Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দোকলামে অভিযান চালানোর সামরিক তত্তে¡ চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের না

সঙ্কট নিরসনে ভুটান পদক্ষেপ নিতে পারে : মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টাইমস অব ইন্ডিয়া ও পিটিআই : সিকিম সীমান্তে বিরোধপূর্ণ দোকলাম এলাকা থেকে ভারতীয় সৈন্য হঠাতে চীন ছোট আকারে সামরিক অভিযান চালাবে বলে চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সামরিক তত্ত¡কে সমর্থন করেনি চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল রেন গুয়োকিয়াং সোমবার চীন সফররত ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের বলেন, প্রকাশিত খবরে সংবাদ মাধ্যম ও থিঙ্কট্যাংকের মত ব্যক্ত হয়েছে।
আপনারা যদি সরকারী তথ্য চান তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দেখুন। চীনের রাষ্ট্র সমর্থিত ইংরেজি সংবাদ পত্র দি গেøাবাল টাইমসে চীনা থিঙ্কট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞ হু ঝিয়ং-এর এ মন্তব্য সম্পর্কে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্নেল রেন এ কথা বলেন। সাংহাই সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো হু ঝিয়ং বলেছিলেন যে চীন দোকলামে ভারত ও চীনের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থা বেশিদিন চলা বরদাশত করবে না এবং ভারতীয় সৈন্যদের হটিয়ে দিতে দু’সপ্তাহের মধ্যে ছোট আকারের সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তার এ মন্তব্য থেকে দেখা যায়, এক শ্রেণির বিশেষজ্ঞ ও সংবাদ মাধ্যমের কঠোর বক্তব্যে যে বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়েছে, চীনা প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাতে অস্বস্তিতে পড়েছে। ভারতীয় সাংবাদিকদের সাথে দু’ঘন্টা ব্যাপী মত বিনিময় চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভারতের প্রতি নতুন করে কোনো হুমকি দেয়নি। কর্নেল রেন দোকলাম সঙ্কট বিষয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের নাকচ করে দেয়া বিষয়ে তাদের জিজ্ঞেস করেন। তবে তিনি এ সঙ্কটের ব্যাপারে কোনো সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেননি। উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন দোকলাম সঙ্কটের শুরু হয়।
নিখিল চীন সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ভারতীয় সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে কর্নেল রেন দোকলামের বিরোধপূর্ণ স্থান থেকে অবশ্যই ভারতীয় সৈন্য নিতে হবে বলে চীনা নেতা ও কর্মকর্তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন, নিজের ভূখন্ড রক্ষায় চীনের দৃঢ় সঙ্কল্পকে কারো খাটো করে দেখা উচিত নয়। তিনি বলেন, নিজ ভূখন্ডে রাস্তা তৈরি করার সকল বৈধ অধিকার আমাদের আছে।
তিনি বলেন, চীন এ রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে ১৮ মে ও ৮ জুন ভারতকে জানিয়েছিল, কিন্তু কোনো জবাব পায়নি।
ভারতীয় সাংবাদিকরা জানতে চান, এটা যদি চীনা এলাকাই হবে তাহলে রাস্তা তৈরি সম্পর্কে সে ভারতকে জানাতে গেল কেন? জবাবে কর্নেল রেন বলেন, সদিচ্ছা থেকেই চীন তা জানিয়েছিল।
ভারতীয় সাংবাদিকরা বলেন, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পের কারণে চীনের একটি সম্প্রসারণবাদী ইমেজ তৈরি হয়েছে। সিপিইসি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের উপর ভারতীয় দাবিকে লংঘন করেছে। কর্নেল রেন তাদের মত নাকচ করে বলেন, এটা আমাদের বৈশিষ্ট্য নয়।
