পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মীনা কন্দস্বামী, আল জাজিরা : সম্প্রতি ভারতের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়া দিল্লীর জওয়াহর লাল বিশ^বিদ্যালয়ের (জে এন ইউ) ভাইস চ্যান্সেলর ক্যাস্পাসে একটি যুদ্ধ স্মারক নির্মাণ ও সেনাবাহিনীর বাতিল একটি ট্যাংক স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তার মতে, এ ব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সব সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে এবং দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমাদের বলিষ্ঠ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রদর্শন করবে।
জে এন ইউ-র ভাইস চ্যান্সেলর মমিদলা জগদেশ কুমার (ওরফে ব্যাটল ট্যাংক কুমার) স্বদেশ প্রেমের প্রবক্তা সর্বশেষ ব্যক্তি, তবে এ কল্পনা বিলাসের পথিকৃৎ নন। ভারতের জন্মলগ্ন থেকেই তার জাতীয় ঐক্য ও অখন্ডতা সম্পর্কে আত্মসচেতনতার আহবান জানানো হচ্ছে। এখন তার জন্য সামরিক আবহ তৈরি করা ও দেশপ্রেমের দৃশ্যমান মার্কা সামনে রাখা এ বিষয়ে দুর্বলতাকেই নির্দেশ করে।
২০১৬ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট লক্ষ্য করে যে জনসাধারণের অনুভব করা উচিত যে, তারা একটি দেশে বাস করে এবং তাদের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। সুপ্রিম কোর্ট রুলিং দেয় যে ভারতে কোনো ছবি প্রদর্শনের পূর্বে জাতীয় সঙ্গীত বাজাতে হবে। জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় দরজা বন্ধ করতে হবে এবং দর্শকদের উঠে দাঁড়াতে হবে। কেরালায় একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবি দেখানোর আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় উঠে না দাঁড়ানোর জন্য কমপক্ষে এক ডজন লোককে গ্রেফতার করা হয়। এ ব্যাপারে যারা ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল ক্ষমতাসীন দল বিজেপি কর্তৃক তারা দেশবিরোধী বলে চিহ্নিত হয়। গত সপ্তাদে মাদ্রাজ হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে দেশপ্রেমের মনোভাব সৃষ্টি করতে তামিলনাড়–র স্কুল ও অফিসে বন্দে মাতরম গাওয়া অবশ্যই বাধ্যতামূলক করতে হবে।
দেশপ্রেমের এ ছায়ামূর্তি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ( আর এস এস) ও বিজেপির মত ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোকে অনুকূল মঞ্চ দিয়েছে। যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে এ ধরনের উৎসাহ প্রকাশ আমাদের হিন্দু জাতি হয়ে ওঠার কাছে নিয়ে আসে। ভাবুন তো, একটি বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ট্যাংক, আর আয়ুধ পূজা উপলক্ষে তা সাজানো হবে গাঁদা ফুল দিয়ে ও পাঠ করা হবে সংস্কৃত মন্ত্র । ধর্মের অস্ত্র হিন্দুত্ববাদে কোনো নতুন বিষয় নয়, আর তা শক্তি প্রদর্শন ও আগ্রাসী হিন্দু ভাবমূর্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যা আর এস এস জাতির জন্য চায়। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে আর এস এসের সাথে জে এন ইউ-র ভাইস চ্যান্সেলর কুমারের সম্পর্ক রয়েছে।
ভারতে দেশপ্রেম নিছক জন্ভূমির প্রতি ভালোবাসা নয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে এর অর্থ হচ্ছে সামরিক শিল্প কমপ্লেক্সের মধ্যে শোষিত হওয়া। এর অর্থ সীমান্ত ও যুদ্ধ, এর অর্থ শত্রæ ও আনুগত্য, এর অর্থ জাতি রাষ্ট্র বা তার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে কোনো সমালোচনাকে খারিজ করা।
