পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদী শাসন প্রকল্প ও তহবিল সঙ্কট বড় অন্তরায়
নাছিম উল আলম : আমলাতান্ত্রীক দীর্ঘসূত্রিতা আর তহবিল সংকটে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পগুলো সময়মত আলোর মুখ দেখছেনা। ফলে প্রতিবছরই হাজার-হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী শত শত কোটি টাকার সম্পদ নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বাস্তুভিটা ও ফসলী জমি হারিয়ে চীর দরিদ্র দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আরো হত দরিদ্র হচ্ছে। কমছে ফসলী জমির পরিমানও । নদ-নদী ভাঙনে প্রতিবছর সরকারী বিপুল সম্পদও নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
বরিশাল বিমানবন্দর, বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়কের বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু, বরিশাল মহানগরী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সহ বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা একাধীক শীপ বিল্ডিং ওয়ার্কসপ এবং সন্নিহিত পুরো চরবাড়ীয়া এলাকা ছাড়াও বরিশাল মহানগরীর অপর পরের চরকাউয়া বন্দর ও ভোলা-ল²ীপুর মহাসড়কের ইলিশা ফেরি ঘাট সহ সন্নিহিত বিশাল এলাকা এখনো বিভিন্ন নদীর ভাঙনের মুখে। এছাড়াও ভোলার মনপুরা, চরফ্যাশন, ও বোরহানউদ্দিনসহ পুরো দ্বীপ জেলাটির বিভিন্ন এলাকা মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ভাঙনের মুখে।
এসব ভাঙন প্রতিরোধে একাধীক ‘নদী শাসন প্রকল্প’ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলেও নানা দীর্ঘ সূত্রিতায় তার বাস্তবায়ন সঠিক সুফল দেবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় বাড়ছে। কিন্তু আগ্রাসী নদীর শ্রোত থেমে নেই। বর্তমান বর্ষা মওশুমে উজানের বৃষ্টির মাত্রা যত বাড়ছে, ভাটি এলাকায় নদী ভাঙনও তত তীব্রতর হচ্ছে। সর্বশেষ গত সোমবারও বরিশাল মহানগরীর অপরপারে চরকাউয়া বন্দরের অন্তত দেড়শ মিটার এলাকা আকষ্মিকভাবে গ্রাস করেছে কির্তনখোলা নদী। বেশ কিছু দোকানপাট সহ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সবার চোখের সামনেই কির্তনখোলার করাল গ্রাসে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড অবশ্য ভাঙন রোধে জরুরী ব্যবস্থা হিসেবে ২০ লাখ টাকা বরদ্দ করেছে ঐ এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার জন্য। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত কোন ঠিকাদার এ কাজে সম্মতি দেয়নি। কারনন সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটির কাজ জরুরী ভিত্তিতে করতে হলেও অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি বেশীরভাগ সময়ই সুদুরপরাহত। তবে একাজটি সম্পন্ন হলেও ‘সাময়িকভাবে ভাঙন ঠেকান গেলেও তা কোন স্থায়ী সমাধান নয়’ বলে নদী বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ভাঙন কবলিত চরকাউয়া এলাকায় ১কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৪৫কোটি টাকার একটি প্রকল্প বোর্ডের অনুমোদনের পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন পেলে পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। সেখানে প্রী-একনেক ও একনেক’র অনুমোদন মিললে চলতি বর্ষা মওশুম দুরের কথা অর্থ বছরেই কাজ শুরু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ততদিনে কির্তনখোালা চরকাউয়া বন্দরের আরো কত এলাকা গ্রাস করবে তা বলতে পারছেন না কেউ।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সহ বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা একাধীক শীপ বিল্ডিং ওয়ার্কসপ সহ সন্নিহিত পুরো চরবাড়ীয়া এলাকার সাড়ে ৪কিলোমিটার এলাকার নদী তীর রক্ষায় ৩৩১কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রী-একনেক’এর অনুমোদনের পরে তা একনেক-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে এ প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করলেও দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে ডিসেম্বর পেরিয়ে যাবে। ৩টি অর্থ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নন কর্মসূচীতে কোন অর্থ বরাদ্ব মিলবে কিনা সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেন নি দায়িত্বশীল