এদিকে ওয়াশিংটনস্থ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা এবং চায়না পাওয়ার প্রজেক্ট-এর পরিচালক শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক বনি এস গেøসার বলেন, চীন ভারতকে তার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিরক্ষা নীতি বোর্ডের সাবেক সদস্য গেøসার বলেন, চীন ভারতকে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতকে বৃহত্তম উদীয়মান শক্তি হিসেবে দেখে যে তার জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নিকট মেয়াদে এ অঞ্চলে তার প্রভাব মোকাবেলায় অন্যান্য দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সহযোগিতার ব্যাপারে চীন উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, এগুলো নেতিবাচক ঘটনা।
তিনি বলেন, ভারতই বিশে^র একমাত্র দেশ যে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের স্স্পুষ্ট বিরোধী। গেøসার বলেন, চীন ভারতকে বড় সামরিক হুমকি মনে করে না। চীন ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র সম্ভারকেও তার নিরাপত্তার প্রতি বড় হুমকি মনে করে না, কিন্তু ভারতকে সে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখছে। ভারতকে সে অংশত সেভাবে দেখে যে অন্যান্য বহু শক্তির সহযোগিতায় চীনকে দমন করতে চায়।
এ মার্কিন থিঙ্কট্যাংকের মতে, দোকলাম সঙ্কট অব্যাহত থাকার প্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান ও সঙ্কটের চূড়ান্ত পরিণতি এ অঞ্চলের অন্যন্য দেশ, বিশেষ করে যাদের সাথে চীনের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে, তাদের উপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, চীন মনে করে যে তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি অন্যান্য দেশের সাথে তার বিরোধ ও ফারাককে তার নিজের পক্ষে নিয়ে আসার যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছে।
গেøসার বলেন, চীন যদি এ বিরোধে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় অথবা অন্য কথায় ভারত তার সৈন্য সরিয়ে নেয় সেক্ষেত্রে চীন এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে এবং এ রাস্তা নির্মাণ করবে। শেষ পর্যন্ত ভারত ও ভুটান তা মেনে নিতে বাধ্য হবে যদিও তারা, বিশেষ করে ভারত মনে করে যে এ রাস্তা তাদের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী। আর তা অন্যান্য প্রতিবেশির সাথে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ বিষয়ে চীনের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, যুদ্ধে জড়ানোর ব্যাপারে ভারত ও চীনের কোনো আগ্রহ নেই। তা বলে এর সম্ভাবনা উড়িয়েও দেয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রকে যদি খোলাখুলি ভারতকে সমর্থন করতে দেখা যায় সে ক্ষেত্রে সে ক্ষেত্রে চীন আরো কঠোর মনোভাব গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, সঙ্কটের বিস্তার না ঘটানোতেই জোর মার্কিন স্বার্থ রয়েছে।
এ মহিলা বিশ্লেষক বলেন, সঙ্কটের একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে শীতকালে যখন আবহাওয়া খারাপ হবে এবং দু’পক্ষকেই সৈন্য সরিয়ে নিতে হবে এবং তখন উত্তেজনার পারদ নিচে নামবে। চীন সম্ভবত শীতে রাস্তা নির্মাণ করতে পারবে না, তাকে বসন্ত কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়টাতে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
আরেকটি সম্ভাবনা হল ভুটানের পদক্ষেপ। ভুটানকে মধ্যস্থতা করতে হবে তা নয়, তবে সে এমন অবস্থান নিতে পারে যা চীন ও ভারতকে সৈন্য সরিয়ে নিতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, উদাহরণ স্বরূপ ভুটান ভারতকে তার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ দিতে পারে ও কিছু সময়ের জন্য ভারতকে সৈন্য সরিয়ে নিতে বলতে পারে। সে জায়গায় ভুটান তার নিজের সৈন্য মোতায়েন করতে পারে। এটা আরেকটি মুখরক্ষা মূলক ব্যবস্থা হতে পারে। তবে আমি একটি যুদ্ধের আশঙ্কা উড়য়ে দিচ্ছি না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