হায়দারাবাদ বিশ^বিদ্যালয়ে মৃত্যুদন্ডের প্রতিবাদকারী দলিত ছাত্রদের দেশবিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং বহিষ্কার করা হয় তাদের হোস্টেল থেকে। তাদের উপর বিধিনিষেধ ও প্রশাসনিক চাপ রোহিত ভেমুলা নামক এক ছাত্রকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। জেএনইউ-তে কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মত ছাত্ররা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগের সম্মুখীন হয় এবং ক্যাম্পাসে ভারত বিরোধী ¯েøাগান দেয়ার অভিযোগে কারাদন্ড দেয়া হয় তাদের। পরে প্রকাশ পায় যে তাদের এ ব্যাপারে জড়ানোর জন্য যে ভিডিও দেখানো হয় তা বানোয়াট।
গত বছর বিশ^বিদ্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার প্রেক্ষাপটে জে এন ইউ-র ছাত্র-ছাত্রীরা ও ফ্যকাল্টি ক্যাম্পাসে ট্যাংক স্থাপন ও সশস্ত্র বাহিনীর স্তূতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু জেএনইউ প্রশাসন তাদের দেশপ্রেম গলাধঃকরণে বাধ্য করার মিশন থেকে পিছু হটতে রাজি নয় বলে মনে হচ্ছে।
সংবাদপত্রের খবরে জানা যায়, ১৫ আগস্ট জেএনইউতে স্বাধীনতা দিবস উৎসব পালনে পুলিশের সাবেক আইজি এসআরপি কালুরিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমাদের অবশ্যই স্মরণ করতে হবে যে কালুরির বিরুদ্ধে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে হত্যা, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভুয়া আত্মসমর্পণ এবং বস্তারে তার ত্রাসের রাজত্বের সময় মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন ও বেসামরিক লোক হত্যার খবর ফাঁসকারী সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে অভিযান চালিয়েছিলেন।
আমরা এ প্রশ্ন করতে চাই যে এই সামরিক অনুপ্রবেশ কোথায় থামবে? আমরা কি ইঞ্চি ইঞ্চি করে সেদিকে এগোচ্ছি যখন সশস্ত্র বাহিনী শিক্ষাদানের দায়িত্ব নেবে? কোনো নিশ্চয়তা আছে যে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর বীরত্বের ব্যাপারে এ সব বুক চাপড়ানো ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে শিক্ষার একই রূপ আউটসোর্সিং-এ পরিণত হবে না? আমাদের বিশ^বিদ্যালয়গুলো যেগুলোর এখন বিশ^ পুঁজিবাদের দক্ষ কর্মী তৈরির কারখানার পর্যায়ে অবনতি ঘটেছে, তা কি আমাদের সেনাবাহিনীর কামানের খোরাক তৈরির শাখায় পরিণত হবে?
গত বছরের দমনের সময় জেএনইউ-র ছাত্রগ্রæপগুলা নজিরবিহীন সাহস ও তেজ দেখিয়েছিল। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সন্ত্রাস ও আতংক সম্পর্কে প্রত্যেককে ধারণা দিতে একটি নিষ্ঠুরতার প্রদর্শনী আয়োজন করা তাদের জন্য যথাযথ হবে। জেএনইউ-র ভাইস চ্যান্সেলর যেমন ভারতীয় সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ ও বীরত্ব সব সময় মনে করিয়ে দিতে চান , সেক্ষেত্রে আমাদেরও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে এই একই সেনাবাহিনী ধর্ষণ (১৯৮৭-৯০ সময়ে জাফনায়; ১৯৯১ সালে কাশ্মীরের কুনান ও পশপোরা; ২০০৪ সালে মনিপুরে), ভুয়া বন্দুকযুদ্ধ (শুধু মনিপুরেই ২০ বছরে ১৫২৮টি ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে হত্যার ঘটনা) এবং সংঘাত কবলিত কাশ্মীর ও মধ্য ভারতে বেসামরিক লোকদের হত্যা।
যখন শিক্ষাগত কর্তৃপক্ষকে ক্লাসরুমগুলোকে গ্যারিসনে রূপান্তরিত করতে আগ্রহী বলে মনে হয়, সম্ভবত এ ধরনের পাল্টা ন্যারেটিভ এ আত্মত্যাগ ও বীরত্বের বিষয়কে দূরে সরিয়ে নিতে সহায়ক হবে এবং তা আমাদেরকে আসল বিষয়ে দৃষ্টির প্রতিফলনে সাহায্য করবে। সেগুলো হচ্ছেঃ কষ্টকর বিক্রির দেশপ্রেমের পিছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, আমাদের প্রতিটি দিনকে সামরিকীকরণ, সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ ও বাধ্যতামূলক নিয়োগ এবং এই উর্দি পরিহিত লোকদের দ্বারা সংঘটিত অসংখ্য মানবাধিকার লংঘন।
*নিবন্ধকার কবি, অনুবাদক, ফিকশন রাইটার ও অ্যাক্টিভিস্ট। চেন্নাই ও লন্ডনে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।