Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইলিশের জিআই স্বীকৃতি

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কোন বিশেষ অঞ্চলে বিশেষ ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও লোকজ সংস্কৃতি সম্পৃক্ত ঐতিহ্যবাহী পণ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেটর পণ্য হিসেবে অভিহিত করা হয়। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন(ডাবিøওআইপিও) এই নিবন্ধন দিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট পণ্যসমূহের জিআই স্বীকৃতির ফলে বিশ্ববাজারে এর বাণিজ্যিক সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে নিবন্ধন প্রাপ্ত দেশ অগ্রাধিকার লাভ করে থাকে। নদী বিধৌত বাংলার অমূল্য সম্পদ পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে আন্তজার্তিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। দেরিতে হলেও এটি আমাদের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ। ইতিপূর্বে ঢাকাই জামদানী শাড়ী বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পর এখন ইলিশের নিবন্ধন নিশ্চিত হল। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে ইলিশের স্বীকৃতি নিশ্চিত হওয়ার পর এখন ডাবিøউআইপিও’র কাছ থেকে নিবন্ধন সার্টিফিকেট হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস (ডিপিডিটি) অধিদফতর। সারাবিশ্বেই ইলিশ একটি সুস্বাদু মাছ হিসেবে সমাদৃত। তবে পদ্মার ইলিশের সৌন্দর্য, স্বাদ-গন্ধের কোন তুলনা হয়না। এ কারণেই পদ্মার ইলিশের চাহিদা বা আন্তর্জাতিক বাজার ব্যাপক সম্ভাবনাময়। ইলিশের এই স্বীকৃতি কাজে লাগাতে হলে এর উৎপাদন বৃদ্ধি ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্টমন্ডিত লোকজ ও ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য। শত শত বছর ধরে এসব পণ্যের সুনাম-সুখ্যাতি এ দেশের মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে। এখন অনেক পণ্যই দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। ইলিশ ও জামদানীর ধারাবাহিকতায়, রাজশাহীর সিল্ক, বাগেরহাটের চিংড়ি,টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ী, বগুড়ার নকশী কাঁথা, বগুড়ার দই, যশোরের খেজুর গুড়, কুমিল্লার রসমালাই, নাটোরের কাচাগোল্লা, পাবনার মিষ্টি, যশোরের আম, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, হালদার রুইমাছ, বরিশালের আমড়া, খুলনার নারিকেল, পোড়াবাড়ির চমচমসহ বহু পণ্যের জিআই স্বীকৃতি পেতে লড়াই করতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ ও ভারত প্রায় অভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক ও লোকজ সংস্কৃতির ধারক হওয়ায় বাংলাদেশের অনেক পণ্যের জিআই স্বীকৃতি বাগিয়ে নিতে ভারত অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের প্রাপ্য কিছু কিছু জিআই পণ্যের নিবন্ধন ইতিমধ্যেই ভারত নিয়ে নিয়েছে বলে সংবাদ ছাপা হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় বাংলাদেশকে নিজস্ব পণ্যের বিষয়ে উপযুক্ত তথ্য প্রমান তুলে ধরে আবেদন করতে হবে। জামদানী নিয়ে বিতর্কের পর অবশেষে জামদানীর জিআই স্বীকৃতি ও নিবন্ধন বাংলাদেশকেই দেয়া হয়েছে। ডিপিডিটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ৯৫টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এসব পণ্যের মালিকানা স্বীকৃতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
জামদানীর পর ইলিশের জিআই স্বীকৃতি আমাদের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এমনিতেই আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের আমিষের চাহিদা পুরণ এবং সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে বিশাল অংশ জুড়েই আছে ইলিশ। লাখ লাখ জেলে ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এবং জিডিপিতে ইলিশের অবদান বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে গত এক দশক ধরে ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে একই সাথে ইলিশ সংগ্রহ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার একটি বড় অংশ সাগরেই লুণ্ঠন, অপচয় ও চোরাচালানের স্বীকার হচ্ছে। বাংলাদেশের নৌ-সীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা অবাধে হাজার হাজার টন ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি জেলেদের ধরা ইলিশ ডাকাতি করে নিয়ে যায় ভারতীয় নৌদস্যুরা। একশ্রেণীর চোরাচালানি আমাদের নৌসীমায় ধৃত ইলিশ অবৈধভাবে ভারতে পাচার করে একদিকে দেশকে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে অন্যদিকে এসব ইলিশের বিনিময়ে দেশে ফেন্সিডিল, ইয়াবারসহ নানা ধরনের মাদক ছড়িয়ে দিয়ে দেশের যুব সমাজকে মাদকাসক্ত করে তুলছে। ইলিশের জিআই স্বীকৃতি আদায়ের সাথে সাথে ইলিশ ধরা জেলেদের নিরাপত্তা ও বঙ্গোপসাগরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বে উৎপাদিত ইলিশ মাছের শতকরা ৬৫ ভাগই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। শুধুমাত্র ইলিশের যথাযথ সংগ্রহ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে ইলিশ থেকে আয় অন্তত দ্বিগুন করা সম্ভব। ইলিশের জিআই সনদ লাভের পর ইলিশসহ সামুদ্রিক সম্পদের নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিবে সরকার। এটাই সকলের প্রত্যাশা।



 

Show all comments
  • Md. Ashraful Alam ৯ আগস্ট, ২০১৭, ১০:২৩ পিএম says : 0
    Khaborti pore besh bhalo laglo
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন