পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে এ বছরে হাওরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবনে দুর্বিসহ দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গত এপ্রিলে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে অকস্মাৎ হাওরের উঠতি বোরো ধান তলিয়ে গেছে। দেশের খাদ্য উৎপাদনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের যোগান আসে হাওর থেকে। এবারের আকষ্মিক বন্যায় হাওরের বাঁধগুলো ভেঙ্গে ও তলিয়ে ফসলের ৯০ ভাগ বিনষ্ট হয়ে দেশে বড় ধরনের খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরী করেছে। লাখ লাখ টন খাদ্য ঘাটতির কারণে ইতিমধ্যেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। সরকার দেশকে খাদ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভর করে তোলার কৃতিত্ব দাবী করলেও হাওরে ফসলহানির পর সম্ভাব্য সংকট নিরসনে লেজে গোবরে অবস্থায় পতিত হয়েছে। চালের আমদানী শুল্ক কমিয়ে দিলেও বাজারে এর কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। শুল্ক কমানোর পরও ক্রমাগত চালের মূল্য বেড়ে চলেছে। অর্থাৎ হাওরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যর্থতায় নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে খেসারত দিচ্ছে হাওরের মানুষ, অন্যদিকে সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতির চাপ সামাল দিতে গলদঘর্ম হচ্ছে সরকার।
দেশের নদ-নদী, হাওর বিল ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন উন্নয়ন খাতে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। হাওরের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, উপকুলীয় বেড়ি বাঁধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং সেচ খালের ডাইক ও বেড়িবাঁধগুলোর যুগোপযোগি উন্নয়ন, সংস্কার এবং রক্ষনাবেক্ষণ খাতেই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় করা হয়। তবে পানি সম্পদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসব বাজেট বরাদ্দের বিশাল অংশই পানিতে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক শ্রেনীর কর্মকর্তা, প্রকৌশলী-ঠিকাদারদের যোগসাজশে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প দুর্নীতির মাধ্যমে গায়েব হয়ে যায়। বছরের পর বছর এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হলেও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। এবার হাওরে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়ার পর হাওরের ভুক্তভোগি মানুষকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাদের বিচারের দাবীতে মাঠে নামতে দেখা গেছে। হাওরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো উন্নয়ন ও মেরামতের প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও সময় মত সে সব প্রকল্প বাস্তবায়ণ না করার কারণেই এবার হাজার হাজার কোটি টাকার ফসলহানির শিকার হয়েছে হাওরের বাসিন্দারা। বন্যায় সর্বস্ব হারানোর পর দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার ভুক্তভোগি হাজার হাজার মানুষ পাউবো’র কর্মকর্তাদের বিচারের দাবী এখন বাস্তব পরিনতি লাভ করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সারাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৯ হাজার ২২৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের মধ্যে ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটারই ঝুঁকিপূর্ণ। বেড়িবাঁধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ডুবন্ত বাঁধ এবং উপকুলীয় বেড়িবাঁধসহ সামগ্রিকভাবে ১৩ হাজার কিলোমিটার বা দুই-তৃতীয়াংশই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন এবং জননিরাপত্তা তথা দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যই এ পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরের এপ্রিলে হাওরের আকষ্মিক বন্যায় ফসলহানির পর পর্যায়ক্রমে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলেও লাখ লাখ মানুষ বন্যার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দেশের অধিকাংশ নদ নদী এখনো বিপদসীমার কাছাকাছি অথবা উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, উজানে ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে বাংলাদেশে আবারো বড় আকারের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আশঙ্কা সামনে রেখে বন্যা প্রতিরোধে পূর্ব প্রস্তুতির কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। একদিকে হাজার হাজার কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার ও উন্নয়নে যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিস্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অন্যদিকে সম্ভাব্য বন্যার আগাম সর্তকতা জেনেও তার কোন বিকার দেখা যাচ্ছেনা। নদীভাঙ্গনের কবলে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার স্থায়ীভাবে ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসে যাচ্ছে। উপকুলীয় বেড়িবাঁধগুলো মেরামত ও সংরক্ষণ করতে না পারায় সমুদ্রে ভ‚মি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, গত এক দশকে উপকুরীয় বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য বরাদ্দ চারশ কোটি টাকার সিংহভাগই সিন্ডিকেটেড দুর্নীতিতে গচ্চা গেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি, নিস্ক্রিয়তা এবং স্বেচ্ছাচার বন্ধ করতে হবে। নদী ব্যবস্থাপনা ও পানি উন্নয়ন খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।