Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খায়রুল হকের লজ্জা নেই -মওদুদ

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আপিল বিভাগের রায়ে জাতীয় সংসদকে অপরিপক্ক বলা ঠিক হয়নি’ বলে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের লজ্জাবোধ নেই। মওদুদ আহমেদ বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীতে এ বি এম খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন। তখন সেই রায়ে তিনি বলেছিলেন যে, আগামী দুটি টার্মের জন্য তত্ত¡বধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে এবং তিনি সেখানে গ্রীক ফিলোসোফি নিয়ে এসে বলেছিলেন যে জনগণের স্বার্থে এটা করা যেতে পারে। অথচ ১৬ মাস পরে এ বি এম খায়রুল হক সাহেব পূর্ণাঙ্গ রায় দিলেন। কিন্তু রায়ের মধ্যে একথাগুলো ছিল না। কিভাবে তিনি প্রধান বিচারপতির পদে থেকে এ ধরণের কাজ করেছিলেন। আমি মনে করি, তিনি একটি বিরাট অপরাধ করেছিলেন। যেটি জুডিশিয়াল ক্রামই ছিল।
সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যও সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আইনমন্ত্রী হিসেবে তার (আনিসুল হক) এই কথাটা বলা একেবারেই উচিৎ হয়নি। তার কারণ হলো আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব হলো যে বাংলাদেশে আদালতগুলো যে রায় দেয় সেই রায়গুলোকে বাস্তবায়ন করা। তিনি সেই দায়িত্ব থেকে সরে এসেছেন রাজনৈতিক কারণে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সম্পর্কে মওদুদ বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রক্ষা করা হয়েছে। বিচার বিভাগের ওপরে, সুপ্রিম কোর্টের ওপর তারা (সরকার) যে ষোড়শ সংশোধনী করেছেন, পুরো ধারণাটা ছিলো বিচার বিভাগকে করায়াত্ব করা, আতঙ্কের মধ্যে রাখা, ভয়ের মধ্যে রাখা যাতে বিচারকরা সুষ্ঠুভাবে বিচার করতে না পারেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্নাঙ্গ রায়ে ‘কোনো অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখা হয়নি’ দাবি করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, কোনো অপ্রসাঙ্গিক বক্তব্য রাখা হয়নি। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনো আইসোলেটেড ব্যাপার না, কোনো একটা বিচ্ছিন্ন ব্যাপার না। এটা হলো সমাজ, রাজনীতি, সংসদ, সংবিধান, রাষ্ট্র সব কিছুর সাথে জড়িত। আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট যা কিছু বলেছেন প্রত্যেকটি শব্দ প্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিক কোনো বক্তব্য আমরা দেখতে পারছি না।।
আইনমন্ত্রী রায়ের ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়ে দেয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৩ অুনচ্ছেদের ভেতরে দেয়া আছে, আমরা প্রত্যেকে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ পিটিশন ফাইল করতে পারি। আমি সরকারকে বলব, বিচার বিভাগকে বির্তকিত না করে, তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে সরকারের উচিৎ হবে যে, রিভিউ পিটিশন ফাইল করে তাদের যে বক্তব্য আছে সেটা তারা তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টকে স্ক্যাডেলাইজড করার অধিকার তাদের নাই। আপিল বিভাগের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দশ দিনের মাথায় সরকারের প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ আমরা নেব। তবে আদালতের রায়ের বক্তব্য কীভাবে সরকার বাদ দিতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি আইনমন্ত্রী। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের ফলে দেশকে সেনা শাসনের দিকে নিয়ে যাবে আবার- বিচারপতি খায়রুল হকের এরকম আশঙ্কার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মওদুদ বলেন, এটা উনার(খায়রুল হক) ইচ্ছা, আমাদের না। উনাকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি এই ইচ্ছা পোষণ করছেন কিনা?
এয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের দেয়া রায়ের প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ বলেন, এই ভদ্রলোকের লজ্বাবোধ নাই। তার কারণ কী আমি বলি, এয়োদশ সংশোধনীতে উনি যে রায়টা দিলেন, যেদিন রায় ঘোষণা করা হলো তিনি (সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক) বললেন যে আগামী দুইটি টার্মের জন্য তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে। তিনি সেখানে গ্রিক ফিলোসফী নিয়ে আসলেন, বললেন যে জনগণের স্বার্থে এটা করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। ১৬ মাস পরে উনি পূর্ণাঙ্গ রায় দিলেন। সেই রায়ের মধ্যে এই কথাগুলো নাই। একজন প্রধান বিচারপতি তিনি যদি এরকম অনৈতিক কাজ করেন, আমি মনে করি তিনি বিরাট একটা অপরাধ করেছেন। ইট ইজ এ জুডিশিয়াল ক্রাইম হি হ্যাজ কমিটেড।
তিনি বলেন, খায়রুল হক পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন, এটা বাতিলের প্রধান কারণ ছিলো কী? মার্শাল প্রোক্লেমেশন দিয়ে সংবিধান সংশোধন হলো বেআইনি। দ্যাট ওয়াজ দ্য বটোম লাইন উনার জাজমেন্টের। তারপরে তিনি নানা কথা বলেছেন, আমাদের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বলেছেন, সায়েম সাহেব (সাবেক প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মো. সায়েম) কে নিয়ে বলেছেন। একদিকে বলছেন যে, সামরিক ফরমানের মাধ্যমে যা কিছু হয়েছে সবই অবৈধ। অন্যদিকে উনি (খায়রুল হক) বলছেন যে, প্রয়োজনের খাতিরে অনেকগুলো মার্জনা করেছেন। এই মার্জনার মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ছিলো। উনি পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করলেন কিন্তু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল করলেন না কেনো? এই দুইটি অপরাধের জন্য তাকে একদিন জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, আদালতে ও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে খায়রুল হকের সংবাদ সম্মেলন করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মওদুদ আহমদ বলেন, তার উচিৎ হয়নি আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদে থেকে সংবাদ সম্মেলন করা। তিনি সরকারের কোষাগার থেকে পাওয়া বেতনভুক্ত সরকারের একজন কর্মকর্তা। সরকারের কোনো কর্মকর্তার এই ধরণের সংবাদ সম্মেলন করা সম্পূর্ণভাবে সরকারি আচরণবিধির লঙ্ঘন করেছেন। তিনি (খায়রুল হক) যে উদ্দেশ্যে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাতে তার দলীয় রাজনৈতিক আচরণের উন্মোচন হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়কে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন ‘পূর্ব ধারণা প্রসূত’, সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণকে তার ‘অপ্রাসঙ্গিক’ মনে হয়েছে, শব্দ চয়নে তিনি দেখতে পাচ্ছেন ‘অপরিপক্কতা’। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা খায়রুল হক বুধবার আইন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু প্রজাতন্ত্র, সেহেতু জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদের কাছে বিচারকদেরও জবাবদিহিতা থাকার কথা। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ফলে তা আর থাকল না। আমরা এতকাল জেনে এসেছি, দিস ইজ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, কিন্তু এ রায়ের পরে মনে হচ্ছে, উই আর নো লংগার ইন দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। উই আর রাদার ইন জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশীদ, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মওদুদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