটনা একটিতে শেষ হলে সবাই মুখ খুলত -রিজওয়ানা হাসান

| প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : যদি অপহরণের ঘটনা একটিতে শেষ হতো, তাহলে অপহরণের শিকার ব্যক্তি ও তাদের স্বজনেরা মুখ খুলতেন। বাংলাদেশের মানুষ একটা বিপদে পড়ার কালচারের মধ্যে ঢুকে গেছে। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ সব কথা বলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আইনের শাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা শিরোনামে ওই আলোচনা সভাটির আয়োজক ছিল মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি। কমিটির অন্যতম সদস্য ও আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, স্বজ্ঞানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলা হয়েছে। কারণ বাহিনীর সাথে রক্ষাকারী শব্দটা আর যায় না। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন অপহরণ করে তিন বছর আগে। অপহরণের পরপরই থানায় মামলা দায়ের করলেও কারা এর পেছনে ছিল সে সম্পর্কে তদন্তে কিছু জানা যায়নি। রিজওয়ানা হাসান বলেন, টেলিভিশন টক শোতে দেখলাম খুব কথা। যাঁরা অপহৃত হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা আর কথা বলেন না। এটা বুঝবার বুদ্ধি নেই আপনাদের? কথা কেমন করে বলবে? যদি একটা অপহরণের ঘটনাই হতো শেষ অপহরণের ঘটনা, তাহলে অবশ্যই যাঁরা অপহৃত হয়েছেন তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার কথা বলতেন। একটা অপহরণের ঘটনা সারতে না সারতেই যদি দেখেন, সাতজন অপহরণ হয়েছেন, তাও আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে এবং এমন পর্যায় থেকে যাকে আপনি ফেলে দিতে পারবেন না। এটা তো আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কালচারের ভেতরে ঢুকে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ একটা বিপদে পড়ার কালচারের মধ্যে ঢুকে গেছে বলেও মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, মানুষ এখন প্রতিবাদ করতে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিপদে পড়ো না। জনগণের অনাস্থা, অবিশ্বাসের জায়গাগুলো শনাক্ত করে, আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি। বেলার নির্বাহী প্রধান বলেন, যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতা চরম, অবিশ্বাস চরম, সেখান থেকে মুক্তি পেতে হলে, কোনো আইন বাতিল করতে হলে আমাদের বাতিল করতে হবে। যদি বিডিআরের নাম বদলে যেতে পারে, যে সে মূল্যবোধ নিয়ে ব্যাজ পরতে পারছে না, তাহলে র‌্যাবের ব্যাপারেও আসলে আমাদের চিন্তা করতে হবে। তার মতে, নাগরিকেরা হারিয়ে গেলে নির্বাচনে জেতা যাবে না। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিকেরা হারিয়ে যায়। কেউ বলতে পারে না। পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী বলতে পারবে না এটা তো দিনের পর দিন হতে পারে না। এটা কোনো কথা? ন্যুনতম জবাবদিহিটুকু থাকবে না? তারা সমানে গ্রেফতার করতে পারে, জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে, অ্যারেস্ট করতে পারে, কেউ তো বাধা দিচ্ছে না, কিন্তু আমরা হারিয়ে যাব কেন? তাহলে এই পরিচয়পত্র দিয়ে আমাদের লাভটা কি হলো? এটা আমাদের সুরক্ষাকবচ। আর নাগরিকেরা হারিয়ে গেলে কি হবে, আগামী নির্বাচনে জেতা যাবে? কোনোভাবেই সম্ভব না। বরং নাগরিকেরা যদি থাকতে পারে তাহলেই আগামি নির্বাচনে জেতা সম্ভব। আলোচনা সভায় গতকাল সাতক্ষীর জেসমিন নাহার নামে এক নারী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তার স্বামীর তিনদিন হাজতে অবস্থানের সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের প্রতিবেদনে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পরও পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করছে। তাকে জঙ্গি বলে প্রচার করছে। আলোচনা সভার সমন্বয়ক সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তারা কোনো আইনী প্রক্রিয়া ছাড়াই গ্রেফতার করছে। সে কারণে গ্রেফতার পরিবর্তে তুলে নিয়ে যাওয়া, উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো বেআইনি শব্দগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। যেহেতু আইনি প্রক্রিয়া না মেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত প্রতিকার আসলে নেই বলে মন্তব্য করেন জ্যোতিময় বড়–য়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