মহল। অপরদিকে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়কের দোয়ারিকাতে ‘বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’র বরিশাল প্রান্তের দুপাশেই সন্ধা নদীর ভাঙনে এর সংযোগ সড়ক ও এবাটামেন্ট ভয়াবহ হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে সেতুটির ওয়েভ প্রটেকশন নদী গর্ভ চলে গেছে। সন্ধা নদী সেতুটির সংযোগ সড়কের মাঝ বরাবর ছোবল মারতে উদ্যত। গত কয়েক বছর ধরে সেতুটির বরিশাল প্রান্তের এ্যপ্রোচ রোড সহ এবাটমেন্টটি রক্ষায় সড়ক অধিদফ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে বহু নথি চালাচালি হয়েছে। এমনকি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রনালয়ের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সেতুটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাষন কাজ বাস্তবায়ন করবে বলে সিদ্ধান্ত হলেও সড়ক পরিবহন মন্ত্রনালয় এজন্য প্রয়োজনীয় সব অর্থ প্রদান করার কথা। ইতোমধ্যে পানি গবেষনা প্রতিষ্ঠান‘আইডবিøউএম’এর মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সম্পন্ন করে কয়েকটি প্রস্তাবের মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকার ১কিলোমিটারের সিসি বøক ফেলা ও ৮শ মিটারে জিও বাগ ডাম্পিং করা সহ সেতুটির উজানে ৭শমিটার এলাকা ড্রেজিং করে সন্ধা নদীর গতিপথ কিছুটা পরিবর্তনের নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। সে লক্ষে ডিপিপি প্রস্তুতও করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এ প্রকল্প-প্রস্তাবনা কবে চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। প্রকল্পটির জন্য সম্ভাব্যতা সমিক্ষার আলোকে নকশা প্রনয়ন সহ ডিপিপি প্রমস্তুুত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে ।
এদিকে বরিশাল বিমান বন্দর, বাবুগঞ্জর উপেজলা সদর, পাশ্ববর্তি আবুল কালাম ডিগী কলেজ ও বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর-এর বাড়ী সহ সংগ্রহশালা এবং উপজেলা হাসপাতালটি রক্ষায়ও একটি নদী শাষন প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পায় ৩৬৪কোটি টাকা ব্যায় সম্বলিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সরকারী-বেসরকারী বিপুল সম্পদ সন্ধা নদীর ছোবল থেকে রক্ষা পাবে। প্রকল্প প্রস্তাবটি বর্তমানে পুনরায় যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে।
বরিশাল-ভোলা-ল²ীপুর-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা-ল²ীপুর ফেরি সার্ভিসের ইলিশা ফেরি ও লঞ্চ ঘাটসহ সন্নিহিত বিশাল এলাকা মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মাস কয়েক আগে একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদনের পরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজও শুরু হয়েছে। এছাড়াও দ্বীপ-জেলাটির আরো কয়েকটি এলকায় নদী শাষন কাজ চলমান থাকলেও আরো বেশ কয়েকটি এলাকায় মেঘনা ও তেতুলিয়ার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এসব ভাঙন প্রতিরোধে নদী শাষন প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লষ্ট মন্ত্রনালয়ে বিবেচনাধীন বলে জানা গেছে।
তবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই বিভিন্ন নদ-নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সমগ্র উত্তাঞ্চলসহ উজানের ঢলের পানি দক্ষিণাঞ্চলের মেঘনা, তেতুলিয়া, কালাবদর, কঁচা, বলেশ্বর, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, সন্ধা ,পায়রা সহ বিভিন্ন খরশ্রোতা নদ-নদী হয় সাগরে পতিত হবার পথে দুকুলের গ্রামের পর গ্রাম ও সমৃদ্ধ জনপদকে গ্রাস করছে। সর্বশান্ত হচ্ছে দক্ষিনাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। নদী বিশেষজ্ঞদের মতে দক্ষিনাঞ্চলের নদী ভাঙন রোধ সহ উজানের ঢলের পানি সাগরে যাবার মুখে ভাঙনকে সহনীয় পর্যায়ে নিতে পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা সমিক্ষা ও নকশা প্রনয়ন করে স^ল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহনের বিকল্প নেই। এতেকরে দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল পরিমান ভূমি পুনরুদ্ধারেরও সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞগন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।